ফজল হক ফারুকির স্লোয়ার বাউন্সার। পুল শটে মিডউইকেট অঞ্চলে গ্যালারিতে আছড়ে ফেললেন তাওহিদ হৃদয়। বাংলাদেশি টপ অর্ডারদের ঘুম হারাম করা ফারুকি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন। হাত দিয়ে নাক-মুখ খুটছেন। এক বল পরেই জায়গা থেকে সরে গিয়ে শামীম হোসেন পাটোয়ারি প্যাডেল শটে বল পাঠিয়ে দিলেন বাউন্ডারির বাইরে। এবারও ফারুকি স্তব্ধ!
নয়ানাভিরাম সিলেটে সবুজের ক্যানভাসে হৃদয়-শামীমের ব্যাট ছড়িয়েছে মুগ্ধতা। চোখ ধাঁধানো সব শটে গেয়েছেন তারুণ্যের জয়গান, দিয়েছেন পর্বত সমান সাহসিকতার প্রমাণ। ৬৪ রানে যখন ৪ উইকেট নেই, তখন কেউ হয়তো ভাবেনি বাংলাদেশ শেষে জয়ের হাসি হাসবে। কিন্তু হৃদয় যে বিজয়ের মশাল নিয়ে ছুটছেন কে জানতো! নিজের বিশ্বাস ছড়িয়ে দিয়েছেন সতীর্থের মাঝেও, ‘শামীমকে একটি কথাই বলেছিলাম, এরকম ম্যাচ আমরা অনেক জিতিয়েছি। হতে পারে সেটা ঘরোয়াতে।’
হারের শংকা উড়িয়ে হৃদয়-শামীমের ৪৩ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়ে দিয়েছে জয়ের ভিত। করিম জানাতের হ্যাটট্রিকে যখন আবার তীরে এসে তরি ডোবার শংকা ঘিরে ধরে, তখন পেসার শরিফুল ইসলাম দারুণ কাটে নিমিষেই এনে দেন উল্লাস, উচ্ছ্বাস।
কদিন ধরে বেশ আলোচনা হচ্ছে, বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ম্যাচেও চলছে দর্শক খরা। কিন্তু সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে তিল ধারণে ঠাই ছিল না। শুক্রবার ছুটির দিন বলে উপচেপড়া ভিড়। গগণবিদারি গর্জনে কেঁপেছে স্টেডিয়ামের গ্যালারি। সব মিলিয়ে সাকিব আল হাসানের দলও উপহার দিয়েছে দারুণ ক্রিকেট। সঙ্গে শ্বাসরুদ্ধকর, রোমাঞ্চকর এক জয়।
দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে ফিল্ডিং নেয় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ৪০ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে বল হাতে দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ। ম্যাচের সময় জত গড়ায় আফগানদের চেপে ধরে বাংলাদেশ। কিন্তু বাঁধ দাদেন মোহাম্মদ নবী। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আজমতুল্লাহ ওমরজাইকে সঙ্গে নিয়ে যোগ করেন ৩১ বলে ৫৬ রান। সেই জুটি আফগানদের দেড়শ পার করে নিয়ে যায় চ্যালেঞ্জিং স্কোরে (১৫৪/৭)। শেষ চার ওভারে তারা যোগ করে ৫৩ রান! হারিয়েছে ২ উইকেট। নবী ৫৪ রান করে অপরাজিত থাকলেও আজমতুল্লাহ ১৮ বলে ৩৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন।
বল হাতে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন অধিনায়ক সাকিব। বাকি ৫ বোলার নেন ১টি করে উইকেট। তিন পেসার-তিন স্পিনার নিয়ে খেলতে নেমেছিল লাল সবুজের দল, বল হাতে কেউই খরুচে ছিলেন না। ৪ ওভারে সর্বোচ্চ ৩১ রান দেন মোস্তাফিজুর রহমান।
রান তাড়া করতে নেমে কাভারে দারুণ চারে ফারুকি জুজু কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রনি তালুকদার। এক বল পরেই বোল্ড হয়ে রনি ফেরেন সাজঘরে। পাওয়ার প্লের আগে-পরে বাংলাদেশ হারায় নাজমুল হোসেন শান্ত (১৪) ও লিটন দাসের (১৮) উইকেট। ৭.২ ওভারে আসা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে মিনিট পনেরো বন্ধ থাকে খেলা। পুনরায় খেলা শুরু হলে হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে সাকিব আক্রমণের আভাস দেন। কিন্তু সাকিব ১৯ রানে থেমে যান। এরপর শুরু হয় হৃদয়-শামীমের দুর্দান্ত জুটি। যেটি আফগানদের ছিটকে দেয় ম্যাচ থেকেই। হৃদয় ৩২ বলে ৩টি চার ও ২টি ছয়ে ৪৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে হয়েছেন ম্যাচসেরা। শামীম আউট হন ৪ চারে ২৫ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলে।
শেষ ওভারে করিম জানাতের প্রথম বলে দারুণ এক শটে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয়ের কাছে নিয়ে যান মেহেদি হাসান মিরাজ। ৬ বলে ৬ থেকে হয়ে যায় ৫ বলে ২। এরপর করিম ৩ বলে ফেরান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদকে। তাসকিন খোঁচা দিয়ে আউট হলেও মিরাজ-নাসুম শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ফেরেন সাজঘরে। শেষে শরিফুলের ব্যাট থেকে আসে শ্বাসরুদ্ধকর জয়।
আফগানদের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজ হারের ক্ষত এখনো শুকায়নি। এর মধ্যে এমন জয় নিশ্চয় স্বাগতিক শিবিরে বইবে সুখের হাওয়া। তাইতো ম্যাচ শেষে হৃদয় বলছেন আত্মবিশ্বাস পাওয়ার কথা।
‘এই ধরনের ম্যাচ যার সঙ্গেই জিতি না কেন, আত্মবিশ্বাস প্রতিটি খেলোয়াড়কেই দেবে। কারণ, এরকম ম্যাচ কমই হয়। আমি যেহেতু ছিলাম, এরকম জায়গা থেকে ম্যাচ শেষ করে আসতে পেরেও অনেক ভালো লাগছে। কারণ এরকম পরিস্থতি সবসময় আসে না। যখন এরকম সুযোগ আসে, তখন এটা শেষ করতে পারাটার লক্ষ্য প্রতিটি ব্যাটসম্যানের থাকে। সেটা করতে পেরে ভালো লাগছে।’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে আশা বাড়িয়েছে তারুণ্যের মিশেলের গড়া এই দল। আফগানদের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর এই জয়ে সেই আশাকে বিশ্বাসে রুপান্তর করতে যাচ্ছে।