বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের কোলঘেঁষা ও ভৈরব-রূপসা বিধৌত খুলনা জেলার ১৪২তম জন্মদিন আজ মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল)। দিনটি উপলক্ষে সকালে এক বর্ণাঢ্য শোভা যাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেখ খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। এছাড়া নানা কর্মসূচিরও আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর শিল্প ও বন্দরনগরী ঐতিহ্যবাহী খুলনা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রূপসা ও ভৈরব নদীর তীরে খুলনার অবস্থান। নদ-নদী বিধৌত হযরত খানজাহান আলী (রহ.) এর স্মৃতি বিজড়িত এ জেলাটির মানচিত্র লম্বা আকৃতির ও চৌকা ধরনের। দেশের প্রাচীনতম নদী বন্দরগুলোর মধ্যে খুলনা অন্যতম।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে জানা যায়, খুলনা নামকরণের উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত মতগুলো হচ্ছে- ধনপতি সওদাগরের দ্বিতীয় স্ত্রী খুলনার নামে নির্মিত ‘খুলনেশ্বরী মন্দির' থেকে খুলনা নামের উৎপত্তি। ১৭৬৬ সালে ‘ফলমাউথ' জাহাজের নাবিকদের উদ্ধার করা রেকর্ডে লিখিত Culnea শব্দ থেকে খুলনা শব্দটি এসেছে বলেও মনে করেন অনেকে। তবে বিজ্ঞজনের মতে, ‘কিসমত খুলনা' মৌজা থেকে খুলনা নামের উৎপত্তি হয়েছে। বৃটিশ আমলের মানচিত্রে লিখিত Jessore-Culna শব্দ থেকে খুলনা এসেছে বলেও অনেকের ধারণা।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৪২ সালে ভৈরব-রূপসা বিধৌত পুণ্যভূমি নয়াবাদ থানা ও কিসমত খুলনাকে কেন্দ্র করে নতুন জেলার সদর দপ্তর স্থাপিত হয় খুলনায়। খুলনা মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বৃটিশদের প্রশাসনিক এলাকা বৃদ্ধি এবং ভৌগলিক অবস্থার কারণে খুলনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাত্র ৪০ বছরের ব্যবধানে ৪ হাজার ৬৩০ বর্গমাইল এলাকা, ৪৩ হাজার ৫০০ জনসংখ্যা অধ্যুষিত খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরাকে নিয়ে ১৮৮২ সালের ২৫ এপ্রিল গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে খুলনা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। আর সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী খুলনার ১৪২তম জন্মদিন আজ। এর আগে খুলনা ছিল যশোর জেলার মহকুমা।
মূলত কৃষির পাশাপাশি খুলনায় শিল্প নির্ভর অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি মাছ উৎপাদন কেন্দ্র, জুট মিল, লবণ ফ্যাক্টরিসহ নানা প্রতিষ্ঠান।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, প্রতিবছরই আমরা খুলনা দিবসের আয়োজন জাকজমকপূর্ণভাবে করে থাকি। এবার শোভাযাত্রা ও স্মরণিকা প্রকাশসহ দিনভর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দল মত নির্বিশেষে খুলনার সর্বস্তরের মানুষ এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
খুলনা নগরীর শিববাড়ী মোড়ে দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে খুলনার উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এক সময়ের অবহেলিত ও বঞ্চিত খুলনা আজ উন্নয়নের ধারায় ফিরে এসেছে। বর্তমান সরকার খুলনা উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে। আগামী দিনেও এ কাজের ধারা অব্যাহত রাখতে খুলনাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি বিভিন্ন দাবি উত্থাপন ও তা বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবে।
সিটি মেয়র শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে খুলনা দিবস উপলক্ষ্যে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির আয়োজিত কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান। সমাবেশে সংগঠনের মহাসচিব কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মাদ আলীর পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন-খুলনা মহানগরীর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা, খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুকুল কুমার মিত্র, বীর মুক্তিযোদ্ধ মো. আবু জাফর, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর ইসলাম বন্দ, খুলনা বিএমএ’র সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ, খুলনা চেম্বারের পরিচালক চৌধুরী মিনহাজ-উজ-জামান সজল, পরিচালক মফিজুল ইসলাম টুটুল।