নোয়াখালীর চৌমুহনী- মাইজদী-সোনাপুর ১৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে। সড়কের সাড়ে চার কিলোমিটার (চৌরাস্তা-গাবুয়া) কাজ অনেকটাই শেষ। বাকি ৯ কিলোমিটার (মাইজদী বাজার-সোনাপুর) রাস্তার কাজও প্রায় ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। মূল সড়কে পিচ ঢালাইয়ের প্রাথমিক স্তরের কাজও শেষ হয়েছে ঈদুল ফিতরের আগে। কিন্তু সড়কের মাঝখানে এখনো নির্মাণ করা হয়নি সড়ক বিভাজক। আর এ কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। ফলে পথচারীদের রাস্তা পারাপার করতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চৌমুহনী-সোনাপুর চার লেন সড়কের চৌমুহনী চৌরাস্তা থেকে গাবুয়া এলাকা পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়কের মাঝখানে বিভাজক তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু গাবুয়া থেকে সোনাপুর পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়কে এখনো সড়ক বিভাজক তৈরী করা হয়নি। সড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল করায় বিশেষ করে সড়ক বিভাজক না থাকায় এক পাশের গাড়ি অন্য পাশে দিয়ে চলাচল করছে। এতে পথচারী ও ছোট গাড়ির আরোহীরা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ নোয়াখালী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে ১৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়। প্রথম দফায় এক বছরের জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে। দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ানো হয় ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে। তৃতীয় দফায় সময় বাড়ানো হয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে। সে অনুযায়ী আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
নোয়াখালী শহরের বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, গত ৮ এপ্রিল জেলা শহরের বালিকা বিদ্যানিকেতনের ছাত্রী কেয়া সড়ক বিভাজকের জন্য নির্ধারিত স্থানটি পার হচ্ছিলো। এ সময় দ্রুত গতির একটি পিকআপ গাড়ি তাকে চাপা দিয়ে উল্টে যায়। ওই ঘটনায় একজন মারা যায় ও তিনজন গুরুত্বর আহত হন। গত ১৭ মে বিভাজক না থাকায় বেপরোয়া গতির পিকআপ চাপায় নিহত হন জিতু নামে এক এনজিও কর্মী।
শাহনেওয়াজ নামে অপর একজন বলেন, সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হতেই ছোট বড় সব যানবাহন বেপরোয়া গতিতে চলতে শুরু করেছে। সড়ক বিভাজক না থাকায় এক পাশ থেকে গাড়িগুলো মুহূর্তেই আরেক পাশে দিয়ে যেতে শুরু করে। গাড়িগুলো প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়। আমাদের সন্তানরা স্কুল কলেজে যায়। তাদের প্রয়োজনের তাগিদে রাস্তা পার হতে হয়। আর এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি আমরা। তাই দ্রুত সড়কটির বিভাজক তৈরী করা প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা।
তানজিদা নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকেতে হয়। তাদের নিয়ে রাস্তা পারাপারের সময় অনেক সতর্ক থাকতে হয় আমাদের। কখন যে এক পাশের গাড়ি অন্য পাশে চলে আসে টের পাওয়া যায় না। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি তারা যেন দ্রুত সড়কে বিভাজক তৈরী করেন। তা না হলে যানবাহনের ছুটে চলার যে প্রতিযোগীতা তাতে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
সাঈদ হোসেন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যাচ্ছি। হঠাৎ আরেক প্রান্তের গাড়ি এ প্রান্তে চলে এসেছে। সড়কে বিভাজক না থাকায় এমনটা হচ্ছে। বিভাজক তৈরী হলে এক পাশের গাড়ি অপর পাশে যাওয়ার সুযোগও পাবে না।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নোয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাকিরুল ইসলাম বলেন, সড়ক বিভাজকের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্লক তৈরী করছে। আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে সড়কে বিভাজক বসানোর কাজ শুরু হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ করার জন্য তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।