শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সাহাতি খালের নোংরাযুক্ত পচা পানির দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকার মানুষজন। বিশেষ করে ময়লা পানির কারণে এলাকাজুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে মশা-মাছি। ফলে নানাবিধ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আতঙ্কে দিন কাটছে খাল পাড়ের মানুষদের।
ভারত সীমান্ত হয়ে আসা ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই খালটি উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের নওকুচি গ্রাম হয়ে ধানশাইল ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সোমেশ্বরি নদীতে গিয়ে মিশেছে। তবে দূষণ আর দুর্গন্ধে খালপাড়ের বাসিন্দারা এখন অতিষ্ঠ। খালের দূষণ রোধে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে বারবার ধর্ণা দিলেও আশ্বাস মেলেনি বলে দাবি এলাকাবাসীদের।
এদিকে পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন শেরপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল-মাহমুদ ও ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাদৎ হোসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় সাহাথি খালের স্বচ্ছ পানি দুই পাড়ের বাসিন্দারা জমি চাষাবাদ ও গোসলসহ পারিবারিক বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতেন। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কম থাকায় কৃষি কাজে পানি ব্যবহারের জন্য কৃষকরা খালটির বিভিন্ন স্থানে মাটির বাঁধ দেন। যে কারণে খালটির কিছু স্থান শুকিয়ে যায়। এছাড়া ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া ও নয়াগাঁও গ্রামে সাহাতি খাল সংলগ্ন এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে একাধিক লেয়ার মুরগির খামার। খামারিরা নামে মাত্র বায়োগ্যাস প্লান্ট দেখিয়ে ভাগিয়ে নিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। খামারিদের বায়োগ্যাস প্লান্ট থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার না করে খামারের সব বর্জ্য পাইপের মাধ্যমে সরাসরি পাঠিয়ে দিচ্ছেন খালে। ফলে খালের স্বচ্ছ পানি এখন পরিণত হয়েছে মশা-মাছি আর রোগ-জীবাণুর কারখানা হিসেবে। খালের পানির দূর্গন্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা এখন অতিষ্ঠ।
মোল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, আগে খালের স্বচ্ছ পানিতে গোসল করতাম। এই খালের পানি পরিবারের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হতো। খামারিরা তাদের খামারের বর্জ্য সরাসরি খালের পানিতে ছেড়ে দেওয়ায় পানির দুর্গন্ধে আমরা ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত করতে পারি না। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা কোনো প্রতিকারও পাচ্ছি না।
ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাদৎ হোসেন খালের পানি দূষিত হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, খামারের ফেলে দেওয়া ময়লা আবর্জনার কারণে খালের পানিতে জন্ম নিচ্ছেন বিষাক্ত পোকা-মাকড়। এসব খেয়ে গৃহস্থদের হাঁস-মুরগি পর্যন্ত মরে যাচ্ছে। খালের পাড় দিয়ে দুর্গন্ধে যাতায়াত করাও কঠিন। স্থানীয়দের অভিযোগে আমরা একাধিক বার সেখানে গিয়েছি। খামারিদের সঙ্গে বৈঠকও করেছি। এখন প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
পরিবেশ অধিদপ্তরের শেরপুরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল-মাহমুদ বলেন, মুরগির লিটার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর না হলেও বদ্ধ পানিতে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। তবে বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভেসে গিয়ে তা মাছের খাবার হয়। খালের পরিবেশ ও পানি রক্ষায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।