লিজ বা ব্যক্তি মালিকানায় নয়, বন্ধ সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু ও খালিশপুর এবং দৌলতপুরসহ ৫টি পাটকলের শ্রমিকসহ সব পাটকলের শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা ঈদ উল আজহার আগেই পরিশোধের দাবি জানিয়েছে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ।
শনিবার (১৭ জুন) বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে জাতীয় পাট কনভেনশনে এ দাবি জানানো হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক পরিষদের আহবায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা।
কনভেনশনে বক্তারা বলেন, করোনাকালে যখন অসংখ্য মানুষ কর্মহীন, খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে বিপর্যস্ত, যখন বিশ্ব জুড়ে একদিকে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রগুলো মজবুত করার চেষ্টা চলছে, যখন পরিবেশবান্ধব শিল্প ও অর্থনৈতিক তৎপরতাকে গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ বাড়ছে ঠিক সেই সময় ২০২০ সালের ২ জুলাই দেশের প্রধান ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকার মিল বন্ধের দুইমাসের মধ্যে সব পাওনা পরিশোধের অঙ্গীকার করলেও এখন পর্যন্ত অনেক শ্রমিক তাদের বকেয়া পাওনা পায়নি। খুলনার খালিশপুর জুট মিল ও দৌলতপুর জুট মিল, সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিল এবং চট্টগ্রামের কেএফডি ও আর আর জুটমিলের শ্রমিকরা এখনো বকেয়ার কোনো টাকা পায়নি। এছাড়াও বিভিন্ন মিলের শ্রমিকরা যাদের মামলা আছে তাদের দ্রুত মামলা নিস্পত্তি করে বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না। অনেকে সঞ্চয়পত্রের কাগজ এখনো পাননি। ফলে শ্রমিকেরা উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
মিলগুলোর স্কুলের ছাটাইকৃত শিক্ষক-কর্মচারীরা অনেক কষ্টে আছেন। অন্যদিকে উৎপাদন বন্ধ থাকার পরেও দুর্নীতিবাজ বিজেএমসি ও মিলের ২ হাজার ৫১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সবেতনে বহাল তবিয়তে আছেন। সরকার তাদের জন্য বছরে বেতন বাবদ প্রায় ১৪০ কোটি টাকা প্রদান করছে।
বক্তারা বলেন, পাট চাষ ও পাটশিল্প আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। বাংলার পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হচ্ছে পাট ও পাটশিল্প। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানসহ বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের সঙ্গে পাট শিল্পের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে দেড় যুগ পাট ও পাটজাত পণ্যই ছিল প্রধান রপ্তানিকারক পণ্য। আজও আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে পাট ও পাটশিল্প। এই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার সংগ্রাম গড়ে তোলা আমাদের একটা জাতীয় দায়িত্ব।
তারা বলেন, আমাদের পাটশিল্পের ক্রম অবনতির বিপরীতে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটশিল্পের অগ্রযাত্রার ইতিহাস। বাংলাদেশে মেশিনপত্র একবারও নবায়ন ও আধুনিকায়ন করা হয়নি। ভারতে নবায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০১০ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিলো ম্যান্ডেটরি প্যাকেজিং অ্যাক্ট। এতে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে পাটের ব্যবহার বাড়ানোর নির্দেশনা ছিল । সরকার সেই অ্যাক্ট বাস্তবায়নে কখনোই মনোযোগী হয়নি।
তারা বলেন, মাত্র ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের আধুনিকায়ন করা সম্ভব। সরকার তা না করে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে কারখানা বন্ধ করেছে। উৎপাদন বন্ধ রেখে বিজেএমসি ও মিল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদান করছে। ২৬টি পাটকলের জায়গা-জমি-রাস্তা-গোডাউন-নদীরঘাট এবং যন্ত্রপাতির বাজারমূল্য প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। লোকসানের অজুহাতে জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে লিজ ও পিপিপির নামে রাষ্ট্রের এই সম্পদ তুলে দেওয়া হচ্ছে ব্যক্তির হাতে।’
নাগরিক পরিষদের সচিব এস এ রশীদের সঞ্চালনায় কনভেনশনে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সিপিবি নেত্রী সুতপা বেদজ্ঞ। কনভেনশনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
খুলনা জেলা সিপিবির সভাপতি ডা. মনোজ দাশ, জেলা বাসদের আহবায়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, মোজাম্মেল হক খান ছাড়াও বন্ধ ২৬টি পাটকলের আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা বক্তব্য রাখেন।