বর্ণাঢ্য আয়োজনে পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে শুরু হয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসব মাহাঃ সাংগ্রাইং পোয়ে।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টায় রাজার মাট থেকে বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, পার্বত্য জেলা পরিষদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বান্দরবান উৎসব উদযাপন পরিষদের যৌথ আয়োজনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে তিনদিন ব্যাপী এই সাংগ্রাই উৎসবের সূচনা করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।
এলাকার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ধর্মের ও বর্ণের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একমন একপ্রাণ হয়ে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
সাংগ্রাই উপলক্ষে ‘আঁধারের পাহাড় আলোকিত হয়ে উঠুক শিক্ষার আলোগুণে, উৎসব পরিণত হোক সকলের কল্যাণে’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বান্দরবানের ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠ থেকে পাহাড়ে বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষদের অংশগ্রহণে শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন হাতে নিয়ে মারমা সম্প্রদায়, ম্রো সম্প্রদায়, ত্রিপুরা সম্প্রদায়, খুমি সম্প্রদায়, চাকমা-তঞ্চঙ্গ্যাসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন অংশ নেয়।
পরে বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের হলরুমে বয়োজ্যেষ্ঠ পূজায় অংশ নেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বান্দরবান স্থানীয় সরকারের উপরিচালক লুৎফুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম, সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থোয়ইচা প্রু মাস্টার, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক লীলা মুরুং, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য সিয়ং ম্রো, জেলা পষিদ সদস্য ক্যসাপ্রু মারমা প্রমূখ।
সাংগ্রাই শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা জানান, পূরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছর বরণকে মারমা ভাষায় মাহাঃ সাংগ্রাইং পোয়েঃ, চাকমা ভাষায় বিঝু, তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় বিষু, ত্রিপুরা ভাষায় বৈসুক, ম্রো ভাষায় চাংক্রান পোয়ে বলা হয়। এই উৎসবে সবচেয়ে জনপ্রিয় মৈত্রী পানিবর্ষণ অনুষ্ঠান। এর পাশাপাশি নাচে-গানে পরস্পরকে ভালবাসা ও শুভেচ্ছায় সিক্ত হন পাহাড়ি যুবক যুবতীরা।
এ বারের সাংগ্রাই উৎসবে সাঙ্গু নদীতে বুদ্ধ স্নান, সমবেত প্রার্থণা, জলকেলি, পিঠা তৈরি, হাজার প্রদীপ প্রজ্জলন, বয়স্ক পূজা এবং সম্প্রদায়গুলোর নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী নৃত্য-গান নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানগুলি ১৩ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পালন করা হবে।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) শহরের উজানী পাড়া খেয়াঘাটে বুদ্ধমূর্তি স্নানের মাধ্যমে ধর্মীয় কাজ শেষে হয়ে রাতে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় রাত ৮ টা থেকে পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় স্থানীয় রাজার মাঠে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হবে। পরে বিকালে মৈত্রী পানিবর্ষণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানের পরিবেশনায় থাকবে বান্দরবানের মারমা শিল্পী গোষ্ঠী ও (বাংলাদেশি আইডল) মং উ চিং মারমা মং। মারমা ও বাংলা ভাষায় গান করবেন মংমংসিং, আবুসিং, মংসাইন, অর্জুন সারকি ও উম্যাসিন।