কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যরে কারণে সিরাজগঞ্জের ফুলজোড় নদীতে নানা প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভেসে ওঠা এসব মাছ ধরতে নানা বয়সী নারী-পুরুষরা ভিড় জমাতে দেখা গেছে নদীর দুই পাড়ে।
শনিবার (২০ মে) দুপুরে রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া ব্রিজ এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা যায়।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় দুটি শিল্পকারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলায় পানি দূষিত হচ্ছে। এ কারণে ফুলজোড় নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, শামুকসহ জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। গত দুই দিন ধরে এ অবস্থা চলছে।
রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া, মহেশপুর ও চান্দাইকোনা ইউনিয়নের বেড়াবাজুয়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফুলজোড় নদীর পানির রং বদলে গেছে। বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে অজস্র মাছ মরে ভেসে উঠছে। এলাকার বিভিন্ন বয়সের শতশত মানুষ নদীর পাড় থেকে মরা মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছেন বলেও দেখা গেছে।
মাছ ধরতে আসা কৃষি শ্রমিক সোহেল রানা বলেন, বাজারে যাওয়ার সময় দেখি অনেকেই নদীতে ভেসে ওঠা মরা মাছ ধরছেন। তাই আমিও মাছ ধরতে নেমে পড়েছি।
চান্দাইকোনা ইউনিয়নের সরাই গ্রামের সালমান, সেলিম, আল-আমিনসহ কয়েকজন বলেন, নদীর পাড়েই আমাদের বাড়ি। নদীতে ভেসে ওঠা মাছ ধরছি। ছোট-বড় নানা ধরনের মাছ ধরতে ভালোই লাগছে। তবে এভাবে কেন মাছ মরে ভেসে উঠছে, তা চিন্তার বিষয়।
স্থানীয় শিক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, নদীর পানি আগে ভালোই ছিলো। এই নদীতে নিয়মিত গোসল করতেন অনেকেই। কিন্তু দুই দিন ধরে দেখছি পানির রং এমনভাবে বদলে গেছে যে এ পানিতে গোসল করতে ভয় লাগে। আজ দেখছি সব ধরনের মাছ মরে ভেসে উঠছে। এভাবে নদীর মাছসহ জলজ প্রাণী ধ্বংস করার নজির আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। দুই দিন ধরে পানি এমনভাবে দূষিত হয়েছে যে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি দীপক কুমার কর জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে স্থায়ী প্রতিকারের অনুরোধ জানিয়ে নদী দূষণ, জলজ জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
রায়গঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, উজানের দুটি শিল্প কারখানার বর্জ্যে নদের মাছসহ জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। এ বিষয়টিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রায়গঞ্জ পৌর সভার মেয়র আবদুল্লাহ আল পাঠান বলেন, কয়েক বছর ধরে ফুলজোড় নদের পানি দূষণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যে কারণে কারখানার বর্জ্যে নদীর মাছ মরে যাচ্ছে।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৃপ্তি কণা মণ্ডল বলেন, বগুড়া জেলার আওতাধীন হওয়ায় আমরা নদী দূষণকারী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।