রংপুরের বাজারগুলোতে ঈদুল ফিতরের সপ্তাহ পার না হতেই ফের বাড়তে শুরু করেছে সব ধরনের মুরগির দাম। পাইকারি বাজারে কেজিতে বেড়েছে ৩০-৪০ টাকা আর খুচরায় ৩০-৬০ টাকা। স্বস্তি ফেরেনি মাছ ও অন্যান্য মাংসেও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ পরবর্তীতে ঘরমুখো মানুষের অতিরিক্ত চাহিদার তুলনায় আমদানি কম থাকায় প্রভাব পরেছে দামে। তবে সপ্তাহ খানেক পর দাম স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানান তারা।
রোববার (৩০ এপ্রিল) রংপুর নগরীর সিটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে ব্রায়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে ২৩০ টাকা যা ঈদ পূর্ববর্তী সপ্তাহে ছিলো ১৯০-২০০ টাকা।
পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০-৩৫০ টাকায়। যা ঈদ পূর্ববর্তী সপ্তাহে ছিলো ৩১০-৩২০ টাকা। এছাড়াও দেশি মুরগি রমজান মাসের তুলনায় ৬০ টাকা কেজিতে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে। তবে লেয়ার মুরগির দাম তুলনামূলকভাবে বাড়েনি। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৩৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
ঈদ পরবর্তী সময়ে রমজান মাসের চেয়ে কেজিতে ৩০-৫০ টাকা পাইকারি দরে মুরগির দাম বাড়ায় খামারিদের ঈদ মৌসুমী মনোভাবকে দুষে নিরুপায় ভাব প্রকাশ করলেন এই বাজারের ব্যবসায়ীরা। আর ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
সিটি বাজারে মুরগি কিনতে এসেছেন বেসরকারি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্টেন্ট পদে কর্মরত আসলাম হোসেন। ২৩০ টাকা কেজি দরে মুরগি কিনে ক্ষুব্ধ হয়ে আসলাম বলেন, ‘ঈদ শেষ, এখন জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কম থাকার কথা। সেটি না হয়ে উল্টো কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বেড়ে গেছে। গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম থেকে আত্মীয় স্বজন আসায় বাড়তি দামে নিরুপায় হয়ে কিনতে হলো।’ রাগান্বিত হয়ে আসলাম বলেন, ‘দাম বৃদ্ধির বিষয়গুলো মিডিয়াতে বলে কি লাভ! দিন যাবে আর বাড়তি দামে কিনে খেতে হবে এটাই এখন নিয়ম।’ আসলামের মতো ক্ষুব্ধ নগরীর শালবন এলাকার গৃহিণী সালমা বেগমও। ঈদের পরে মেয়ের বাড়ির স্বজনদের ভোজন করাতে ৫ কেজি পাকিস্তানি মুরগি ৩৫০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন সালমা। তিনি বলেন, রমজানের ৮-১০ দিন আগেই বাজারে পাইকারি দরে মুরগি কিনেছিলাম ৩১০ টাকা করে। আর আজ সেটি কিনতে হলো ৪০ টাকা বেশি দিয়ে। ব্যবসায়ীদের দাম বৃদ্ধির এসব নিয়ম নীতির বিষয়গুলো শক্তভাবে মনিটরিং করার দাবিও তার।
সিটি বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান বলেন, ঈদের আগের সপ্তাহের দাম পরের সপ্তাহে এসে ৩০-৪০ টাকা বেড়েছে। মূলত খামারিদের খামারে মুরগি কম থাকার কারণে এটি হয়েছে। আর এই সময়ে চাহিদাও একটু বেশি থাকে বিধায় দাম বেড়েছে।
মুরগি ছাড়াও মাছ এবং অন্যান্য মাংসের দামও কিছুটা বেড়েছে ঈদ পরবর্তী সময়ে। সিটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গরুর মাংস কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৭২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের আগেই মানুষ বেশি করে মাংস কিনে নেন। তাই পরবর্তী সপ্তাহজুড়ে চাহিদা একটু কম থাকে। একটি গরু জবাই থেকে শুরু করে মাংস প্রস্তুত করতে লোকবলের সঙ্কট ছাড়াও দিনজুড়ে সময় নিয়ে বিক্রি করতেই এই বাড়তি দাম। তবে ২-৪ দিনের মধ্যেই দাম স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার কথাও।
এদিকে, পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে ঈদ পূর্ববর্তী সপ্তাহের তুলনায় মুরগি ৩০-৬০ টাকা বেশি বেড়েছে। নগরীর স্টেশন, আনছারীমোড়, চকবাজার, মাহিগঞ্জ এলাকার বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকা, পাকিস্তানি কক বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকা কেজি দরে।
সিটি বাজার মুরগি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সামছুল ইসলাম বলেন, ঈদকে ঘিরে চাহিদা অনুযায়ী খামারিরা টার্গেট করে মুরগি প্রস্তত করে বিক্রি করে থাকে। পরবর্তীতে খামারে মুরগি না থাকায় বাজারে এক ধরনের শূন্যতা দেখা দেয়। অন্যদিকে, ঈদে মানুষের খাদ্য তালিকায় মুরগি ও মাছ-মাংসের চাহিদাও থাকে বেশি। এতে খামার থেকে মুরগির আমদানির তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়েছে। তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে মুরগিসহ মাছের এই বাড়তি দাম কমে আসবে বলেও জানান তিনি।