বাগেরহাট জেলার দক্ষিণে সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার জন্য একাধিক প্রার্থী দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত অন্তত পাঁচ জন নেতা রয়েছেন যারা দলীয় মনোয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এদের মধ্যে শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ আসাদ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ইমরান হোসেন রাজিব, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম আকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম পলাশ মাহমুদ, সদ্য প্রায়ত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে একেএম মাহফুজ হোসেন রয়েছেন।
এদিকে, সাউথখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম লিটন মনোনয়ন পেতে লবিং-চালাচ্ছেন। প্রার্থীরা দলীয় মনোয়নের জন্য লবিং-গ্রুপিংয়ের পাশাপাশি ভোটারদের কাছে টানতে সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ ও লিফলেট বিতরণ করছেন বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধারণা, মনোনয়ন দৌঁড়ে শেখ আসাদ, ইমরান হোসেন রাজিব, নজরুল ইসলাম আকন ও প্রায়ত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে একেএম মাহফুজ হোসেন এগিয়ে রয়েছেন। এছাড়া দলীয় প্রার্থীর বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে দলীয় কোন্দলের সুযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তাফালবাড়ি এলাকার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জুয়েল বলেন, সাউথখালী ইউনিয়নে মাদক, চাঁদাবাজী, বাল্যবিবাহ, রাস্তাঘাট খারাপসহ নানা সমস্যা রয়েছে। যে ব্যক্তি এসব সমস্যা সামাধানে কাজ করবেন আমরা তাকেই ভোট দেব।
মো. হেলাল নামের অপর এক বাসিন্দা বলেন, আমরা এমন একজন চেয়ারম্যান চাই যিনি সবার পাশে থাকবেন। বিপদে-আপদে যাকে আমরা পাশে পাবো তেমন ব্যক্তিকে আমরা চেয়ারম্যান পদে দেখতে চাই। শরনখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম আকন বলেন, আমার পরিবারসহ বংশের সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের বিপদ-আপদে আমরা পাশে ছিলাম। এখন রাত দিন সব সময় দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছি। আশাকরি দল সবদিক বিবেচনা করে আমাকে মনোনয়ন দেবে।
দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ আসাদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সাউথখালীসহ বাগেরহাটের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। উপ-নির্বাচন উপলক্ষে প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছি। বিগত দিনে আমি যেহেতু মানুষের পাশে ছিলাম। সেই দিক বিবেচনায় দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশা করছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ইমরান হোসেন রাজিব বলেন, ছাত্রাবস্থা থেকেই আমি রাজনীতি করে আসছি। সবসময় এলাকার মানুষের বিপদ-আপদে ঝাপিয়ে পড়তাম। এলাকার মানুষ আমাকে পছন্দ করেন, আমিও এলাকার মানুষকে ভালোবাসি। দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। আশাকরি দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
এদিকে, সাউথখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম লিটন বলেন, স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করব। যদি নিরপেক্ষ ভোট হয়, তাহলে জয় আমাদেরই হবে।
শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে কেন্দ্র ও জেলা কমিটির নির্দেশ অনুযায়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সভা করে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, তাকে সাথে নিয়ে আমরা নৌকার বিজয়ে কাজ করবো।
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন বলেন, দায়িত্বরত চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার পরে আমরা পদটিকে শূন্য ঘোষণা করেছি। নির্বাচন কমিশনকে অবগত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা পেলেই তফসিল ঘোষণা করা হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৭ মার্চ খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মেল হোসেন মারা যান। ২০১১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা ১২ বছর তিনি এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।