মোটরসাইকেলের পেছনে লোহার ফ্রেমে চারটি ফ্লাস্ক। সঙ্গে কাপ, পানিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী। সামনে-পেছনে সাঁটানো ঘুড়ি প্রতীকের দুটি পোস্টার। পোস্টারে আগামী ১৭ জুলাই এই প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান। প্রার্থী অন্য কেউ নন, মোটরসাইকেলের মালিক রনি আহম্মেদ নিজেই।
মোটরসাইকেলে চড়েই রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়ন ও কাটাখালী পৌর এলাকায় ফেরি করে চা বিক্রি করেন রনি। এলাকার লোকজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক। তাই ঘনিষ্ঠজনদের পরামর্শে হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী হয়েছেন তিনি।
রনির বাড়ি হরিয়ানের দহপাড়া গ্রামে।
গতকাল শনিবার (৮ জুলাই) তেঁতুলতলা এলাকায় চা বিক্রি করতে করতেই গণসংযোগ করতে দেখা গেল রনিকে। চা পরিবেশনের পর পরই ভোটারদের হাতে লিফলেট তুলে দিলেন তিনি। বললেন, ‘১৭ জুলাই ভোট। আমার জন্য দোয়া করবেন।’
গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মান্নান জানান, রনি এলাকার সবার পরিচিত মুখ। মানুষের আপদে-বিপদে পাশে থাকেন তিনি। কারও সঙ্গে কখনোই দুর্ব্যবহার করতে দেখিনি তাকে। টাকা না থাকলেও তিনি চা খাওয়ান। সদস্য পদে তার ওয়ার্ডে মোট ছয়জন প্রার্থী রয়েছেন। তবে সবার পরিচিত চায়ের ফেরিওয়ালা রনি প্রার্থী হয়েছেন দেখে সবাই খুশি। তার ভোটের ফলও ভাল হওয়ার কথা।
রনি আহম্মেদ বলেন, ‘আগে তেঁতুলতলা বাজারে তার ভাড়া নেওয়া একটি চায়ের দোকান ছিল। করোনার সময় লকডাউনে দোকানটি বন্ধ হয়ে যায়। দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে তখন হিমশিম খেতে হয় আমাকে। তাই দোকান না খুলেই মোটরসাইকেলে করে তিনি চা বিক্রি করতে শুরু করি। আমার ভ্রাম্যমাণ চা দোকান অল্পদিনেই সাড়া ফেলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার সময় লোকজন চা খাওয়ার জন্য তাকে ফোন করতে শুরু করেন। আশপাশের যে কোনো এলাকা থেকে ফোন এলেই আমি গিয়ে চা খাওয়াতাম। এখনও হরিয়ান ইউনিয়ন ও কাটাখালী পৌর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা হিসেবে গিয়ে আমি চা বিক্রি করি। দিনে ৩৫০ থেকে ৪০০ কাপ পর্যন্ত চা বিক্রি হয়। এতেই সংসার চলে।’
নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে রনি বলেন, ‘নির্বাচন করার ইচ্ছা আগে থেকেই ছিল। এই ইউনিয়নে ১২ বছর পর নির্বাচন হচ্ছে। পাঁচ বছর আগে একবার নির্বাচনের কথা উঠলেও হয়নি। তখন একবার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এবার নির্বাচন হচ্ছে, লোকজনও উৎসাহ দিল। তাই দাঁড়িয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। নির্বাচিত হলেও চায়ের ব্যবসা ছাড়ার কোনো ইচ্ছা নেই। কারণ ইউপি সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা বেশি না। ভোট করছি মানুষের পাশে থাকার জন্য। আশা করি নির্বাচিত হব। নির্বাচিত হলেও ব্যবসা করতে হবে। কারণ, আমি গরিব মানুষ। সংসার চালাতে হবে। চায়ের ব্যবসা করে সংসার ভালোই চলে। তাছাড়া এই ব্যবসা করলে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো থাকে। তাই এটা ছাড়তে চাই না।’
আগামী ১৭ জুলাই হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ছয়জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৯ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৫১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ভোটারদের মাঝে আলোচনার জন্ম দিয়েছে চা বিক্রেতা রনির প্রার্থী হওয়া।