খেলাধুলা

নিজেদের মন্ত্রে আফগান জুজু কাটাতে মরিয়া বাংলাদেশ

গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির আঁচড় পেয়ে চা-বাগন যেন আরও সজীব হয়ে উঠছে। সেই সবুজের কোলঘেষে গড়ে ওঠা নয়নাভিরাম সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পথ ধরতেই দেখা মিললো রাজ্যের ভিড়। টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে দীর্ঘ লাইন। সাম্প্রতিক ফাঁকা গ্যালারির কথা ভাবলে দর্শকদের এই আগ্রহ কিন্তু আনন্দদায়ক বটে।

শুক্রবার ছুটির দিন খেলা বলে কথা। গ্যালারিতে বইতে পারে গণ-জোয়ার। তাইতো আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসান দর্শক নিয়ে এক প্রশ্নে বলছিলেন, ‘(দর্শকরা) সাপোর্ট করবে। বাংলাদেশের খেলা হচ্ছে। বাংলাদেশকে ছাড়া কাকে সাপোর্ট করবে।’

সিলেটে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। এই আফগানবধে বাংলাদেশের বড় বাধা রশিদ-মুজিবদের ঘূর্ণিজাদু। এটাও স্পষ্ট বোলিং আক্রমণের কারণেই মূলত প্রতিপক্ষ অধিনায়কের সমীহ পাচ্ছে সফরকারী দল। তবে বাংলাদেশ আলাদা কাউকে নিয়ে ভাবছে না। নিজেদের সেরাটা দিয়ে ঘায়েল করার মন্ত্রে নামবে বাংলাদেশ। 

‘আমার কাছে মনে হয়, আমরা দল হিসেবে তখনই ভালো খেলি যখন অন্য দলকে নিয়ে চিন্তা না করি। আমরা যখন ওপেন মাইন্ডেড থাকি, কিভাবে মেকাপ করা যায় সেভাবে চিন্তা করি এবং নিজের জায়গা থেকে কিভাবে ১০-২০ শতাংশ উন্নতি করতে পারি সেই চিন্তাগুলো করি। সেগুলো তখন পারফর্ম বেশি করে’ —বলছিলেন সাকিব। 

চলতি বছরে বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছিল। সেই হিসেবে আফগানরাতো নস্যি। কিন্তু বাস্তববাদী সাকিব আল হাসান জানিয়ে দিয়েছেন, আফগান চ্যালেঞ্জ কঠিন হতে পারে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের চেয়েও। কন্ডিশনের কারণে ইংলিশরা বাংলাদেশের মাটিতে সুবিধা করতে পারেনি। কিন্তু এই কন্ডিশনতো রশিদ-মুজিবদের কাছে মুখস্থ।

উইকেট কেমন? ‘স্পিনাররা সুবিধা পেলে ভালো’ বলেই হাসি দিলেন রশিদ খান। নিজেসহ দলে যখন মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবী কিংবা নূর আহমেদের মতো স্পিনাররা থাকবেন যে কোনো অধিনায়কই স্পিন উইকেট চাইবেন, এটা প্রত্যাশিত। রশিদ খানও এর ব্যতিক্রম নয়।

ওয়ানডে সিরিজে আফগান স্পিনত্রয়ী বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছে। সর্বোচ্চ ৪ উইকেট করে নেন রশিদ খান-মুজিব উর রহমান। মোহাম্মদ নবীর ঝুলিতে জমা হয় ৩ উইকেটে। এদিকে পেসার ফজল হক ফারুকি একাই নেন ৮ উইকেট। সব মিলিয়ে আফগান বোলিং বিভাগ টি-টোয়েন্টিতেও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু সাকিব প্রতিপক্ষ কি করতে পারে না ভেবে নিজেরা কি করতে পারবেন সেটি নিয়েই বেশি ভাবছেন।

সিরিজ জয়ের প্রত্যাশা রেখে বাংলাদেশ অধিনায়ক জানিয়েছেন চ্যালেঞ্জের কথা, ‘শেষ দুই হোম সিরিজে আমরা ভালো খেলেছি। এটা আমাদের জন্য নতুন একটা চ্যালেঞ্জ। আফগানিস্তান অবশ্যই খুবই ভালো দল। চেষ্টা থাকবে, আমরা যেভাবে আমাদের ক্রিকেটটা খেলছি, যেভাবে উন্নতি করছি, সেভাবে প্রতিটা ম্যাচে পারফর্ম করার জন্য।’

এদিকে রশিদ খানের কাছে এটি যেন প্রস্তুতির মঞ্চ, ‘আমি দলীয়ভাবে চিন্তা করি। আমাদের জন্য এটি প্রস্তুতি। আমার কথা বলতে গেলে, আমি ফল নিয়ে চিন্তা করি না। এই বার্তা স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে। জিততে হবে এমন কিছু ঠিক করে দেওয়া যাবে না। আমার কাছে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রস্তুতি এবং বোলিং, ব্যাটিং কিংবা ফিল্ডিং যেটাই হোক তা শতভাগ দেওয়া।’

এখন পর্যন্ত দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে জয়ের পাল্লা ভারি আফগানদের। ৯ ম্যাচে ৬টিতে জয়। বাকি ৩টিতে বাংলাদেশ। বড় বাধা হতে পারে সিলেটের বৃষ্টি। পূর্বাভাস অনুযায়ী সন্ধ্যার পরই বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের কথা বলা হয়েছে। তাইতো একাদশ হবে বৃষ্টির উপর নির্ভর করে। অর্থ্যাৎ ২০ ওভার খেলা হলে একরকম পরিকল্পনা আবার কার্টেল ওভার হলে আরেকরকম। উইকেট নিয়েও স্পষ্ট ধারণা দেননি কোনো অধিনায়ক। দুজনই আশা করছেন ভালো উইকেটের।