গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৫ মে। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট চাচ্ছেন, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে লিফলেট, ব্যানার ফেস্টুন দিয়ে মাইকিং করে এবং গণসংযোগ করছেন ভোটাররা।
মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা আসন পদের ৩২৪ জন প্রার্থী সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় চালিয়েছে গণসংযোগ। গাজী আতাউর রহমান আজ সদর এলাকা এবং ৩২ ৩৩ ৩৪ নং ওয়ার্ড গণসংযোগ প্রচারণা চালায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি হাতি মার্কায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভোট চায়, গাজীপুর সদর এলাকায় নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান গণসংযোগ করেন। বিকেলে চলে যান উত্তরার একটি প্রোগ্রামে। জায়েদা খাতুন সকালে নগরীর মানুষের কাছে টেবিল ঘড়ি মার্কায় ভোট চান। এছাড়াও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সকালে গাছা একাকায়, বিকেলে কাশিমপুর ও কোনাবাড়ি এলাকায় গণসংযোগ করেন।
নৌকা প্রতীকের আজমত উল্লা খান দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে দলীয় কার্যালয় ও বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের কাছে যান। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন মহানগরীর ৩০নং ওয়ার্ডের কানাইয়া এলাকায় স্বামীর করব জিয়ারতের মধ্যে দিয়ে শুরু করেন নির্বাচনী প্রচারণা। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী গাজীপুর আতাউর রহমানের কর্মী সমর্থক বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ এবং ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চান। এছাড়াও অনন্য মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলররা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার প্রচারণায় অংশ নেন। কাউন্সিলরা প্রতীক বরাদ্দের পরে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে প্রচারণা শুরু করেন।
নগরীর একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, আজ প্রতীক পাওয়ার পর সবাই প্রচারণা শুরু করেছেন। বিভিন্ন আশ্বাস দিচ্ছেন, ভোটের আগে সবাই এমন প্রতিশ্রুতির কথা বলে থাকেন। তাদের প্রতিশ্রুতি ও অতীত কার্যকালাপ পর্যবেক্ষণ করে যোগ্য ব্যক্তিকে মূল্যবান ভোট দেবেন। কারও কথায় বা দলীয় মোহে না পড়ে সবার উচিত যোগ্য ব্যক্তিকে সিটির দায়িত্বে নিয়োজিত করা।
আজমত উল্লা খান বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আজ নৌকা প্রতীক পেয়েছি। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে সমৃদ্ধ ও সুষম সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমি এই সিটি কর্পোরেশনকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাব। এটার জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে সহযোগিতা করবেন।’
মেয়র পদে হাতি প্রতীকের প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি বলেন, ‘গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে ১০ বছরে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আমি বিশ্বাস করি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা আমি পূরণ করতে পারব। গাজীপুর সিটির ৪০ লাখ মানুষকে নিয়ে হাতি প্রতীকে জয়ের মালা পড়ব। হাতি মার্কা জনগণের মার্কা।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি প্রতীকের জায়েদা খাতুন বলেন, ‘আমি নগরবাসীর কাছে ঘড়ি মার্কায় ভোট চাই। এছাড়াও নির্বাচন কমিশনের কাছে সুষ্ঠু ভোট প্রত্যাশা করি।’
হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘গাজীপুরের মানুষ এখন সচেতন। তারা এতটুকু জানে দুর্নীতিতে আকুন্ঠ নিমজ্জিত থেকে যারা দুর্নীতিমুক্ত নগরী গড়ার কথা বলেন তারা ধোঁকাবাজ। দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে বটগাছ বনে যেতে তারা নির্বাচনে এসেছে। তাদের বয়কট করে পীর সাহেব চরমোনাই মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে ২৫ মের নির্বাচনে জয়ী করতে ভোট দেন।’
মেয়র পদে কোন প্রার্থী কি প্রতীকঃ নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লাহ খান, লাঙ্গল প্রতীকে এম এম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে গাজী আতাউর রহমান, টেবিল ঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন, হাতি প্রতীকে সরকার শাহানুর ইসলাম রনি, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম, গোলাপ ফুল প্রতীকে রাজু আহম্মেদ ও ঘোড়া প্রতীকে হারুন অর রশিদ।
গাজীপুর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার প্রতীক বরাদ্দের পরে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচরণা শুরু হয়েছে। তবে প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি বিষয়ে মৌখিক ও লিখিতভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করি, প্রার্থীরা এগুলো মেনে চলবেন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবে। এজন্য আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য।’
সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, গণফ্রন্ট ও ইসলামী আন্দোলন এবং স্বতন্ত্রসহ মোট ৮ জন মেয়র পদে লড়ছেন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৩৯ ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৭৭ জন প্রার্থী নির্বাচন করছেন। গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। ৫৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৩৯ জন, সংরক্ষিত ১৯টি নারী কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি।