খেলাধুলা

‘হারমানপ্রীতের আচরণে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছে বোর্ড’ বিসিবিকে বিসিসিআই

বাংলাদেশ-ভারত ওয়ানডে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচের দিন ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তাকে সম্মান করে বিসিবি খেলা দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তাকে না দেখে ভারতের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কাউর বলেছেন, ‘ভারতের হাই কমিশনার এখানে আছেন এবং আশা করেছিলাম, তাকেও আপনারা এখানে আমন্ত্রণ জানাবেন। তবে সমস্যা নেই।’

এদিন মাঠে নানা-রকমের অসাদাচরণ ঘটানো হারমানপ্রীতের এমন বক্তব্যে উপস্থিত বিসিবি কর্তাদের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার (২২ জুলাই) সিরিজ ড্রয়ের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ছিলেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস, গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুব আনাম, নারী বিভাগের চেয়ারম্যান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ মিঠু, নারী বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান নাজীব আহমেদ প্রমুখ।

হারমানপ্রীত-নিগার সুলতানা জ্যোতির হাতে ট্রফি তুলে দেন মাহবুব আনাম। বাকিরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু হাইকমিশনারকে এখানে জড়ানোয় বিসিবি বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। এ ছাড়া এর আগে ম্যাচে আউটের সিদ্ধান্ত মেনে না নিতে পেরে স্ট্যাম্প ভাঙা, আম্পায়াকে উদ্দেশ্য করে অপ্রীতিকর শব্দ উচ্চারণ, দর্শকদের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানো, ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনের সময় বাংলাদেশ দলকে উদ্দেশ্য করে কটু কথা বলাসহ এদিন হারমানপ্রীত সীমা ছাড়িয়ে গেছেন।

সবকিছু মিলিয়ে ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড অব ইন্ডিয়াকে (বিসিসিআই) মৌখিকভাবে হারমানপ্রীতের এমন কীর্তি সম্পর্কে অবহিত করে বিসিবির দায়িত্বশীল এক কর্তা। মাঠে অপ্রীতিকর আচরণসহ শেষে হাই-কমিশনারকে টেনে আনায় বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি বিসিসিআইও। কারণ, আয়োজক দেশই মূলত ঠিক করে থাকে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে কে থাকবে না থাকবে। বিসিবির এক পরিচালক রাইজিংবিডিকে বিষয়গুলো নিশ্চিত করেন।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সেই পরিচালক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘হারমানপ্রীত একদিনেই ছয়-সাতবার অসাদাচরণ করেছে মাঠে। বিশেষ করে একজন অধিনায়কের কাছে এটা আশা করা যায় না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এরকম কখনো হয়েছে কী না আমার জানা নেই। বিসিসিআইয়ের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারাও অবাক এমন আচরণে।’

‘হাইকমিশনারকে টেনে আনায় আরও বিরক্ত বিসিসিআই। পুরস্কার বিতরণীতে কে থাকবে না থাকবে সেটা ঠিক করবে আয়োজক দেশ। অথচ হারমানপ্রীত হাইকমিশনারকে মঞ্চে আসার কথা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সে এটা বলার কে? দুই দেশের বোর্ডের মধ্যে সুন্দর একটা সম্পর্ক। হাইকমিশনারকে আমরা সম্মান করে ডেকেছি। কিন্তু সে এখানে তাকে জড়িয়ে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। বিসিসিআই-এরও কথা সে এমন করতে পারে না’ -আরও যোগ করেন বিসিবি’র এই পরিচালক।

ম্যাচ শেষ হওয়ার তিনদিন হতে চললেও এখন পর্যন্ত হারমানপ্রীতের শাস্তির বিষয়টি ঘোষণা দেয়নি আইসিসি। যেকোন দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ম্যাচ রেফারির রিপোর্ট অনুযায়ী শাস্তি দিয়ে থাকে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে ইতোমধ্যে ক্রিকেট বিষয়ক ভারতীয় কয়েকটি ওয়েবসাইটে সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে, হারমানপ্রীত দুই ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন। এদিকে বিসিবিকে মৌখিকভাবে বিসিসিআই জানিয়েছে, তারা আইসিসি কি শাস্তি দেয় সেটা দেখবেন এ ছাড়া ম্যানেজারের রিপোর্ট অনুযায়ী বিসিসিআই-এর প্রটোকল অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে।

বিসিবির পরিচালক বলেন, ‘ভারতের বোর্ডকে বলেছি, অধিনায়কের এমন আচরণে আমরা লজ্জিত। তার মধ্যে স্পোর্টসম্যানশিপ একেবারে দেখা যায়নি। তারা (বিসিসিআই) বলছে এই কারণে তারা অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছে। ম্যানেজার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে তারা। এরপর তাদের আভ্যন্তরীণ নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। আর আইসিসি থেকে যদি বড় শাস্তি হয় তাহলে হয়ে গেলো।’

আম্পায়ারিং, ডিআরএস নিয়ে অভিযোগ তোলা নিয়েও কথা বলেনে বিসিবির এই পরিচালক। তিনি জানান সিরিজের আগে দুই দেশের বোর্ড এবং আইসিসির মধ্যমে অনুমোদিত হয়েই ঠিক হয়েছে কারা অফিসিয়াল থাকবেন। হারমানপ্রীতরাতো সেটি আগে থেকেই জানতো, সিরিজে কে আছে আর কী নেই। বাকি পাঁচ ম্যাচে (টি-টোয়েন্টি সিরিজসহ) তাদের কোনো সমস্যা হয়নি, শেষ ম্যাচে কেন হলো?