রূপের জেলা সুনামগঞ্জে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। দূরে মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের ঝর্ণা থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ পানি পর্যটকদের মন ভুলিয়ে দেয়। তাই বর্ষাকাল এই হাওরের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটক। তবে, সেই সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে মহাবিপাকে পড়তে হয় পর্যটকরা। অনেকেই প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে পারেন না বাড়িতে। টাঙ্গুয়ার হাওরের ‘মরণফাঁদ’ হয়ে দেখা দিয়েছে নদী ও হাওরে ঝুলে থাকা পল্লীবিদ্যুতের তার।
পল্লীবিদ্যুতের তারে চলতি মাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুই জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে গত ৮ জুলাই তাহিরপুর উপজেলার বৌলাই নদীতে তারে জড়িয়ে তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের উজান তাহিরপুর গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে জানে আলম ঝন্টুর মৃত্যু হয়। এর কয়দিন পর ২০ জুলাই ১৭ জন পর্যটক একসঙ্গে টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে আসেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট যাওয়ার পথে পর্যটকবাহী নৌকাটি বিদ্যুতের তারের সঙ্গে লেগে বিদ্যুতায়িত হয়। সে সময় সবাই পানিতে লাফ দিয়ে সাঁতার কেটে তীরে ওঠার চেষ্টা করেন। তখনই জামরুল মিয়া (৪৫) নিখোঁজ হন। গত শুক্রবার সকালে তার মরদেহ উদ্ধার হয়।
আরও পড়ুন: নৌকা বিদ্যুতায়িত হয়ে হাওরে নিখোঁজ পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার
মারা যাওয়া পর্যটক জামরুল ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার বারই গ্রামের হারুনুর রশিদের ছেলে। ওই ঘটনায় আহত হয়েছিলেন আরও তিনজন।
দুইজন মারা যাওয়ার পর থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরের ঘুরতে আসা পর্যটকদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধাণ যেন হয়। স্থানীয় সচেতন মহল দাবি জানিয়েছেন, বিপজ্জনকভাবে ঝুলে থাকা এই বিদ্যুৎ সঞ্চালন তারগুলো এখনই যদি সঠিক উচ্চতায় না টাঙানো হয় তাহলে দিন দিন দুর্ঘটনার পরিমাণ আরও বাড়বে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাজ্জাদ মিয়া নামের একজন বলেন, ‘ঘুরতে আসা পর্যটকরাতো পরে, আগে তো আমরা। আমরা এই হাওর-নদীতে ১২ মাস কাজকাম করি। আমাদের হাওর দ্রুত ঝুঁকিমুক্ত করে দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাই। আমরা চাই দেশের দূরদূরান্ত থেকে আসা মেহমানদের যেনো তারের কারণে কোনো ক্ষতি না হয়।’
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎস্পৃষ্টের পর নদীতে নিখোঁজ ব্যক্তির লাশ উদ্ধার
হোসাইন আহমেদ নামের এক পর্যটক বলেন, ‘অনেক দিন থেকে ইচ্ছা ছিল হাওরে আসবো। কিন্তু যেদিন আসলাম এসে শুনলাম এখানকার হওর ও নদীতে বিদ্যুতায়িত হয়ে দুজন মারা গেছেন। এরপর থেকেই মনে ভয় ঢুকেছে। আল্লাহ সহায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাওরে ঝুলে থাকা পল্লীবিদ্যুতের তারগুলো যেন মরণফাঁদ। এর তার আরও উচ্চতায় টাঙাতে হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ ও প্রশাসনকে এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। নয়তো কখন কে কিভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হবেন তা কেউ বলতে পারবে না।’
বিপজ্জনকভাবে ঝুলে থাকা লাইনের তারের কারণে দুই-একজন মারা গেছেন জানেন জানিয়ে বুধবার (২৬ জুলাই) দুপুরে রাইজিংবিডিকে তাহিরপুর উপজেলার পল্লীবিদ্যুতের এজিএম ইকরাম হোসেন জনি বলেন, ‘এগুলো (ঝুলে থাকা লাইন) সংস্কারের উদ্যোগ আছে। আমরা সময়ে সময়ে তারগুলো যেখানে ঝুলে যায় তা আবারও টাঙিয়ে দিচ্ছি। লম্বা খুটি দিয়েও আমরা কাজ করে দিচ্ছি। যদি তার টাঙানোর সুযোগ না থাকে তাহলে লাল পতাকা ঝুলানো হচ্ছে ও মাইকিং করা হয়।’
নদী ও হাওরে ঝুঁকিপূর্ণ লাইন চিহ্নিত করে স্থায়ী কোনো সমাধাণ করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্থায়ী সমাধাণ বলতে, বিস্তীর্ণ হাওরে পল্লীবিদ্যুতের লাইন অনেক আগেই নির্মিত। এখন যেটা হচ্ছে নৌকা গুলোর সাইজ হঠাৎ করে বেড়ে গেছে, আগে তো এতো বড় নৌকা ছিলো না। হাউজবোট আর বড়নৌকার অতিরিক্ত উচ্চতায় সমস্যাগুলো হচ্ছে। এখন আমাদের পরিকল্পনায় আছে, আমরা যখন পুরো লাইন আপডেটে কাজ করবো তখন যতটুকু উচু করা যায় সেটি করবো।’
টাঙ্গুয়ার হাওরের ওপর দিয়ে বিদ্যুত লাইন টানা রয়েছে তাই রাতে নৌকা নিয়ে পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সবাইকে সর্তক থাকতে আহবান জানান সচেতনমহল।