শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৫ রান। প্রথম দুই বল ডট দেন মুশফিক। তৃতীয় বল ফুল টস এলে উড়িয়ে মারেন স্কয়ার লেগে। আম্পায়ার নো বলের সিদ্ধান্ত দেন। বেঁচে যান মুশফিক। চতুর্থ বলে ফ্রি হিট পেয়ে দারুণ এক স্কুপে ৩ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে ম্যাচ জেতান মিস্টার ডিপেন্ডেবল। আইরিশদের দেওয়া ৩২০ রানের লক্ষ্য ৪৫ ওভারে তাড়া করা সহজ ছিল না। শান্তর অনবদ্য প্রথম শতকের সঙ্গে হৃদয়ের ফিফটিতে জয়ের ভিত পায় বাংলাদেশ। শান্ত ১১৭ ও হৃদয় ৬৮ রান করেন। সেই ভিতে দাঁড়িয়ে মুশফিক অনন্য দক্ষতায় ম্যাচ শেষ করে আসেন। মুশফিক ২৮ বলে ৩৬ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন। আইরিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নেন কার্টিস ক্যাম্পার-জর্জ ডকরেল। ক্যারিয়ারের প্রথম শতক হাঁকানো শান্ত পান ম্যাচসেরার পুরস্কার।
৮৩ বলে শান্তর দুর্দান্ত সেঞ্চুরি
ডকরেলকে মিডউইকেটে পুল করে ডাবল নেন শান্ত। এক লাফে ৯৯ থেকে চলে যান তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে। ক্যারিয়ারের প্রথম শতক হাঁকান মাত্র ৮৩ বলে। তামিম ফিরলে শান্ত ক্রিজে আসেন চতুর্থ ওভারে। এরপর ফেরেন লিটনও। শান্তর সঙ্গী হন সাকিব। ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন এই বাঁহাতি ই ব্যাটসম্যান। সাকিবের সঙ্গে ৪৭ বলে ৬১ রানের জুটি গড়ে। সাকিবের বিদায়ের পর হৃদয় এলে তাকে নিয়ে শুরু করেন ঝড়ো ব্যাটিং। দুজনে ১০২ বলে যোগ করেন ১৩১ রান। ফিফটির পর হৃদয় ফিরলেও শান্ত ছিলেন অবিচল। ৪৯ বলে ফিফটির পর সেঞ্চুরি তুলে নেন মাত্র ৮৩ বলে। চার হাঁকান ১১টি আর ছয় ২টি। শেষপর্যন্ত শান্ত থামেন ৯২ বলে ১১৭ রান করে। ৩৭ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৫৭ রান। জয়ের জন্য ৮ ওভারে প্রয়োজন ৬৩ রান।
বল হারানো হৃদয় থামলেন ৬৮ রানে
গ্রাহাম হুমকে ছয় হাঁকিয়ে বলই হারিয়ে ফেলেন হৃদয়। ৪৯ বলে ফিফটি করার পর পরের ৯ বলে করেন ১৮ রান। শেষ পর্যন্ত তার ইনিংস থামে ৬৮ রানে। সাকিব ফেরার পর বাংলাদেশের একটি বড় জুটির প্রয়োজন ছিল। শান্তকে দারুণ সঙ্গদেওয়া হৃদয় খেলেন দৃষ্টিনন্দন সব শট। ৫টি চার ও ৩টি ছয়ে সাজানো ছিল তার ইনিংস। শান্তর সঙ্গে জুটি থেকে আসে ১৩১ রান।
বিধ্বংসী শান্ত, দুর্দান্ত হৃদয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ
লিটন ফেরার পর সাআককিব-শান্ত জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন দারুণভাবে। ৪৭ বলে দুজনে যোগ করেন ৬১ রান। এরপর ক্যাম্পারকে খেলতে গিয়ে যেন ক্যাচ অনুশীলন করলেন সাকিব। ব্যাকফুটে গিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শটে কোনো জোর ছিল না। বল চলে যায় পয়েন্টে ডকরেলের হাতে। সাকিবের বিদায়ের পর বাংলাদেশের রানের চাকা থামেনি। হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকেন। ৪৯ শান্ত তুলে নেন ফিফটি। ফিফটির পর চওড়া হয় তার ব্যাট। অন্যদিকে হৃদয় খেলছেন সাবলীল। বল-রানের পার্থক্য রাখছেন সমান। দুজনের জুটি ইতিমধ্যে প্নচাশ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৬ ওভারে ৩ উইকেটে ১৬৮।
ব্যর্থ তামিম, সেট হয়েও ফিরলেন লিটন
এই ম্যাচে তামিম দুই অঙ্কের ঘরেই যেতে পারেননি। বড় রান তাড়া করতে নেমে ফিরলেন মাত্র ৭ রান করেছেন। বল নষ্ট করেছেন ১৩টি। অ্যাডেয়ারকে ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডকরেলের হাতে। তামিম ফেরার পর শান্তকে সঙ্গে নিয়ে দারুণ খেলার সম্ভাবনা দেখান। ২ চার ১ ছয় হাঁকিয়ে সাবলীল খেলার ইঙ্গিত দেন। কিন্তু ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। হুমকে কাভারে ড্রাইভ করতে গিয়ে ফেরেন ২১ রান করে। দুজনের বিদায়ের পর হাল ধরার চেষ্টা করছেন শান্ত-সাকিব। ১২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৫৫।
টেক্টরের সেঞ্চুরি ডকরেলের তাণ্ডবে ৪৫ ওভারে আইরিশদের ৩১৯
অথচ শুরুটা হয়েছিল কি দুর্দান্ত। ১৬ রান না হতেই আইরিশদের ২ উইকেট নেই! সেখান থেকে ৪৫ ওভারে তারা করে ৬ উইকেটে ৩৪৫! ২৩ রানে শরিফুলের হাতে জীবন পাওয়া টেক্টর থামেন ১৪০ রান করে। মাত্র ৪৭ বলে ৭৪ রানের ইনিংস খেলেন ডকরেল। তিনি ৫৯ রানে জীবন পান সাকিবের হাতে। টেক্টর-ডকরেল মাত্র ৬৮ বলের জুটিতে যোগ করেন ১১৫। ডকরেলের সঙ্গে ৮ বলে ২০ রান করে অপরাজিত ছিলেন অ্যাডেয়ার। বাংলাদেশের হঊএ ৯ ওভারে সর্বোচ্চ ৮৩ রান দেন শরিফুল। এ ছাড়া সাকিব ৯ ওভারে ৫৭, তাইজুল ৭ ওভারে ৫৯, ইবাদত ৯ ওভারে ৫৬ ও হাসান ৯ ওভারে ৪৮ রান দেন। সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নেন হাসান-শরিফুল।
টেক্টরের সেঞ্চুরিতে বড় রানের দিকে এগোচ্ছে আয়ারল্যান্ড
তাইজুলকে কাভারে ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল নেন হ্যারি টেক্টর। মাত্র ৯৩ বলে পেয়ে যান ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চউরির। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ১৪টি চার ও ১টি ছয়ে। ১৬ রানে দুই উইকেট হারানোর পর বালবার্নিকে নিয়ে ৯৮ রানের জুটি গড়েন টেক্টর। বালবার্নি ৪২ রানে ফিরলে ভাঙে এই জুটি। এরপর ক্রিজে এসে টকার (১৬) ও ক্যাম্পার (৮) বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। কিন্তু একপ্রান্তে অটল টেক্টর। এখন ডকরেলকে সঙ্গে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন। দুজনের জুটি থেকে মাত্র ৩৮ বলে ইতিমধ্যে ৫০ রান আসে। ৩৫.৫ ওভারে তারা ২০০ পূর্ণ করে এখন এগোচ্ছে বড় রানের দিকে। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলছেন দুজনে। ৩৮ ওভারে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ২৪১। বাংলাদেশি বোলাররা রান দিচ্ছেন হাত খুলে। নিজের নবম ওভারে শরিফুল দেন ২৪ রান। ৯ ওভারে তিনি দিয়েছেন ৮৩! মার খাচ্ছেন স্পিনাররাও।
তাইজুলকে ৩ ছয়ে টেক্টরের ফিফটি, আইরিশদের প্রতিরোধ
প্রথম পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে সুবিধা করতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। এরপর ধীরে ধীরে হাল ধরেন টেক্টর-বালবার্নি। দুজনে থিতু হয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়েছেন। ২০ তম ওভারে তাইজুলকে ৩ ছয় হাঁকিয়ে ৫২ বলে ফিফটি তুলে নেন টেক্টর। দুজনের জুটি থেকে এখন পর্যন্ত আসে ৮৪ রান। টেক্টর ৫৪ বালবার্নি ৩৩ রানে ব্যাট করছেন। স্পিনাররা সুবিধা করতে পারছেন না। তাইজুল ২ ওভারে ২৪ রান দেন, সাক দেন ৬ ওভারে ২৬। ২১ ওভার শেষে আইরিশদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ১০০।
হাসানের তোপে প্রথম পাওয়ার প্লেতে দুর্দান্ত বাংলাদেশ
