‘ঘর খুলিয়া বাহির হইয়া, জোছনা ধরতে যাই; হাত ভর্তি চান্দের আলো ধরতে গেলে নাই’- হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত এই বাণী নিশ্চয় মনে আছে। ক্রিকেটের কোনো আসরে শুধু বর্তমান তারকারা মাঠ মাতান না, তাদের খেলাকে রঙিন পর্দায় আকর্ষণীয় করে তুলতে উপস্থিত থাকেন সাবেক তারকারা। স্টেডিয়াম, মিডিয়া সেন্টার কিংবা ডাইনিংয়ে সবসময় আশেপাশে দেখা যায় তাদের। কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে গেলে যেন তারা থেকেও নাই। ঠিক হাত ভর্তি চান্দের আলোর মতোই!
সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মুলো ঝুলিয়ে না করে দেন মুহুর্তেই। চলমান এশিয়া কাপে ক্যান্ডি থেকে কলম্বো ঘুরে অবশেষে পাওয়া গেলো ভারতের সাবেক তারকা পেসার ইরফান পাঠানকে। কদিন বাদে ভারতের মাটিতে বসতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের আসর, সম্প্রতি দারুণ খেলছেন বাংলাদেশের পেসাররা। তাই সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকা ইরফান পাঠানের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলার চেষ্টা। গুণে গুণে প্রশ্ন সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া সাবেক এই ক্রিকেটার রাইজিংবিডিকে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তার ভাবনা ও প্রত্যাশা। পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
বাংলাদেশের পেস ইউনিটকে কিভাবে রেট করবেন? ইরফান পাঠান: পেস ইউনিট এখন অনেক ভালো। আমরা এটা ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় বলেছি। মাশরাফি বিন মুর্তজার পর এই বোলিং বিভাগ অনেক ভালো। আমি যখন বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতাম তখন মাশরাফি অনেক বড় নাম ছিল। এখন এক-দুজন নয়, তিন-চার জন কোয়ালিটি পেস বোলার আছে। এদের মধ্যে কেউ সুইং করাতে পারে, কেউ হার্ড লেংথে ক্রিজে জোরে বল করতে পারে। এই বোলিং আক্রমণে অনেক বৈচিত্র্য আছে। যা পছন্দ করার মতোই।
অন্য দলগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের পেস আক্রমণকে কোথায় দেখছেন? ইরফান পাঠান: যদি অন্য দলগুলোর সঙ্গে তুলনা করার কথা বলা হয়, তাহলে অনেকগুলো দল হতে পারে, যেমন অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান। যদি তুলনা করা হয়, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের পেসারদের শুধু অভিজ্ঞতার কমতি আছে। অভিজ্ঞতা বিবেচনা না নিলে এই ধরনের পিচ থেকে বাংলাদেশি পেসাররা সুবিধা নিবে।
উপমহাদেশে খুব একটা সিমিং উইকেট হয় না। পেসারদের বিশ্বমানের হওয়ার জন্য এটা কি অন্তরায়? ইরফান পাঠান: তাদেরকে (বাংলাদেশের পেসার) পারফর্ম করার সঠিক মঞ্চ দেওয়া উচিত। এটা এমন একটা জায়গা যার মান প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাদের মধ্যে ভালো খেলার সেই মান এবং সক্ষমতা আছে। যদি বাংলাদেশ ঘরের মাঠে দারুণ স্পোর্টিং পিচ বানায় তাহলে পেসাররা আরও সামনে এগিয়ে যেতে পারবে। এটা হতে কয়েকবছর সময় লাগতে পারে কিন্তু তারা উন্নতি করে যাচ্ছে।
ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের কেমন করতে পারে এবং কি প্রত্যাশা করছেন? ইরফান পাঠান: আমি আশা করছি বাংলাদেশ বিশ্বকাপে একটু বেশি প্রত্যাশা নিয়ে আসবে। এই দলে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের মতো ক্রিকেটার আছে। লিটন একজন আগ্রাসী ক্রিকেটার। আমি তরুণ তাওহীদ হৃদয়কে পছন্দ করি। আমি তার ভবিষ্যত নিয়ে রোমাঞ্চিত। কিন্তু আমি জয়ের জন্য সঠিক ও পজিটিভ ইন্টেন্ট দেখতে চাই। এটা আমি বাংলাদেশের কাছে প্রত্যাশা করি। ফল যেমনই হোক না কেন আমি পজিটিভ ইন্টেন্ট দেখতে চাই।
যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে শরিফুল দারুণ করেছে। এখন সে জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ। তাকে কেমন দেখলেন? ইরফান পাঠান: শরিফুল উঁচু মানের ফার্স্ট বোলার। সে শুরুতে বল সুইং করতে পারে, সে বৈচিত্র্যময় গতিতে বল করতে পারে, রাউন্ড দ্য উইকেটের ব্যবহারে ভালো প্রভাব ফেলতে পারে। সে লম্বা, তার রিস্ট পজিশন ভালো। সে যদি তার লাইন এবং শুরুতে পাওয়া সুইং নিয়ে কাজ করে যায় তাহলে বাংলাদেশের সম্পদ হতে পারে, কারণ সে বাঁ হাতি ফার্স্ট বোলার।
পেস ইউনিটে আরও এক তরুণ আছে। হাসান মাহমুদ। তার বোলিং দেখেছেন নিশ্চয়? ইরফান পাঠান: আমি হাসান মাহমুদের অ্যাকশন পছন্দ করি। তার অ্যাকশন খুবই ভালো, বিশেষ করে বায়োমেকানিক্যাল দিক থেকে। সবকিছু ভালোর দিকে যাচ্ছে। রিস্ট পজিশন দারুণ, স্ট্রেইট সিম, যেটা তাকে ক্রিজে দ্রুত বল ছাড়তে সাহায্য করে। আমি মনে করি এই দুই পেসার বাংলাদেশের ভবিষ্যত হতে পারে।
এক সময় মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি স্বরূপ। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে তার ধার কমে গেছে। কোথায় ঘাটতি মনে হয়? ইরফান পাঠান: একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর মোস্তাফিজুর রহমানের মতো ক্রিকেটারদের জন্য এটা মাইন্ডসেটের বিষয়। অবশ্যই টেকনিক্যালি সে বেশি কিছু পরিবর্তন আনতে পারবে না। যখন আমি তার বোলিং দেখেছি আমার মনে হয়েছে তার সিম পজিশন হালকা সোজা হতে পারে। তবে তা ছাড়া, তার শরীর এবং বয়সের দিক বিবেচনা করলে টেকনিক্যালি খুব বেশি পরিবর্তন করা যাবে না। সে ভালো বোলার, বাংলাদেশের জন্য অনেক ভালো কিছু করেছে। আমি মনে করি এটি কেবল মানসিকতা এবং শারীরিকভাবে ফিট হওয়ার বিষয়।