কক্সবাজারের নাজিরারটেক এলাকায় সমুদ্র উপকূলে ভেসে আসা ট্রলার থেকে উদ্ধার করা ১০ মরদেহ মহেশখালীর নিখোঁজ জেলেদের নাকি অন্য কারও, তা নিয়ে ধূম্রজাল বিরাজ করছে। কেউ কেউ ধারণা করছেন, উদ্ধার করা ১০ মরদেহ জলদস্যুর। আবার কেউ মনে করছেন, গত ৭ এপ্রিল সাগরে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ১৪ জেলের মধ্যে ১০ জনের মরদেহ এগুলো।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১৫-১৬ দিন আগে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া পয়েন্টে ডাকাতি করতে গিয়ে একদল জলদস্যু জেলেদের হামলার শিকার হন। হামলায় জলদস্যুরা মারা পড়েছিলেন বলে খবর বেরিয়েছিল। কিন্তু, এতদিন পর্যন্ত ওই দস্যু বাহিনীর নৌযানের হদিস পাওয়া যায়নি। উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলো জলদস্যুদের বলে ধারণা করছেন স্থানীয় কেউ কেউ।
রোববার (২৩ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে সমুদ্র উপকূলে একটি ট্রলার ভেসে আসার পর সেখানে মরদেহ দেখে পুলিশকে জানান স্থানীয় জেলেরা। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ গিয়ে ১০ মরদেহ উদ্ধার করে।
কক্সবাজারের মহেশখালী ও পেকুয়া উপজেলার জেলেদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ এপ্রিল মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার মৃত রফিক আলমের ছেলে শামসুল আলম নিজস্ব একটি ফিশিং ট্রলার নিয়ে ১৪ মাঝি-মাল্লাসহ সাগরে মাছ ধরতে যান। এর তিন দিন পর ১০ এপ্রিল সাগর থেকে মাছ ধরে ফিরে আসা কালারমার ছড়া ইউনিয়নের আঁধারঘোনা গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে বাবু জানান, ওই ট্রলারের ১৪ মাঝি-মাল্লা অপর একটি ট্রলারে ডাকাতি করার অভিযোগে কয়েকটি ট্রলার তাদের ঘিরে আটকে ফেলে। এরপর ১৪ জনকে হিমঘরে আটকে দিয়ে ট্রলারটি ডুবিয়ে দেয়। ওই ট্রলারে বাবুর আপন ভাই হায়াত উল্লাহও ছিলেন। এর পর থেকেই ট্রলারের মালিক শামসুল আলমসহ ১৪ মাঝি-মাল্লা নিখোঁজ।
নিখোঁজ জেলেরা হলেন—মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব আঁধারঘোনা গ্রামের ছালেহ আহমদের ছেলে ২৫ বছরের আব্দুল মালেক ও ২৩ বছরের মোহাম্মদ রিদুয়ান, আব্দুস সালামের ছেলে ২৪ বছরের মো. হায়াত, দানু মিয়ার ছেলে ২৬ বছরের আব্দুল মান্নান, আকবর আলীর ছেলে ২৮ বছরের মাহবুব আলম, মো. শরীফের ছেলে ২৭ বছরের নুরুছামাদ, ছামিরাঘোনা এলাকার আবু জাফরের ছেলে ২৭ বছরের নজরুল, অফিসপাড়া এলাকার ২৫ বছর বয়সি হেলাল উদ্দিন, শাপলাপুর ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ১৮ বছরের সাইফুল ইসলাম, জাফর আলমের ছেলে ১৮ বছরের মো. শওকত উল্লাহ, মুসার ছেলে ১৭ বছরের উসমান গণি, শাহাব মিয়ার ছেলে ২৩ বছরের সাইফুল্লাহ, মোহাম্মদ আলীর ছেলে ১৩ বছরের কিশোর পারভেজ মোশাররফ এবং মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে ৪৫ বছরের নুরুল কবির।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) নাজমুল হুদা বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর আসে, ট্রলার ভাসছে, ওখানে লাশ আছে। আমরা গিয়ে ভাসমান ট্রলারটিতে লাশ দেখতে পাই। পরে যখন সমুদ্রে ভাটা আসে, তখন ফায়ার সার্ভিসসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গিয়ে ট্রলারটিতে থাকা বরফ রাখার কল ভেঙে দেখেন, রশি দিয়ে বাঁধা ও জাল দিয়ে মোড়ানো ১০টি লাশ পড়ে আছে। পরে সেগুলো উদ্ধার করা হয়। লাশগুলো শানাক্তকরণসহ আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মরদেহগুলোর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ছিল এবং পচে গেছে। সাগরে যাদের আত্মীয়-স্বজন নিখোঁজ আছে, এরকম কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা এসেছিলেন শনাক্ত করতে। কিন্তু, তারা কোনোভাবেই শনাক্ত করতে পারেননি।’
ওসি বলেন, ‘মহেশখালীর কয়েকজনের নিখোঁজের তথ্য শোনা যাচ্ছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের খবর পাঠানো হচ্ছে। মরদেহগুলো পচে যাওয়ায় শনাক্ত করা কষ্টকর।’
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘মরদেহগুলো যেহেতু একদম পচে গেছে, সে কারণে শনাক্ত করা যায়নি। তবে, আমরা ডিএনএ সংরক্ষণ করছি। তা পরীক্ষা করে শনাক্ত করা হবে।’