চাঁপাইনবাবগঞ্জে নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা একটি কলেজ ও মাদরাসা সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে কলেজটি নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিতে পুরোদমে কাজ চলছে। স্থানীয়রা বলছেন, উজানের ঢল আর আষাঢ়ের বর্ষণে বাড়ছে পদ্মার পানি। ফলে দিনদিন আগ্রাসী হয়ে উঠছে নদীটি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে পদ্মা ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। দীর্ঘ দিন ধরে পদ্মা তার ধ্বংসযঙ্গ চালিয়ে আসছে। নদী ভাঙনের কারণে গত এক দশকে ভিটামাটি হারিয়েছেন প্রায় হাজার খানেক মানুষ। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা আর ঘুরে দাঁড়ানো প্রবল ইচ্ছায় পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা নতুন করে স্বপ্ন দেখলেও, প্রতি বছরে নদী ভাঙনে তাদের সেই স্বপ্ন পানিতে মিশে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের চরপাঁকা ঈদগাহ থেকে সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের ছাব্বিশরশিয়া পর্যন্ত নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আতঙ্কে দিন অতিবাহিত করছেন। ইতোমধ্যে চারপাঁকার তেররশিয়া গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটামাটি হারিয়ে বিশরশিয়ার নামোচর এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। সদর উপজেলার নারায়নপুর আদর্শ মহা বিদ্যালয় ও নারানপুর দারুল হুদা আলিম মাদরাসা সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে মহা বিদ্যালয়টি সরিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হবে মাদরাসা ভবন ভাঙার কাজ।
আদর্শ মহা বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, নদী ভাঙনের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে কলেজটি ধুলাউড়ি এলাকা থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দরপত্রের আহ্বান করে কিছু কিছু সরঞ্জামদি বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রায় ৫০০ মিটার দূরের এলাকা বাগপাড়ায় কলেজটি অস্থায়ী ভাবে স্থাপন করে কার্যক্রম শুরু করা হবে।
নারানপুর দারুল হুদা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ জানান, নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে মাদ্রাসাটি সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। নদী ভাঙনের তীব্রতা খুবই। সময় থাকতে থাকতেই মাদরাসাটি সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হবে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বর্তমান স্থান ধুলাউড়ি ঘাট থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরের ঈদগাহ পাড়ায় স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নারায়নপুর ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কর্মকর্তা সপন আলী বলেন, চলতি বছরের মধ্যে শিবগঞ্জের দক্ষিণ পাঁকা থেকে ধুলাউড়ি ঘাটের কাছাকাছি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী ভাঙন হয়েছে। এতে কৃষকের আবাদি জমি, মানুষের ভিটামাটি সবই নদীতে বিলিন হয়েছে। পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা নদী ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন।
যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ময়েজ উদ্দিন বলেন, পাঁকা ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের ভাঙন প্রতিরোধের প্রায় তিন মাস আগে ৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা অর্থমন্ত্রণালয়ে এই প্রকল্পের কাগজপত্র দাখিল করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি পাস হয়নি। পদ্মা নদীর তীরে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব দিয়ে ভাঙন রোধে প্রস্তাবিত প্রকল্পের ৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে বলেও জানান পাউবোর এই কর্মকর্তা।