রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে মনোনয়নপত্র তোলা হয়েছে। সোমবার (১০ এপ্রিল) দলীয় প্রধানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে রাজশাহীর স্থানীয় নেতারা লিটনের পক্ষে মনোনয়নপত্র তোলেন।
এসময় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, সৈয়দ শাহাদাত হোসেন, নাঈমূল হুদা রানা, যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকার, নগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক অরবিন্দ দত্ত, সদস্য মহিদুল ইসলাম মোস্তফা, শাহমখদুম থানা আওয়ামী লীগের সদস্য জহরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, গতকাল রোববার দুপুরে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। গণভবন থেকে বের হয়ে তিনি মেয়র পদে নিজের প্রার্থিতার কথা জানান রাজশাহীর নেতাদের। সর্বোচ্চ হাইকমান্ড থেকে সবুজ সংকেত পেয়েই সোমবার তার পক্ষে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।
এর আগে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন মহলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে বর্তমান মেয়র লিটন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহে তিনি সিদ্ধান্ত বদল করেছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলতে পারেন বলে গুঞ্জন ছিল। তবে সম্প্রতি তার একটি অশ্লীল ভিডিও ফাঁস হওয়ায় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন। এমন কি তাকে দল থেকে অপসারণে প্রকাশ্যে নানা কর্মসূচি পালন করে মহানগর আওয়ামী লীগ। দল থেকে ডবলুকে বহিষ্কারের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে আবেদনও করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। এ ঘটনার পর থেকে ডাবলুকে দলীয় কোনো কর্মসূচিতেও রাখা হচ্ছে না। ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন তিনি।
সিটি নির্বাচনে খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র পদে দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর যোগাযোগ করা হলে ডাবলু সরকার জানান, এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল জানান, লিটনের পক্ষে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী বুধবার (১২ এপ্রিল) তিনি এটি পূরণ করে জমা দেবেন। এরপর রাজশাহী ফিরে নির্বাচনের বাকি প্রস্তুতি শুরু করা হবে। আর প্রার্থীর ব্যাপারে পরে মনোনয়ন বোর্ড থেকেই পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানাবে।
এদিকে, ভোটের মাঠে নেই বিএনপি। ২০১৩ সালের নির্বাচনে লিটনকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন দলটির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। কিন্তু তার আমলের পাঁচ বছরে শহরের কোনো উন্নয়নই দৃশ্যমান হয়নি। ফলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে লিটনের কাছে আর পাত্তা পাননি বুলবুল। তবে এবার নির্বাচন নিয়ে আর মাথা ঘামাচ্ছে না দলটি।
খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট নির্বাচনে প্রথম রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে হেরে যান। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই পুনরায় মেয়র নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। দীর্ঘদিন তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনি পুনরায় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন।