খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সম্পদে শীর্ষে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। অন্যদিকে বার্ষিক আয় বেশি হলেও জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু স্বশিক্ষিত। তবে, অর্থ-সম্পদে পিছিয়ে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা আব্দুল আউয়াল।
খুলনার সদ্য বিদায়ী মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এবং তাঁর স্ত্রী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারের নামে রয়েছে গাড়ি, বাড়ি, সঞ্চয়পত্র, রাজউক পূর্বাচলে প্লট। দু’জনে মিলে বিপুল সম্পদের মালিক। দু’জনের বছরে আয় ৫৯ লাখ টাকা এবং সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
তবে, বছরে আয় বেশি জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধুর বছরে আয় ৯০ লাখ টাকা। ব্যাংক ঋণেও শীর্ষে রয়েছেন তিনি। ৮ কোটি ৪১ লাখ টাকার সম্পদ থাকলেও মধুর রয়েছে ৫২ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ।
প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এতথ্য জানা গেছে।
আসন্ন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে স্ব-স্ব মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। পত্রের সঙ্গে তারা নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পদ ও দায়-দেনার বিবরণীর হলফনামাও দিয়েছেন।
হলফনামা থেকে দেখা গেছে, বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ মনোনীত আসন্ন নির্বাচনের মেয়রপ্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুল আউয়াল কামিল পাস। শিক্ষাগত যোগ্যতায় পিছিয়ে মো. শফিকুল ইসলাম মধু। নিজেকে স্বশিক্ষিত বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি।
নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বৃহস্পতিবার (১৮ মে) এই তিন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন।
তালুকদার আব্দুল খালেক: আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক হলফনামায় নিজের পেশা ব্যবসা বলে উল্লেখ করেছেন। তার কাছে নগদ রয়েছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। চারটি ব্যাংকে জমা আছে ১ কোটি ১৮ হাজার টাকা। ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও ১৮ লাখ টাকার পোস্টাল এফডিআর রয়েছে তার।
এছাড়া তার বাসার এসি, টিভি, ফ্রিজ ও ওভেনের মূল্য ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আসবাব রয়েছে ৭ লাখ টাকার।
তালুকদার খালেক পৈতৃক সূত্রে ২৩ বিঘা কৃষিজমির মালিক। এছাড়া তার ৩ দশমিক ২১ একর কৃষিজমি ও ৩ কাঠা অ-কৃষি জমি রয়েছে। যার মোট মূল্য ২৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। জমিসহ একটি বাড়ির অর্ধেক মালিক তিনি। বাড়িটির মূল্য ২ কোটি ১২ লাখ টাকা। দুটি গাড়ির মধ্যে একটির মূল্য ৪৪ লাখ টাকা। একটি মাইক্রোবাস রয়েছে, যেটির মূল্য দেখিয়েছেন ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আব্দুল আউয়াল ও (ডানে) জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু
স্নাতক পাস তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা ছিল। চারটিতে তিনি অব্যাহতি ও বাকি ৫টিতে খালাস পেয়েছেন।
তালুকদার আব্দুল খালেকের স্ত্রী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহারের কাছে নগদ আছে ৭৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। চারটি ব্যাংকে তার জমা রয়েছে ৯৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৫০ লাখ টাকার। টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার ব্যবহার করেন তিনি। সেটির দাম উল্লেখ করা হয়েছে ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বৈবাহিক সূত্রে পাওয়া ২৫ ভরি স্বর্ণের মালিক এই মেয়র প্রার্থীর স্ত্রী। এছাড়া স্যার ইকবাল রোডের সোনালী ব্যাংক শাখায় তালুকদার আব্দুল খালেক ও স্ত্রীর নামে ঋণ আছে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
হাবিবুন নাহারের নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট রয়েছে, যার মূল্য ২২ লাখ টাকা। এছাড়া জমিসহ পাঁচতলা আরেকটি বাড়ির অর্ধেকের মালিক তিনি, যার মূল্য দেখানো হয়েছে ৩১ লাখ টাকা।
এর আগে ২০১৮ সালে হলফনামায় পেশা হিসেবে কৃষিখাতকে ব্যবসা হিসেবে দেখিয়েছিলেন তালুকদার আবদুল খালেক। বার্ষিক আয় প্রায় ৪২ লাখ টাকা, দেনা নেই। ব্যাংক জমা, সঞ্চয়পত্র ও স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ৫ কোটির কিছু বেশি।
আব্দুল আউয়াল: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুল আউয়াল কামিল পাস। তিনি নগরীর জামি’আ রশীদিয়া গোয়ালখালী মাদরাসার অধ্যক্ষ এবং সাধারণ ব্যবসায়ী। ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। মাদরাসায় শিক্ষকতা থেকে ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। আউয়ালের নিজের নামে ৩ দশমিক ৫৭ শতক অ-কৃষি জমি রয়েছে। অস্থাবর সম্পদ আছে নগদ ৬ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর মূল্য ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা, আসবাবপত্রের মূল্য ৫০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ১৫ ভরি স্বর্ণ রয়েছে, যার মূল্য ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তার নামে কোনো মামলা নেই।
শফিকুল ইসলাম মধু: জাতীয় পার্টি মনোনীত মো. শফিকুল ইসলাম মধু অন্য দুই প্রার্থী থেকে শিক্ষায় পিছিয়ে। তিনি হলফনামায় নিজেকে স্বশিক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন। তার মূল পেশা ঠিকাদারি। মহানগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় ৪ কাঠা জমি ও চারতলা বাড়ি আছে তারা। টুটপাড়া মৌজায় ০ দশমিক ১৩৭২ ও ০ দশমিক ১২৪৪ একরের দুটি জমি রয়েছে- যার সর্বমোট মূল্য ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বাড়ি ভাড়া থেকে তার বছরে আয় ১ লাখ ৮৬ হাজার ও ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে ৮৮ লাখ টাকা।
মধুর নগদ ও ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা, মধুমতী ব্যাংক লিমিটেডের খুলনা শাখায় ৩ কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। তার ব্যবহৃত একটি গাড়ির মূল্য সাড়ে ২৩ লাখ টাকা, ১৪ ভরি স্বর্ণ, ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিকস সামগ্রী রয়েছে। দেড় লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র ও স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ১৫ লাখ টাকা রয়েছে। এছাড়া মধুমতী ব্যাংক খুলনা শাখায় মধুর ঋণ রয়েছে ৫২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তার নামে কোনো মামলা নেই।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন বলেন, প্রার্থীরা যেসব তথ্য দিয়েছেন তা যাচাই-বাছাই করে সঠিক পাওয়া গেছে। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে ৭ জন অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার মোট ভোটার রয়েছেন ৫ লাখ ৩৫ হাজার। ভোট কেন্দ্র ২৮৯টি এবং ভোট কক্ষ থাকবে ১ হাজার ৭৩২টি। আগামী ২৫ মে এই নির্বাচনে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ২৬ মে প্রতীক বরাদ্দ হবে প্রার্থীদের মধ্যে। সবঠিক থাকতে আগামী ১২ জুন দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই সিটি করপোরেশনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।