মতামত

যুববান্ধব স্মার্ট বাজেট সময়োপযোগী

উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের এখন লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। যে লক্ষ্য নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট যুববান্ধব বাজেট তাই সময়োপযোগী।

তরুণ বয়সের পরবর্তী সময়ে মানুষ যুবক হয়ে জীবনের পরিপক্কতা অর্জন করেন। যুবকরা এমন একটি সময় বা মধ্যবর্তী অবস্থা অতিক্রম করেন, যখন তারা শক্তভাবে হাল ধরতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই তাই যুবক উন্নয়নে যথেষ্ট কার্যক্রম থাকা বাঞ্চনীয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট সরকার যুব উন্নয়নে তাই সর্বদাই অগ্রনী ভূমিকা রেখে চলেছেন। যুবকদের সার্বিক অগ্রগতি তথা সমৃদ্ধির স্বার্থে যুববান্ধব স্মার্ট বাজেট তৈরি সময়ের দাবি হওয়া উচিত।

বিভিন্ন সময়ে যুব সমাজের স্বার্থে নানামুখী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে বর্তমান সরকার। আলোচনা, গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমেও যুবকদের পর্যাপ্ত বাজেটের প্রয়োজনীয়তা বা এ সংক্রান্ত বিষয়ে বিশিষ্টজনরা ও অর্থনীতিবিদরা নানা সময়ে আলোচনা করেছেন। বাজেটে বেকার ভাতার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা; শিক্ষায় সমতায় জন্য শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে কম্পিউটার, স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা; শারীরিক প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, লৈঙ্গিক সংখ্যালঘু ও অন্যান্য প্রান্তিক যুবদের কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা; যুবদের স্বেচ্ছাসেবামূলক উদ্যোগে সহযোগিতার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া; কৃষি খাতের যুব উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা; যুব বিষয়ক গবেষণা ও উন্নয়নে ‘যুব উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠায় বরাদ্দ রাখা বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন বৈঠকে।

যুবকদের বেকারত্বকে অর্থনীতির একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি বিভিন্ন নীতিমালায়। জাতীয় যুবনীতি ২০১৭-এ যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়নি বলে মনে করা হয়। নীতিমালায় তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হলেও কোনো দৃশ্যমান পরিকল্পনা নেই। অবশ্যই অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদান বেশি হওয়ার কারণে কর্মসংস্থানের বড় উৎস হতে হবে এই খাতকে।

বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ (এসডিজি) অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর জন্য বর্তমান সরকার যুবকদের বিভিন্ন চাকরির সুযোগ তৈরি করছে। তাছাড়াও সুনির্দিষ্ট চাকরি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সরকার আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

কোভিড-১৯-এর ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত দেশ এবং দেশের অর্থনীতি। নিম্ন মধ্যবিত্ত ও সমাজের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সামনে জীবন-জীবিকার সংকট। এই মুহূর্তে তরুণ ও যুবক জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্যতম একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৯-এর প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪.৯৯ শতাংশ। তবে যুবসমাজের বেকারত্বের হার ১১.৯ শতাংশ, জাতীয় গড়ের আড়াইগুণেরও বেশি। মোট বেকারত্বের মধ্যে বেকার যুবকদের সংখ্যা ৭৯.৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি এবং অর্থনীতিবিদরা এখন ভবিষ্যদ্বাণী করছেন আসন্ন বছরগুলোতে এই হারটি লাফিয়ে উপরের দিকে উঠতে পারে।

২০১৯ সালের বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতি তিনজন স্নাতকের মধ্যে একজন বাংলাদেশে বেকার রয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির পরে আমরা কি এই সমস্ত বেকার যুবকদের পরিণতি সম্পর্কে কিছুটা হলেও কল্পনা করতে পারি?

বিশ্ব এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া ও অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলার জন্য লড়াই করছে এবং বাংলাদেশও এই লড়াইয়ে যুক্ত। এই বৈশ্বিক সংকট প্রতিটি ক্ষেত্রে কঠোর চ্যালেঞ্জ বয়ে এনেছে। শিক্ষা খাতসহ অন্যান্য খাত এবং বেকার যুবকদের আরও গভীর সমস্যায় ফেলেছে।

করোনার অভিঘাতে চাকরিচ্যুত হয়েছিল শতকরা ৩৬ জন। অনেকের চাকরি থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত বেতন-ভাতা পাননি। করোনার প্রথম চার মাসেই বেকারত্ব বেড়েছিল ১০ গুণ। আর্থিক সংকটে পড়া ৪৬ দশমিক ২২ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় ভেঙে এবং ৪৩ শতাংশের বেশি পরিবার আত্মীয়-স্বজনের সাহায্য-সহায়তার ওপর নির্ভর করে সংসার চালিয়েছে (বিবিএস, ২০২০)। তবে সংকটকালে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সার্বিক সুরক্ষা ও জীবন-জীবিকা নির্বাহের জন্য উন্নয়ন কার্যক্রম এবং জনবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল সরকার। স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতির চাকা চলমান রাখতে কিছুটা হলেও অবদান রেখেছিল।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ থেকে ২৪ বছর বয়সি যুব বেকারত্বের হার ছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ। বিআইডিএস এক গবেষণায় দেখিয়েছে, শিক্ষিত যুবকদের প্রায় ৩৩ শতাংশই ছিল বেকার। আইএলও ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের যৌথ প্রতিবেদন বলছে, করোনার কারণে বাংলাদেশে ১১ দশমিক ১৭ লাখ থেকে ১৬ দশমিক ৭৫ লাখ যুবক বেকার হতে পারেন।

আমাদের অর্থনীতি এখন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। গত দশকে ধীরে ধীরে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে দেশ ইতিবাচক অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তবে যুবদের বেকারত্ব আমাদের উন্নতি ও অগ্রগতির পথে কাঁটা না হয়ে দাঁড়ায় সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নও তরুণদের সম্ভাব্যতা এবং তাদের শ্রমশক্তি ও মেধার বিকাশ এবং কার্যকর ব্যবহারের ওপর নির্ভর করবে, কারণ মানবসম্পদ হলো আমাদের আমাদের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি। সুতরাং, মানবসম্পদ উন্নয়ন তথা যুব উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা প্রয়োজন৷ এ ব্যাপারে সবার সচেষ্ট হতে হবে।