আসছে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর নির্বাচনকে সামনে রেখে কুমিল্লায় শুরু হয়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি। রাজনৈতিক সহিংসতা ছাড়াও অপেশাদার সন্ত্রাসীদের হাতে প্রদর্শিত হচ্ছে এসব অস্ত্র। যা উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোনো বিশেষ ভূমিকা।
জানা গেছে, গত ১০ মাসে কুমিল্লার প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র হাতে একাধিক ব্যক্তির ছবি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও পুলিশ একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারও হয়নি।
জেলার বরুড়া উপজেলার একটি অনুষ্ঠানে স্কুল মাঠে দুই যুবকের আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সপ্তাহ পার হলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। উদ্ধার হয়নি অস্ত্রগুলো। গত ৬ জুন জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগে নিজেদের শক্তির জানান দিতে দুই নেতার ৬ অনুসারী অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দিলেও তাদের গ্রেপ্তারে বা অস্ত্র উদ্ধারে তৎপর দেখা যায়নি প্রশাসনকে।
এ দুটি ঘটনার ঠিক ১০ মাস আগেও ২০২২ সালে ৫ নভেম্বর কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চার নেতাকর্মী অবৈধ অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দিলেও একজনকে আটক করেনি পুলিশ।
কেনো, কি কারণে তাদের আটক করা যাচ্ছে না- জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রাজেস বড়ুয়া বলেন, জেলা বিভিন্ন স্থানে যারা অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করছে, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুতই অভিযান পরিচালনা করে গ্রেপ্তার করা হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সভাপতি শাহ মোহাম্মাদ আলমগীর খান বলেন,আগামী নির্বাচনে সুন্দর পরিবেশ রাখতে হলে এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। না হয় সামনের নির্বাচনে মানুষ আর ভোট কেন্দ্রে যাবে না।
তিনি বলেন, আমি অবাক হয়েছি কুমিল্লার বেশ কয়েকটি উপজেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া হলেও তা উদ্ধার বা অস্ত্রধারী কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি প্রশাসন। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত এ সব অস্ত্র উদ্ধারে এগিয়ে আসা। অস্ত্রধারী যে দলের হউক তাদের ছাড় দেওয়া যাবে না। না হয় আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমরা চাই রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হলে প্রশাসনের যৌথ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে বিচারের মুখামুখি করতে হবে।
কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) খন্দকার আশফাকুজ্জামন বলেন, অবৈধ অস্ত্রগুলো উদ্ধার ও অভিযুক্তদের ধরতে আমরা কাজ করছি। অস্ত্র মহড়ায় জড়িত প্রতিটি ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হচ্ছে, যে কোনো সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
র্যাব-১১,সিপিসি-২,কুমিল্লার উপপরিচালক স্কোয়াড্রন লিডার এ কে এম মুনিরুল আলম বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কুমিল্লার যেসব এলাকায় অস্ত্র প্রদর্শন হয়েছে, আমরা প্রতিটি ঘটনার গুরুত্ব সহকারে দেখছি। র্যাব বিশেষভাবে অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে কাজ করছে। ইনশাআল্লাহ আমরা খুব তাড়াতাড়ি অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে পারবো।
১০ বিজিবির কুমিল্লার অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মাদ রেদওয়ালু ইসলাম বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র যেনো না আসতে পারে সেক্ষেত্রে আমরা ১০ বিজিবি সবসময় সতর্ক অবস্থানে আছি। আর অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি আমাদের নয়, এটি স্থানীয় আইন শৃংখলা বাহিনীর বিষয়।