এবরের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের অধীনে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার লখন্ডা জিরাতলি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষায় বিদ্যালয়টির কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেননি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অমনোযোগী ও অভিভাবকদের উদাসিনতার কারণে এমনিটি হয়েছে বলে অভিযোগ স্কুল কর্তপক্ষের।
তবে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া ও শিক্ষকদের গাফিলতির কারণে এমন ফলাফল এসেছে।
জেলা প্রশাসন বলছে, তদন্ত করে স্কুলটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার লখন্ডা জীরাতলি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এ স্কুলটিতে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক। স্কুলটিতে রয়েছে ৮ জন শিক্ষক। গত বছর প্রথমবারের মতো উচ্চ মাধ্যমিক পাঠদানের অনুমতি দিলে পার্শ্ববর্তী অন্য একটি স্কুল থেকে রেজিষ্ট্রেশন করে ১৪ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৯ জন পাস করে। তবে, এ বছর প্রথমবারের মতো নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে রেজিস্ট্রেশন করে ১২ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তবে ২৮ জুলাই (শুক্রবার) ফল প্রকাশের পর দেখা যায় স্কুলটি থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী ১২ জন শিক্ষার্থীর সবাই অকৃতকার্য হয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে- স্কুলটিতে নিয়মিত পাঠদান হয় না। নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল ছুটি দিয়ে শিক্ষকরা বাড়িতে চলে যান। তবে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অমনযোগী, মোবাইলে আসক্ত এবং অভিভাবকদের উদাসীনার কারনে এমন ফলাফল হয়েছে বলে অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষের।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা। টিনের বেড়ার দুইটটি দরজা রয়েছে। স্কুলটির গেট বন্ধ, গেটে ঝুলানো রয়েছে তালা। ফলে স্কুলে কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থী বা অফিস সহকারীদের পাওয়া যায়নি। তবে কিছু সময় পর ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক তন্ময় মন্ডলকে উত্তর পাশের বাড়ি থেকে লোকের মাধ্যমে খবর দিয়ে আনলে কিছু সময় পর সাংবাদিক পরিচয় জানার পর তিনি সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যান।
ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ১০টায় থাকলেও শিক্ষকরা আসেন সাড়ে ১১ টার পর। আবার আড়াইটা বাজলেই শিক্ষকরা স্কুল ছুটি দিয়ে দেন। ৩টার মধ্যেই বিদ্যালয় বন্ধ করে শিক্ষক-কর্মচারীরা চলে যান।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী অথরা মন্ডল বলেন, ঢাকায় আন্দোলন হচ্ছিল এ জন্য বিদ্যালয় কোনো স্যার আসেননি। বিদ্যালয়ের ছুটি দিয়েছেন। এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১২ জন অংশগ্রহণ করে সবাই ফেল করেছে। এ বিষয়ে কোনো স্যার আমাদের কিছুই বলেননি।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য তারাপদ মন্ডল বলেন, বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর অন্যতম একটি কারণ হলো আমাদের গ্রামের পাশের তিনটি গ্রামের তিনটি ভালো বিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষার্থীরা সেখানেই চলে যান। কম মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হয়। তাছাড়া আমাদের এখানকার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অবহেলা রয়েছে। অভিভাবকরা জানেনা তাদের সন্তানরা কখন কোথায় যাচ্ছে ঠিকমতো লেখাপড়া করছে কিনা। তারা কোন খোঁজ খবরই রাখেন না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমেন্দ্রনাথ টিকাদার বলেন, ১২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে একজনও পাস পারেনি এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি কারো সামনেই কথা বলতে পারছি না। আসলে আমাদের কোথায় দুর্বলতা এ বিষয়গুলো আমি খুঁজে পাচ্ছি না। আজ বিদ্যালয়ে সভা আহ্বান করা হয়েছিল কিন্তু সেখানে কেউই উপস্থিত হয়নি দুই একজন বাদে।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হরিপদ রায় বলেন, বিদ্যালয় থেকে এ বছর ১২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারল না এটা মেনে নেওয়া যায় না। তবে শিক্ষকদের থেকে শিক্ষার্থীদেরই দোষ বেশি। নির্বাচনী পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না সেটা আমার জানা নেই। এটাই আমাদের বিদ্যালয় থেকে প্রথম পরীক্ষা, তাই হয়তো একটু সমস্যা হয়েছে। আশা করছি আগামীতে এই সমস্যাগুলো থাকবে না।
এ বিষয়ে মুকসুদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদাত আলী মোল্লা বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। খুবই দুঃখজনক একটা বিষয়। স্কুলটিতে শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করলো। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শোকজ করা হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) গোলাম কবীর বলেন, স্কুলটির এমন ফলাফলের কারণ তদন্ত করা হবে। এখানে শিক্ষক না, শিক্ষার্থীদের গাফলতি রয়েছে সেটি খুঁজে বের করা হবে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।