খেলাধুলা

এশিয়া কাপে ‘রিয়েলিটি চেক’, নিউ জিল্যান্ড সিরিজে পরীক্ষা-নিরীক্ষা

এসেই মুচকি হাসি দিলেন সাকিব আল হাসান। একটা-দুটা করে কয়েকটা প্রশ্ন হতে মিডিয়া ম্যানেজার সংবাদ সম্মেলন শেষের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সাকিব যেন তখন অন্য অবতারে, কার কী প্রশ্ন আছে নিজেই জানতে চাইলেন। সংবাদকর্মীরা প্রশ্ন করছেন, প্রতিটার উত্তরই দিচ্ছেন বড় করে। অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলে সঙ্গে সঙ্গে ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন।

কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ অধিনায়ক অন্যরূপে ধর দেন। প্রায় ১৫ মিনিটের এই সংবাদ সম্মেলনে একেকজন কয়েকটি করে প্রশ্ন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে প্রশ্ন থেমে যায়, সাকিব তখনো বলেন, ‘আর প্রশ্নে নাই?’

লাহোরে আফগানিস্তানকে উড়িয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত হয়েছিল বাংলাদেশের। প্রথমে পাকিস্তান, পরে শ্রীলঙ্কা দুই ম্যাচেই মুদ্রার উলটো পিঠ দেখে সাকিবের দল। টস হেরে শ্রীলঙ্কা ৯ উইকেটে ২৫৭ রান করে। রান তাড়া করতে নেমে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় বাংলাদেশ থামে ২৩৬ রানে। হার ২১ রানে। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দুইশ রানও করতে পারেনি। ফল ৭ উইকেটের হার।

এশিয়া কাপ শুরুর আগে তামিম ইকবাল ছিটকে যান। লিটন দাস গ্রুপপর্বের ম্যাচে জ্বরের কারণে খেলতে পারেননি। সুপার ফোরের দুই ম্যাচেই ছিলেন ব্যর্থ। কোনো ম্যাচেই তিনি ওপেনিং করেননি। বাংলাদেশ খেলে মেকশিফট ওপেনার মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে। সব মিলিয়ে ব্যাটিং ব্যর্থতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে আসে। সাকিব তখনি বলে দেন বিশ্বকাপের ঠিক আগে এশিয়া কাপ দলের অবস্থা বোঝার জন্য রিয়েলেটি চেক!

‘ব্যাটিং নিয়ে অবশ্যই চিন্তিত। বেশ কিছুদিন ধরেই আমরা ভালো ব্যাটিং করছি না। সে জায়গাগুলো দেখার এবং চিন্তা করার আছে। কীভাবে ঠিক করতে পারি। বিশ্বকাপের আগে এই টুর্নামেন্ট খুবই কাজে দিয়েছে। রিয়েলিটি চেকটা দরকার ছিল আমাদের।’

‘দ্বিপাক্ষিক সিরিজে আমরা সবসময়ই ভালো খেলি। বলতে পারবেন না আমরা কখনো খারাপ দল ছিলাম। আমাদের বড় পরীক্ষাগুলো হয় এরকম বড় টুর্নামেন্টগুলোতে।  যেখানে আমরা কখনোই আহামরি কিছু করি না।’

সাকিব এখানেই থামেননি। দ্বিপাক্ষিক সিরিজের উদাহরণ টেনে বলে দিলেন কোন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স কী ছিল, ‘২০০৭ বিশ্বকাপে ৩টি ম্যাচ জিতেছি, ২০১১ এর বিশ্বকাপে ৩টি জিতেছি, ২০১৫ বিশ্বকাপে ৩টি জিতেছি, ২০১৯ এর বিশ্বকাপেও তিনটি ম্যাচ জিতেছি। অনেকে অনেক কথা বলতে পারে। কিন্তু যখনই রিয়েলিটি চেকটা হয় তখন কিন্তু আমরা ব্যর্থই হয়েছি। এটা ভালো যে বিশ্বকাপের আগে আগে এই টুর্নামেন্টটা হয়েছে। সবাই অবশ্যই চিন্তা করবে এই সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়। তখন হয়ত আরও ভালো হবে।’

তামিম সরে দাঁড়ানোর পর সাকিব নেতৃত্ব পান এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ পর্যন্ত। ৪ ম্যাচেই অধিনায়ক বুঝতে পেরেছেন কোথায় সমস্যা কোথায় ঘাটতি। সে জন্য বারবার রিয়েলেটি চেকের কথা বলে জানিয়েছেন তা দ্রুত ঠিক করতে হবে। অক্টোবরে বিশ্বকাপ শুরুর আগে বাংলাদেশ আরও চারটি ওয়ানডে খেলবে। এশিয়া কাপের পরেই আছে ঘরের মাঠে নিউ জিল্যান্ড সিরিজ, সেখানে হবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

সাকিব বলেন,  ‘আমাদের ইতিহাস নেই। সফল যেহেতু হই নাই যদিও এশি কাপে ২/৩ বার ফাইনাল খেলেছি। জিতলে আরও ভালো হতো। আমরা সবসময়ই প্রতিশ্রুতিশীল দল। গত ছয় মাসে আমাদের ব্যাটিং পারফরম্যান্স খারাপ হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবেই নিচের দিকে যাচ্ছে। এটা নিয়ে কাজ করতে হবে।’

‘নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩টি ম্যাচ আছে। সেখানে আমরা কিছু জিনিস দেখব। সবারই সুযোগ আছে। এশিয়া কাপে যারা খেলেছে তাদের মধ্যে যারা বিশ্বকাপে কনফার্ম তাদের বিশ্রাম থাকতে হবে বলে আমি মনে করি। প্র্যাকটিস ম্যাচ, ট্রাভেলিং। কারও ইনজুরি হলে সমস্যা হবে। রিপ্লেসমেন্ট নেই। এটা খুব জরুরি সবাই যেন ফিট থাকে। ইবাদত নেই। আমি আশা করব চার জনই যেন ফিট থাকে’-যোগ করেন সাকিব।