শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ১৭ রান। কয়েক মিনিট কথা বলে সাকিব আল হাসান বলে তুলে দেন অভিজ্ঞ মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে। এর আগের ওভারে শেখ মাহেদী হাসানকে দৌড়ে এসে টিপস দিয়েছিলেন, কিন্তু কাজ হয়নি। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মোস্তাফিজ মাত্র ৫ রান দিয়ে তুলে নেন শার্দুল ঠাকুর ও জয়ে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানো অক্ষর প্যাটেলের উইকেট। অথচ আগের ৭ ওভারে দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট।
মোস্তাফিজের তৈরি করে দেওয়া মঞ্চে মাত্রই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করা তানজীম হাসান সাকিবও দেন অভিজ্ঞতার পরিচয়। প্রথম তিন বল ডট, চতুর্থ বলে বাউন্ডারি আর পঞ্চম বলে ডাবলস নিতে গিয়ে মোহাম্মদ শামি রানআউট! ব্যাট হাতে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো, আর শেষটা হয়েছে ঠিক স্বপ্নের মতো।
শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ পেল শ্বাসরুদ্ধকর ৬ রানের জয়। বিরাট কোহলি-জসপ্রীত বুমরাহসহ পাঁচ পরিবর্তন নিয়ে নেমেছিল ভারত। বাংলাদেশও ঠিক তাই। তাসকিন আহমেদ-শরিফুল ইসলামদের বিশ্রাম দিয়ে পাঁচ পরিবর্তন এনে খেলায় মোস্তাফিজ আর তানজীমদের। অভিজ্ঞ মোস্তাফিজের সঙ্গে একুশ ছুঁইছুঁই তানজীম নিজেকে ব্যাট হাতে-বল হাতে বড় মঞ্চের ক্রিকেটার হিসেবে জানান দেন।
আগেই ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় দুই দলই ছিল নির্ভার। তাই এত পরিবর্তন। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ২৬৫ রান। রান তাড়া করতে নেমে ভারত অলআউট হয় ২৫৯ রানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭ সেপ্টেম্বর ফাইনালে লড়ার আগে রোহিত শর্মার দলের জন্য এটি বড় ধাক্কা বটে। অন্যদিকে আগেই সব হারিয়ে শেষটা সুন্দর করে আগামী দিনে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ পেয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। চলমান এশিয়া কাপে ৫ ম্যাচ খেলে ২টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
ব্যাট হাতে তানজীম যেমন ছিলেন দুরন্ত, বল হাতে তার চেয়েও বেশি আগ্রাসী। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে শূন্য রানে ফিরিয়ে উইকেটের খাতা খোলেন। রোহিতের আউটের রেশ না কাটতে তানজীমের শিকার তিলক ভার্মা। অসাধারন এক ডেলিভারিতে তাকে বোল্ড করে ফেরান তানজীম। অনুর্ধ ১৯ যুব বিশ্বকাপের ফাইনালেও তিলককে আউট করেছিলেন তানজীম।
১৭ রানে ২ উইকেট হারালেও ভারত ঘুরে দাঁড়ায় শুভমান গিলের ব্যাটে। লোকেশ রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন শুরুতে। কোনো জুটিই লম্বা হয় না কিন্তু গিল থেকে যান ২২ গজে। তুলে নেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক। মাঝে রাহুল (১৯), ইশান কিষান (৫) সুর্যকুমার যাদব (২৬) ও রবীন্দ্র জাদেজা ফেরেন ৭ রানে। হুমকি হয়ে দাঁড়ানো গিল ফেরেন ১২১ রানে, তাওহীদ হৃদয়ের অসাধারণ এক ক্যাচে। এরপর অক্ষর হুমকি হয়ে দাঁড়ালেও মোস্তাফিজ তাকে থামিয়ে দেন শেষ মুহুর্তে। মাত্র ৩৪ বলে ৪২ রান করেছিলেন অক্ষর। ১৩ বলে ১১ রান করেন শার্দুল। শেষ ওভারে রানআউট হন শামি। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন মোস্তাফিজ। এ ছাড়া তানজীম-মাহেদী নেন ২টি করে উইকেট।
এর আগে ব্যাট হাতে আজ একসঙ্গে জ্বলে উঠেছেন টেল এন্ডার ব্যাটাররা। স্বীকৃত অলরাউন্ডার শেখ মাহেদী হাসানের আগে নাসুম আহমেদকে পাঠিয়ে জুয়া খেলে টিম ম্যানেজম্যান্ট। তাতেই বাজিমাত। নাসুম ৬টি চার ও ১ টি ছয়ে ৪৫ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলে এলোমেলো করে দেন ভারতের ফিল্ডারদের।
নাসুম ফিরলেও রানের চাকা থামেনি। শেখ মাহেদী আর অভিষিক্ত তানজীম হাসান সাকিব খেলেন ক্যামিও ইনিংস। ইনিংসের শেষ বলে দারুণ চারে শেষ করা মাহেদী অপরাজিত ছিলেন ২৩ বলে ২৯ রান করে। তানজীম বুঝতেই দেননি তিনি আজ প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছেন। ৮ বলে ১৪ রান করেন এই পেসার! নাসুম-মাহেদী-তানজীম মিলে শেষ ৭৩ বলে যোগ করেন ৮৭ রান।
শেষটা সুন্দর হলেও শুরুটা বিভিষীকাময়। তৃতীয় ওভারে লিটন দাস ফেরেন মোহাম্মদ শামির বলে বোল্ড হয়ে। ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক করতে থাকা লিটন রানের খাতাই খুলতে পারেননি। দলের বিপদ বাড়িয়ে ফেরেন তানজীদ হাসান তামিম (১৩) ও একমাত্র এই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় (৪)। পাঁচে আসা মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে এগোতে থাকেন সাকিব। মিরাজ থিতু হওয়ার আভাস দিয়েও ফেরেন ১৩ রানে।
৫৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ। সাকিব এবার তাওহীদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে সাবলীল ব্যাটিংয়ে লিখতে থাকেন ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। একপাশে সাকিব রানের সচল রাখার চেষ্টা করছিলেন আরেক পাশে হৃদয় দিয়ে যাচ্ছিলেন দারুণ সঙ্গ। ৬৭ বলে ৫৫তম ফিফটি তুলে নেওয়া সাকিব পরের ৩০ রান করেন মাত্র ১৭ বলে। প্রায় ৪ বছর পর যখন শতকের স্বপ্ন দেখছিলো গোটা বাংলাদেশ তখন শার্দুল ঠাকুরের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন সাজঘরে। ৮৫ বলে ৮০ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
সাকিব ফেরার পর হৃদয় ৭৭ বলে ফিফটি তুলে নেন। এরপর অবশ্য এগোতে পারেননি বেশি। ৫৪ রানে তিলক ভার্মার হাতে ক্যাচ বানিয়ে তাকে ফেরান শামি। সাকিব-হৃদয়দের বানিয়ে দেওয়া সবুজ গলিচায় দারুণ ফিনিশিং দেন টেল এন্ডাররা।
ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন শার্দুল। তবে ১০ ওভারে রান দেন ৬৫টি। ২ উইকেট নেন শামিম। ১টি করে উইকেট নেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা, অক্ষর প্যাটেল ও রবীন্দ্র জাদেজা।