বরগুনা-ঢাকা নৌরুটে মঙ্গলবার থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ। হঠাৎ লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। এদিকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় পণ্য পরিবহনে ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। লঞ্চ মালিকপক্ষ বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে গত এক বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে তাদের। তাই বাধ্য হয়ে বন্ধ করা হয়েছে লঞ্চ চলাচল।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে বরগুনা লঞ্চ ঘাটে সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকাগামী যাত্রীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন।
মো. কিবরিয়া নামে এক যাত্রী বলেন, লঞ্চের যাত্রা আরামদায়ক। নিরাপদ যাতায়াতের জন্য মানুষ এখনো লঞ্চে যাতায়াত করে। কিন্ত বরগুনায় লঞ্চ বন্ধ হয়ে যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। একজন মধ্যম অয়ের মানুষের পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে কম খরচে তাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হতো। মানুষ জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাসে না গিয়ে লঞ্চে যাতায়াত করতো। কিন্তু লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
লঞ্চ যাত্রী বায়েজিদ বলেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য লঞ্চ বন্ধের খবরে আমরা ভোগান্তিতে পড়েছি।
বরগুনা ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি জহিরুল হক পনু রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রাচীন এই নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বরগুনার ব্যবসা-বানিজ্যে হুমকির মুখে পড়রে। পণ্য পরিবহনের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আর ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে বাজারে। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ক্রেতারাও ক্ষতির মুখে পড়বেন। এই পথের লঞ্চ চলাচল অব্যাহত থাকা প্রয়োজন।
এম কে শিপিং লাইন্স কোম্পানির মালিক মাসুম খান রাইজিংবিডিকে বলেন, আমরা ঢাকা-বরগুনা রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছি। প্রতিটি ট্রিপে আমাদের দেড় থেকে দুই লাখ টাকার লোকসান হয়। এছাড়া জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আগে ৬০০০ লিটার দিয়ে আসা-যাওয়া করতাম সেখানে এখন ৩০০০ হাজার লিটার দিয়ে আসা-যাওয়া করি তাতেও আমাদের লোকসান হয়।
তিনি আরও বলেন, চার হাজার কোটি টাকা তেলের দাম বাকি রয়েছে আমার। গত মাসে ৩৮ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এতো লস দিয়ে আর লঞ্চ চলাচল করাতে পারছি না। জ্বালানির দামটা কিছুটা কমলে আমরা হয়তো পুষিয়ে থাকতে পারবো।
এই পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো সেতু চালুর আগে একেকটি লঞ্চে বরগুনা নদীবন্দর ঘাট থেকেই প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ যাত্রী হতো। বর্তমানে পদ্মা সেতু চালুর পর ২০০-৩০০ যাত্রী হচ্ছে।
বরগুনা নদী বন্দর কর্মকর্তা নিয়াজ মোহাম্মদ খান বলেন, লঞ্চ বন্ধ করে দেওয়ার পরে আমি এম কে শিপিং লাইন্স কোম্পানির মালিক মাসুম খানকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছি। কিন্তু, তিনি আমার ফোন রিসিভ করেননি। এরপর বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।