টাঙ্গাইলে রমজানের শেষ সময়ে বিদ্যুতের সীমাহীন লোডশেডিং এ অতিষ্ঠ মুসুল্লিরা। সেহরি, ইফতার ও তারাবিতে বিদ্যুৎ না থাকায় সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক খামারের মুরগিও মারা যাচ্ছে। ব্যহত হচ্ছে বোরো চাষাবাদও।
বিদ্যু বিভাগ সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ২১০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ১৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। তবে এই গ্রিডে সর্বোচ্চ চাহিদা রয়েছে ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের।
গতকাল মঙ্গলবার ও বুধবার (১৯ এপ্রিল) শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেহরি ও ইফতারের সময় টানা তিন থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় সেচ পাম্প বন্ধ থাকায় বোরো চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। শহরের তুলনায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। সেখানে বিদ্যুত যায় না বরং আসে।
টাঙ্গাইল জেলার কাগমারা গ্রামের মোজাম্মেল মিয়া বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে আমাদের এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গড়ে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এতে সেহরি ও ইফতারে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
মনির হোসেন নামে অপর একজন বলেন, একদিকে প্রচণ্ড গরম। অন্যদিকে বিদ্যুত না থাকায় মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। গত চার/পাঁচ দিন ধরে তারাবির নামাজে বিদ্যুৎ থাকে না। গরমের কারণে শরীর থেকে যে পরিমাণ ঘাম বেড় হয় দেখলে মনে হয় গোসল করে এসেছি। মঙ্গলবার ২৭ তারাবিতে মাগরিবের সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। রাত সাড়ে ১০ টায় বিদ্যুৎ আসে। একই দিন রাতে সাড়ে ১২ টায় বিদ্যুৎ যেয়ে আসে সেহরির পর।
নাজমা বেগম নামের এক গৃহবধূ বলেন, সীমাহীন লোডশেডিং এ শিশুদের খুব কষ্ট হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা রাতে ঘুমাতেও পারছি না।
জেলার একাধিক কৃষক জানান, বিদ্যুত না থাকায় সেচ পাম্পের মালিকরা পানি দিতে পারছেন না জমিতে। আর জমিতে পানি না দিতে পারলে ধানের আবাদও ভাল হবে না। অনেক দিন হল বিদ্যুতের এই অবস্থা। কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুত পেলেও মেশিনের ইঞ্জিন চালুর হওয়ার পরই চলে যায়। কার কাছে বলবো কে সমাধান করবে। আবাদ না হলে মানুষ খাবে কি।
কাগমারা গ্রামের সেচ পাম্পের মালিক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমার মেশিনার আওতায় প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। ক্ষেতে ক্ষেতে ধানের শীষ বের হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পানির প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় পানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মেশিন চালু করে পানি ক্ষেতে নামার আগেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এবার মনে হচ্ছে বোরো ধানের ভাল ফলন হবে না। কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
বিভিন্ন খামারের মালিকরা জানান, বিদ্যুত না থাকার কারণে গরমে প্রায় প্রত্যেক খামারে কম বেশি মুরগি মারা যাচ্ছে। বিদ্যুত না থাকায় মুরগি রাতে ছটফট করে। ফলে আমাদেরও জেগে থাকতে হয়। দিনের গরমও মারাত্মক। বিদ্যুৎ অফিসে বারবার বলেও কোন সমাধান পাচ্ছি না আমরা।
টাঙ্গাইল পাওয়ার ডেভোলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ওবায়দুল ইসলাম জানান, চাহিদার চেয়ে টাঙ্গাইলে বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে। জাতীয় গ্রিড থেকে যা পাচ্ছি সেটাই সরবরাহ করা হচ্ছে। জেলা শহর ও উপজেলায় লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। তবে আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে এবং ঈদে মাকের্ট ও অফিস আদালত বন্ধ হওয়ার পর বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।