‘বর্তমান সময়ে বিদ্যুতের সংকট চলছে। এই সংকটে আমরা সোলার প্যানেল ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু নরমাল যে সোলার প্যানেল রয়েছে সেটা এক জায়গায় একভাবে স্থির থাকে। ফলে সূর্যের আলোর শতভাগ শক্তি প্যানেলে সংরক্ষণ হয় না। যেকারণে আমরা সূর্যের আলো শতভাগ কাজে লাগাতে ‘স্মার্ট সোলার ট্র্যাকার’ নামে একটি প্রজেক্ট বানিয়েছি। এটি সূর্যের আলো যেদিকে যাবে সেদিকে এই সোলার প্যানেলটিও ঘুরবে। এতে করে সূর্যের আলোর শতভাগ প্রয়োগ নিশ্চিত হবে।’
কথাগুলো বলছিলেন বগুড়ার মাটিডালি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাইজা আক্তার।বগুড়ায় শুরু হওয়া দুইদিন ব্যাপী ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায়’ নিজেদের বানানো প্রজেক্ট নিয়ে এসে এভাবেই প্রজেক্ট সম্পর্কে বলছিলেন ফাইজা।
মেলায় ফাইজা আক্তারের মতো বগুড়ার বিভিন্ন স্কুলের ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা তাদের আধুনিক চিন্তায় আবিষ্কৃত প্রজেক্ট নিয়ে হাজির হয়েছেন।
বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইফতেখার মাহমুদ অর্ণব তৈরি করেছেন অটোমেটিক পোর্টেবল সোলার সিস্টেম। এই সোলার প্যানেলটিও সূর্যের আলোর সঙ্গে মুভ করতে পারবে।
অর্নব বলেন, ‘আমাদের যে সোলার প্যানেলগুলো বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায় সেগুলো মুভ করতে পারে না। ফলে অনেক সময় সৌরশক্তিকে সোলার প্যানেল কালেক্ট করা যায় না। পোর্টেবল সোলার সিস্টেমে এলডিআর সেন্সর লাগানো হয়েছে এবং নিচে সার্ভের মোটর লাগানো হয়েছে। ফলে এটার সূর্যের আলোর সঙ্গে মুভ করতে পারবে এবং ছায়ার কারণে বা সূর্যের আলো না থাকার কারণে এটি বন্ধ হয়ে যাবে না। চলতেই থাকবে।’
এসওএস হারম্যান মেইনার কলেজের শিক্ষার্থী একেএম সাদিক হাসান শীষ নিয়ে এসেছেন ‘অবজেক্ট ডিটেকটিভ ল্যাম্পপোস্ট’। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। রাস্তায় যেসব ল্যাম্পপোস্ট থাকে সেগুলো সব সময় জ্বালানো থাকে। তবে এই ল্যাম্পপোস্টটি কাজ করবে তখন যখন ল্যাম্পপোস্টটির নিচ দিয়ে কোন গাড়ি বা ব্যক্তি যাতায়াত করবে। এভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করবে ল্যাম্পপোস্টটি।
একই কলেজের শিক্ষার্থী আবু হুজাইফা রিশাদ বলেন, তিনি আদর্শ নগরায়ণের পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন। যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সাহায্যে উইনমিল এবং সৌর প্যানেলের সাহায্যে বিদ্যুৎ উদপাদন হচ্ছে। এই উৎপাদিত বিদ্যুৎ গিয়ে ব্যাটারিতে সংরক্ষিত হচ্ছে এবং সেখান থেকে তারের মাধ্যমে রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট এবং বাড়িতে সরবরাহ হচ্ছে। এর সঙ্গে আমরা আরেকটি কাজ করেছি, সেটি হচ্ছে আমরা জমিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। একটি সেন্সরের মাধ্যমে এটি পরীক্ষা করা হচ্ছে যে জমিতে পানি আছে কি নেই। যখন পানি থাকছে না তখন স্বয়ংক্রিভাবে জমিতে পানি আসছে। আবার যখন পানি পর্যাপ্ত হচ্ছে তখন নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই আমরা উন্নত নগরী করতে পারি এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে পারি।
রোববার (৪ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় বগুড়া জিলা স্কুলের বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম অডিটোরিয়ামে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম মেলার উদ্বোধন করেন। মেলার এবারের প্রতিবাদ্য ‘ইন্টারনেট আসক্তির ক্ষতি’।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আল মারুফের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞানের যথাযথ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দেশকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করবে। আজকের ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে দেশকে ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ইন্টারনেটের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কিন্ত এটাকে ভাল কাজে ব্যবহার করতে হবে। ছোট থেকে শিশুরা ইন্টারনেটে আসক্তি হয়ে যেন না পড়ে সে ব্যাপার অভিভাবক ও শিক্ষকদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের এ ব্যাপারে কাউন্সিলিং করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, জেলা শিক্ষা অফিসার মো. হজরত আলী।