দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ঈদ করতে বাড়িতে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন মানবতা বিরোধী মামলার দুই আসামি। রোববার (২৫ জুন) বিকেল ৫টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মাসুম আহমেদ ভুঁঞা এতথ্য জানান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বাগুতা গ্রামের মৃত আব্দুল জাব্বারের ছেলে মো. হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেম (৬৫) ও ফুলপুর উপজেলার পশ্চিম বাখাই গ্রামের মৃত বসির উদ্দিন মন্ডলের ছেলে মাহাবুব আলম মন্ডল (৭০)।
পুলিশ সুপার মাসুম আহমেদ জানান, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের বগাপোতা গ্রাম থেকে মো. হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই দিনে ময়মনসিংহ নগরীর তিনকোনা পুকুর পাড় এলাকা থেকে মাহাবুব আলম মন্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার পর থেকে তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পলাতক ছিলেন।
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি আসামিরা ঈদ করতে বাড়িতে আসেন। এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের সোমবার (২৬ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করা হবে।
পুলিশ সুপার বলেন, মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, মো. হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেম আলবদর সদস্য ছিলেন। তার সঙ্গী ছিলেন আরও ১৫ থেকে ১৬ জন। ১৯৭১ সালের আশ্বিন মাসের ২৫ তারিখে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ হোসাইন আহমদের (মৃত) নির্দেশে হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেমসহ ১৫/১৬ জন জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সোহাগী বাজারে হামলা চালিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করেন। ওই দিন উপজেলার সরিষা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক তহসিলদার ও তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মো. নূরুল হক ওরফে তারা মিয়ার বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন।
একই দিন দুপুর ২টার দিকে অভিযুক্ত রাজাকাররা একই বাজার থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থক হিন্দু ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র করে অপহরণ করে আঠারবাড়ি পকিস্তান আর্মি ক্যাম্পে আটক রাখে এবং পকিস্তান আর্মির সহায়তায় অমানুষিক নির্যাতন করে তাকে হত্যার পর মরদেহ গুম করে। পরবর্তীতে ওই বছরের ২৭ কার্তিক বিকালে আওয়ামী লীগ নেতা তারা মিয়াকে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর তাঁর মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, মাহাবুব আলম মন্ডল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন তিনি।
১৯৯০ সালে মাহাবুব আলম মন্ডল কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। ১৯৯০-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বিএনপি'র ফুলপুর সদর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১২-১৪ সালে তিনি ফুলপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামের আমীর হিসেবে মনোনীত হন এবং গোপনে নিজের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড অব্যহত রাখেন।
মাসুম আহমেদ ভুঁঞা বলেন, ১৯৭৩ সালের আইন অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মাহাবুব আলম মন্ডল বিরুদ্ধে মামলা হয়। একই আইনে ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মো. হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেমের বিরুদ্ধে মামলা হয়।