মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার কৈট্টা এলাকায় কারাখানার শিল্প বর্জ্যের দূষণের কবলে পড়েছে গাজীখালী নদী। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কারখানা থেকে নদীতে ছাড়া পানিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। দীর্ঘদিন ধরে এ দূষণ চলে আসলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
সম্প্রতি নদীর তীরে অবস্থিত তারাসীমা এ্যাপারেলস লিমিটেড শিল্প প্রতিষ্ঠানের নদীর পানিতে ফেলা তরল বর্জ্যের নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পাঠায় মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে দূষণের মাত্রা থাকায় প্রতিষ্ঠানটিকে নোটিশ করে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ অধিপ্তরে ওই নোটিশের জবাব দাখিল করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
তবে এ প্রতিবেদক পরিবেশ অধিপ্তর মানিকগঞ্জ কার্যালয় থেকে ওই নমুনা পরীক্ষার ফলাফল, নোটিশের কপি ও জবাব দাখিলের কপি সরবরাহ করার অনুরোধ করলে অপারগতা প্রকাশ করেন উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম। তবে তিনি জানান, নমুনা পরীক্ষার টেস্টিং প্যারামিটারে বিডিএস এর মাত্রা ২ হাজার ১০০ স্থলে ২ হাজার ৫০০ বেশি, বিওডি এর মাত্রা ৩০ এর স্থলে ৩২, নদী থেকে নেওয়া নির্গত নমুনার ফলাফলে বিওডি ৬০, সিওডির মাত্রা ২০০ স্থলে ২৮৫ পাওয়া গেছে। ফলে চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল তারাসীমা এ্যাপারেলস লিমিটেডকে দূষণের দায়ে নোটিশ করা হয়েছে। পরে ৭ মে ওই প্রতিষ্ঠান জবাব দাখিল করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীখালী নদীর পাড়ের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে নদী দূষণরোধে প্রতিবাদ করেও সুফল পাচ্ছে না। নদীতে ফেলা একাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পানি। ফলে এক সময়ে খরস্রোতা নদীটি মৃতপ্রায়। সম্প্রতি মানিকগঞ্জ জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় রাইজিং নীট টেক্সটাইল লিমিটেড ও তারাসীমা এ্যাপারেলস লিমিটেডের বিরুদ্ধে গাজীখালী নদী দূষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের পর পরিবেশ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠান দুটির বর্জ্য পানিতে ফেলার বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে তরল বর্জ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরিবেশ অধিপ্তরের ঢাকার গবেষণাগারে পাঠায়। রাইজিং নীট টেক্সটাইল লিমিটেডের কারখানার বর্জ্যের টেস্টিং প্যারামিটারে দূষণের মাত্রা পাওয়া না গেলেও তারাসীমা এ্যাপারেলস লিমিডেটের বর্জ্যে পাওয়া গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া হতে গাজীখালী নদীর উৎপত্তি। এক সময় নদীতে পানি থৈ থৈ করত। চলত পাল তোলা নৌকা। নদীর স্রোতে ভেসে উঠত শুশুক। একদা খরস্রোতা গাজীখালী নদী দূষণে আজ মৃতপ্রায়। মৎস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত নদী আজ প্রায় মৎস্যশূন্য। ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে এই নদীর বিষাক্ত পানি। দূষিত ও পচা পানির দুর্গন্ধে টিকতে পারছে না নদী তীরের মানুষ। আক্রান্ত হচ্ছে নানা অসুখে।
মানিকগঞ্জের পরিবেশবাদী সংগঠক অ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বলেন, আইন ভঙ্গ করে যারা নদী দূষণ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। তারাসীমার বর্জ্যে দূষণের মাত্রা পাওয়া যাওয়ার পরও ব্যবস্থা না নেওয়া দুঃখজনক।
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে তারাসীমা এ্যাপারেলস লিমিটেডের ম্যানেজার (লোকাল ইস্যু) মো. মোখসেদুর রহমান হাওলাদার বলেন, কারখানাটি পুরোপুরি পরিবেশ বান্ধব। টেস্টিং প্যারামিটারে নানাবিধ কারণে ফলাফল ভিন্ন হতে পারে। কারখানাটি নদী দূষণের জন্য দায়ী নয়।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, জেলা প্রশাসন নদীর দূষণরোধে মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে। তারাসীমা এ্যাপারেলস লিমিটেডকে পরিবেশ অধিদপ্তর নোটিশ করেছে। জেলা প্রশাসনের মনিটরিং কমিটিও নদীর দূষণরোধে কাজ করছে। নদীতে ফেলা সকল প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে। নদী দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রথমবারের মতো নদী দূষণ করে থাকলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অন্তত জরিমানা করা উচিত ছিল। আর যদি একাধিকবার এ ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে জেল হওয়া উচিত ছিল। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে জেলা প্রশাসনের নতুন করে নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই বলে মনে করি। কারণ, পরিবেশ অধিপ্তরের পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে টেস্টিং প্যারামিটারে দূষণের মাত্রা রয়েছে।’