প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে পল স্টার্লিংকে ফিরিয়ে শুরু। এরপর সপ্তম ওভারে হাসান মাহমুদ ফেরান আরেক ওপেনার স্টিফেন দোহনিকেও। উইকেটের সঙ্গে আঁটসাঁট বোলিং করে আইরিশদের প্রথম পাওয়ার প্লেতে চেপে ধরেছিলেন হাসান মাহমুদ। তিনি একাই ৫ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। স্টার্লিং খোঁচা দিলেও আম্পায়ার আউট দেননি, পরে রিভিউ নিলে বাংলাদেশের পক্ষে আসে। শূন্য রানে ফেরেন তিনি। দোহনি ১২ রান করে মিরাজের হাতে ক্যাচ দেন। ১৬ রানে ২ উইকেট হারায় তারা। প্রথম পাওয়ার প্লেতে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ২ উইকেটে ২৬। টেক্টর-বালবার্নি হাল ধরেছেন দলের।
অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। একাদশে কোনো পরিবর্তন ছাড়াই নেমেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচের মতো তিন পেসার ও তিন স্পিনার নিয়ে আইরিশদের মুখোমুখি লাল সবুজের দল। আইরিশ একাদশেও কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
বাংলাদেশ একাদশ তামিম ইকবাল, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, তাইজুল ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজ, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, এবাদত হোসেন।
আয়ারল্যান্ড একাদশ অ্যান্ড্রু বার্লবার্নি, মার্ক অ্যাডায়ার, কার্টিস ক্যাম্ফার, জর্জ ডকরেল, স্টিভেন দোহেনি, গ্রাহাম হিউম, জশ লিটল, অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রেইন, পল স্টার্লিং, হ্যারি ট্যাক্টর, লরকান টাকার।
৪৫ ওভারে খেলা, শুরু সন্ধ্যা ৬টায়
অবশেষে থামলো বৃষ্টি। বাংলাদেশ সময় ৫.৩০ মিনিটে টস। খেলা শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। ৫ ওভার কমে খেলা হবে ৪৫ ওভারে।
বৃষ্টিতে দ্বিতীয় ওয়ানডের টস হতে দেরি
বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় ওয়ানডের টস অনুষ্ঠিত হয়নি যথাসময়ে। চেমসফোর্ডের ক্লাউড কাউন্টি গ্রাউন্ডে শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩.৪৫ মিনিটে ম্যাচটি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে টস না হওয়াতে খেলাও যথাসময়ে শুরু হবে না।
এক টুইটে আইরিশ ক্রিকেট বোর্ড বৃষ্টির কথা জানিয়েছে। ম্যাচ অফিসিয়ালরা মাঠ পরিদর্শন করেছেন ইতিমধ্যে। এখনো হালকা বৃষ্টি ঝরছে। এর আগে বেরসিক বৃষ্টি আয়ারল্যান্ডের উদ্দেশ্য পূরণ হতে দেয়নি। পরিত্যক্ত হয় প্রথম ওয়ানডে। কেড়ে নিয়েছে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন।
ম্যাচ ডে’তে বৃষ্টির শঙ্কা থাকলেও আগের দিন দারুণ এক অনুশীলন সেশন করেছে বাংলাদেশ। ঝলমলে রোদে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছেন তামিম ইকবাল-লিটন দাসরা। প্রথম ওয়ানডেতে দুই ওপেনারই ব্যর্থ হয়েছিলেন। নেটে বেশ খানিকটা সময়ধরে তারা ব্যাটিং অনুশীলন করেন। বিরুপ আবহাওয়ার মধ্যেও ফুরফুরে আছে বাংলাদেশ শিবির।
বাংলাদেশের লক্ষ্য একটাই। জয়। পেসার শরিফুল ইসলাম এমনটাই জানিয়েছেন সাংবাদিকদের, ‘অবশ্যই আমরা জয়ের জন্যই নামব। অন্য কোনো পরিকল্পনা নেই। বেসিকটাই আমরা যেন জয়টা ছিনিয়ে আনতে পারি।’
বাংলাদেশ শিবির ফুরফুরে থাকলেও আইরিশদের অবস্থান যেন শোকে পাথর। প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়াতে পয়েন্ট হারিয়েছে তারা। বাকি দুই ম্যাচ জিতলেও বিশ্বকাপের জন্য খেলতে হবে বাছাইপর্ব। আইরিশরা দ্বিতীয় ম্যাচের আগের দিন কোনো অনুশীলনই করেনি।
ওয়ানডে সুপার লিগে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ স্থানে। পয়েন্ট ১৩৫। আইরিশদের বিপক্ষে বাকি দুই ম্যাচ জিততে পারলে পয়েন্ট হবে ইংল্যান্ডের সমান ১৫৫। রানরেটে এগিয়ে থাকলে বাংলাদেশ চলে যাবে ইংল্যান্ডের জায়গায় দ্বিতীয় স্থানে।