বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের মতো এত বড় আগুন নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা বর্তমানে এদেশের ফায়ার বিগ্রেডের নেই।’
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে ঠাকুরগাঁও শহরের পৌর মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ফায়ার বিগ্রেডের ৪০টির ওপর ইউনিট কাজ করার পরও বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। অর্থাৎ এই ফায়ার বিগ্রেডের এত বড় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার মতো সক্ষমতা নেই। আগুনে পুরোপুরি ধূলিসাৎ ও মিশে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছে বঙ্গবাজারের। এর আগে সিদ্দিক বাজারে ও বনানীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাগুলো কেন ঘটছে? এর কারণ হচ্ছে, সরকারের যেসব প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্বে রয়েছে তারা দেখবে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা আছে কিনা। কিন্তু আমরা মনে করি তারা তাদের কাজে ব্যর্থ হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তারা অর্থনৈতিক যে ভিত্তিগুলো ছিলো সেগুলোকে নষ্ট করে দিয়েছেন। অথচ তারা বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। এমন উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে এখানে ব্যাংক লোপাট হয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশে ব্যাংকের রিজার্ভ ফাণ্ড হ্যাক হয়ে যাচ্ছে কিন্তু সেগুলোর দিকে আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো খেয়াল নেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছে। বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র সম্পূর্ণ অনুপস্থিত, মানুষের যে অধিকার তা পুরোপুরিভাবে হরণকরা হয়েছে। লুট করা হচ্ছে ব্যক্তিগত অধিকার। সংবিধানকে এখানে প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা যেটা বলতে চাই, আওয়ামী লীগ সরকারের এখন সময় হয়ে গেছে। তাদের চলে যাওয়া উচিৎ। আমরা যে বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, আমরা যে বাংলাদেশকে পেতে যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিলাম সেই বাংলাদেশ আজ স্বৈরতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়েছে। অথচ আমরা লড়াই করেছি গণতন্ত্রের জন্যে। আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করছি। আমরা বিশ্বাস করি দেশের মানুষ জেগে উঠছে, দেশের মানুষের আন্দোলন-লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র গঠন করতে সক্ষম হব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। আগামীতে যে সংসদ নির্বাচন সেই নির্বাচনের জন্যে আওয়ামী লীগ নতুন করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মত তামাশা শুরু করেছে। স্পষ্ট করে বলতে চাই- আমরা তামাশার নির্বাচনে বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি- জনগণ যেখানে তার সত্যিকারের ভোট দিতে পারবে, তার মত প্রকাশ করতে পারবে এই ধরনের একটা নির্বাচন আমরা চাই।
ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকা অবস্থায় নির্বাচন হলে সেই নির্বাচন নিরপেক্ষ হতে পারে না। শেখ হাসিনা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হননি। তাকে পদত্যাগ করতে হবে ও তার সরকারকেও পদত্যাগ করতে হবে। সেই সঙ্গে এই সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এটি আমাদের প্রধান দাবি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আইনজীবী সমিতির নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক একটা ব্যবস্থা আইনজীবী সমিতি। এই সমিতিকে দখল করার জন্য এই আওয়ামী লীগের সরকার সব প্রকার শক্তি প্রয়োগ করেছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা ব্যবহার করতে দ্বিধা করছে না। এই একটা জায়গা আইনজীবী সমিতি, যেখানে মানুষের আস্থা ছিল, সেই আস্থাটাও এখন পুরোপুরিভাবে নির্মূল হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমানসহ বিএনপির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।