সোনার অলঙ্কার ক্রয়ে ক্রেতার ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য। এই ভ্যাট প্রত্যাহার করে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১১টি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটি।
সোমবার (৫ জুন) রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে বাজুস কার্যালয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে বাজুসের সহ-সভাপতি ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, সংগঠনের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, সহ-সম্পাদক ও স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সমিত ঘোষ অপু, স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশন সদস্য সচিব পবন কুমার আগরওয়াল উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাগেজ রুলস সংশোধন এনেছে সরকার। সংশোধিত ব্যাগেজ রুলকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ জানিয়ে বাজুস জানায়, ব্যাগেজ রুলস সংশোধনের কারণে এদেশে সোনা চোরাচালান এবং মুদ্রা পাচার অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। কারণ ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিয়ে এর আগে অবাধে সোনার বার বা পিণ্ড বিদেশ থেকে দেশে প্রবেশ করছে। ব্যাগেজ রুলস সংশোধনের ফলে বৈধভাবে সোনা আমদানিতে উৎসাহিত করবে।
সোনার বারের মতো ব্যাগেজ রুলের আওতায় অলঙ্কার-গহনা আনার সীমা ১০০ গ্রাম থেকে কমিয়ে ৫০ গ্রাম করার প্রস্তাব করেছে বাজুস।
সরকারের সর্বশেষ সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশের সোনার বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৪০ টন। তবে প্রকৃত চাহিদা নিরূপণে সরকারের সমীক্ষা প্রয়োজন বলে জানান সংগঠনটি। বৈধভাবে সোনার চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে বড় বাধা কাঁচামালের উচ্চ মূল্য, অতিরিক্ত উৎপাদন ব্যয়, শিল্প সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির উচ্চ আমদানি শুল্ক জানিয়ে বাজুস জানায়, বর্তমানে জুয়েলারি শিল্পের প্রায় সব ধরনের পণ্য ও যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্ক ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ। যা স্থানীয় অন্যান্য শিল্পে আরোপিত শুল্কের চেয়ে অনেক বেশি। এতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি ৫ শতাংশ হারে উচ্চ ভ্যাট হার ও অতিরিক্ত উৎপাদন খরচের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে দামের পার্থক্য হচ্ছে। এতে ক্রেতা হারাচ্ছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট ছোট জুয়েলারি ব্যবসায়ী।
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করতে জুয়েলারি খাতে আরোপিত শুল্ককর ও ভ্যাট হার কমানো এবং আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া দরকার। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১১টি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি করছে বাজুস।
এর মধ্যে রয়েছে সোনার অলঙ্কার, রূপা বা রূপার অলঙ্কার বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাট হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা, ইডিএফ মেশিন জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে না বসিয়ে কাউকে হয়রানি করা যাবে না। অপরিশোধিত আকরিক সোনায় আরোপিত সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্তসাপেক্ষে ১ শতাংশ নির্ধারণ করা। আংশিক পরিশোধিত সোনার সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসি ধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্ক হার ৫ শতাংশ করা। হীরা কাটিং এবং প্রক্রিয়াজাত করণের উদ্দেশ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা আমদানি করা রাফ ডায়মন্ডের নতুন শুল্ক হার নির্ধারণ। সোনা পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ।
সোনার অলঙ্কার প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে আমদানি করা কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সব প্রকার শুল্ক কর অব্যাহতি দেওয়াসহ ১০ বছরের জন্য কর অবকাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছে বাজুস। বৈধভাবে সোনার বার, সোনার অলংকার, সোনার কয়েন রপ্তানি উৎসাহিত করতে কমপক্ষে ২০ শতাংশ করার শর্তে, রপ্তানিকারকদের মোট ভ্যালু এডিশন সহ এর ৫০ শতাংশ হারে আর্থিক প্রণোদনা দাবি জানিয়েছে বাজুস।