খেলাধুলা

মানকাড নাটকীয়তার পর রুদ্ধশ্বাস ম‌্যাচ জিতে সিরিজ পাকিস্তানের

নখ কামড়ানো মুহূর্ত। রোমাঞ্চকর ম‌্যাচ ঝুলছে পেন্ডুলামের মতো। কখনো এগিয়ে যায় আফগানিস্তান। কখনো পাকিস্তান। কে জিতবে বলা যাচ্ছিল না শেষ পর্যন্ত। 

শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটায় আফগানিস্তানের দেওয়া ৩০১ রানের টার্গেট ছুঁতে পাকিস্তানের শেষ ওভারে দরকার ছিল ১১ রান। হাতে কেবল ২ উইকেট। ক্রিজে ৪৮ রান করা শাদাব খান থাকায় ভরসা পাচ্ছিল পাকিস্তান। কিন্তু ফজল হক ফারুকির করা প্রথম বলে চরম নাটকীয়তা ছড়ায়। 

নন স্ট্রাইক প্রান্তে ছিলেন শাদাব। স্ট্রাইক প্রান্তে নাসিম শাহ। ফারুকি খুব ভালোভাবেই জানতেন প্রথম বলেই প্রান্ত বদল করতে চাইবেন শাদাব। তাইতো বোলিং করতে এসে বল না ছুঁড়ে মানকাড করেন ফারুকি। উইকেট ভাঙার সময় ক্রিজের বাইরে ছিলেন ব‌্যাটসম‌্যান। কাজ হয়ে যায় আফগানিস্তানের। বিপজ্জনক শাদাব মানকাড আউট হয়ে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। 

পাকিস্তান তখন চরম বিপদে। ১ উইকেট রেখে ১১ রান তোলা ছিল কঠিন কাজ। কিন্তু হারিস রউফকে সঙ্গে নিয়ে নাসিম শাহ দলকে জিতিয়ে-ই মাঠ ছাড়েন। ফারুকির প্রথম বল লং অফ দিয়ে চার মারেন নাসিম। পরের বল ডট। তৃতীয় বল সিঙ্গেল নিয়ে প্রান্ত বদল করেন লেজের ব‌্যাটসম‌্যান। চতুর্থ বলে হারিস রউফ ডিপ মিড উইকেটে বল পাঠিয়ে নেন ৩ রান। শেষ ২ বলে পাকিস্তানের জয়ের জন‌্য দরকার ৩ রান। 

পঞ্চম বলে সমীকরণ মিলিয়ে নেন নাসিম। তার ব‌্যাটের কানায় লেগে বল যায় শর্ট থার্ড ম‌্যান অঞ্চল দিয়ে সীমানার বাইরে। ব‌্যাট-হেলমেট ছুঁড়ে ফেলে ভো দৌড়ে উদযাপনে মাতেন এ ব‌্যাটসম‌্যান। ১ বল হাতে রেখে পাকিস্তান ম‌্যাচ জিতে নেয় ১ উইকেটে। সেই সঙ্গে তিন ম‌্যাচের সিরিজ ২-০ ব‌্যবধানে এগিয়ে থেকে নিশ্চিত হয়ে গেল পাকিস্তানের। 

তবে এই ম‌্যাচে সব পাওয়ার দাবীদার ছিল আফগানিস্তান। প্রথম ম‌্যাচে ৫৯ রানে গুটিয়ে যাওয়া দল কিভাবে ৩০০ রান পুঁজি করে তা ছিল চরম বিস্ময়কর। ইনিংসের শুরুতেই কাজের কাজ করে দেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। দুজন ওপেনিং জুটিতে ৩৯.৫ ওভারে ২২৭ রান করেন।

সেঞ্চুরি পাওয়া গুরবাজ ১৫১ এবং ইব্রাহিম ৮০ রান করেন। দুজনের দারুণ এই জুটির পর রানের চাকায় লাগাম টানেন পাকিস্তানের বোলাররা। শেষ ১০ ওভারে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আফগানিস্তানকে তিনশর বেশি করতে দেননি আফ্রিদি, নাসিম, রউফরা। 

গুরবাজ ১৫১ বলে ১৪ চার ও ৩ ছক্কায় সাজান ১৫১ রানের ইনিংস। ইব্রাহিম ১০১ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় করেন ৮০ রান। এরপর মোহাম্মদ নবীর ব‌্যাট থেকে ২৯ বলে আসে ২৯ রান। রশিদ খান (২) ও শহীদুল্লাহ (১) দলের প্রয়োজন মেটাতে পারেননি। শেষ দিকে হাশমতউল্লাহ শহিদি ১১ বলে ১৫ রান করলে তিনশর গন্তব‌্যে পৌঁছায় আফগানিস্তান। 

বল হাতে পাকিস্তানের হয়ে আফ্রিদি ৫৮ রানে নেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন নাসিম ও উসামা মির। 

লক্ষ‌্য তাড়ায় ইমাম-উল-হকের ৯১ ও বাবর আজমের ৫৩ রানে পাকিস্তান ভালোই জবাব দেয়। ইনিংসের শুরুতে ফখর জামান ৩০ রান করেন। কিন্তু মিডল অর্ডারে কেউ হাল ধরতে না পারায় বিপদে পড়ে পাকিস্তান। ২০৮ থেকে ২৫৮ রানে যেতে পাকিস্তান হারায় ৪ উইকেট। সেখান থেকে শাদাব খান দলকে একা টেনে তোলেন। প্রতি আক্রমণে গিয়ে ৩৫ বলে করেন ৪৮ রান। 

কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গিয়ে আউট হন এ ব‌্যাটসম‌্যান। তীরে গিয়ে ডোবান তরী। মানকাড আউট হয়ে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। অবশ‌্য দলকে সেখান থেকে তুলে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান নাসিম। শেষ দিকে তার ৫ বলে ১০ রানের ইনিংস হয়ে উঠে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

বল হাতে ৬৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ফারুকি আফগানিস্তানের সেরা বোলার হলেও শেষটা রাঙাতে পারেননি। ২ উইকেট নেন মোহাম্মদ নবী। 

দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬০২ রান হয়েছে যা দুই দলের মধ‌্যকার ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ দলীয় রান। 

ম‌্যাচ সেরা নির্বাচিত হন শাদাব খান। 

সিরিজের শেষ ম‌্যাচ ২৬ আগস্ট কলম্বোতে অনুষ্ঠিত হবে।