বান্দরবান পার্বত্য জেলার খেয়াং জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা লিখিত রুপে মনের ভাব প্রকাশ ও ভাষা সংরক্ষণ করতে খেয়াং বর্ণমালার কম্পিউটার কী-বোর্ডের উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বান্দরবান সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের গুংগুরুমুখ খেয়াং কমিউনিটি সেন্টারে এই কী-বোর্ড পরিচিত করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ম্রাসা খেয়াং। অন্যান্যদের মধ্যে ভাষা গবেষক মৃদুল সাংমা, ভাষা প্রযুক্তিবিদ সমর এম সরেন, ভাষা গবেষক রিবেং দেওয়ান, প্রথম আলো পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি বুদ্ধজ্যোতি চাকমা, সমাজকর্মী অংসাউ খেয়াং প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিংশ শতাব্দীর উন্নত প্রযুক্তিতে নিজেদের মাতৃভাষা লিখিত রুপে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারা গর্বের বিষয়। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই ভাষা কম্পিউটার কী-বোর্ডে যুক্ত করার উপযোগী করেছে, তাদের স্বরণ করে রাখবে এই জনগোষ্ঠীর লোকেরা। এই ভাষার প্রচলন ও চর্চা বাড়াতে খেয়াং ভাষায় কবিতা, উপন্যাস, রুপকথার গল্পসহ নিজেদের জনগোষ্ঠীরদের মধ্যে তথ্য ও মোবাইল ফোনে টেক্স আদান-প্রদান করতে আহবান জানান বক্তারা।
ফ্রেন্ডস অব এন্ডেঞ্জার্ড এথনিক ল্যাংগুয়েজস (ফিল) সংস্থার তত্বাবধানে প্রায় ২ মাসের প্রচেষ্টায় এই ভাষার বর্ণমালা কম্পিউটার কী-বোর্ডে যুক্ত করতে সক্ষম হয়। ভবিষ্যতে মোবাইল কী-বোর্ডে ব্যবহারের উপযোগী অ্যাপ্স তৈরি করা হবে। যার মাধ্যমে মোবাইলে খ্যায়াং ভাষার বর্ণমালা ব্যবহার করে তথ্য আদান প্রদান করতে পারবেন এই জনগোষ্ঠীর লোকেরা।
ফ্রেন্ডস অব এন্ডেঞ্জার্ড এথনিক ল্যাংগুয়েজস ফাউন্ডেশনের ভাষা গবেষক রিবেং দেওয়ান বলেন, দুই বছর আগে দেশে বিলুপ্তপ্রায় যে ভাষাগুলো রয়েছে, সেই ভাষাগুলোকে ডিজিটালাইজ করার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে সংস্থাটি। এই পর্যন্ত ১৬টি ভাষায় কম্পিউটার কী-বোর্ড তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে ভাষা গবেষক মৃদুল সাংমা, ভাষা প্র্যুক্তিবিদ সমর এম সরেনসহ ৭ জন সদস্যের প্রচেষ্টায় খেয়াং ভাষায় উদ্ভাবিত কী-বোর্ডটি দেশে এবং এশিয়া মহাদেশে নবীনতম ডিজিটালাইজ ভাষায় যুক্ত হয়েছে। যা পৃথিবীর লিখিত ডিজিটালাইজ ভাষার মধ্যে ২৯৪তম কী-বোর্ড ভাষায় স্থান পেয়েছে।
এছাড়াও খেয়াং, পাহাড়িয়া কুড়ুখ, চাকমা, ম্রো, আবেং (গারো), মেগাম (গারো), কোল, মুন্ডা, সান্তাল, খুমী ও খাসিয়া, সওরা সম্প্রদায়ের ভাষা রিসোর্স ও রাইটিং টুলস, ভাষা অভিধানের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
খেয়াং ভাষা বর্ণমালার উদ্ভাবনের অন্যতম সদস্য ঞো জাই উ খেয়াং বলেন, নিজেদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যেবোধের সহায়ক বর্ণমালা উদ্ভাবন, উদ্ভাবনের পর ২০১৭ সালে ২২ অক্টোবর খেয়াং ভাষা ও বর্ণমালা বইয়ের প্রকাশনা উৎসব পালন করা হয়েছে। খেয়াং ভাষার বর্ণমালার মধ্যে স্বরবর্ণ ১১টি, আর ব্যঞ্জন বর্ণ ২১টি। উদ্ভাবিত খেয়াং ভাষার সঙ্গে উচ্চারণ, ধ্বনি সবকিছু ঠিক আছে এবং শেখা খুবই সহজ। এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেয়াং ভাষা শেখানো হয়েছিল, আর্থিক সংকটের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। নিজের মাতৃভাষার চর্চা করা না হলে খেয়াং জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি মূল্যবোধসহ সব হারিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে বলে জানান তিনি।
রিবেং দেওয়ান (জাতিতত্ত্ব ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ) ৩টি ভাষার কিবোর্ড তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এবং ১৬ টি বিপন্ন ভাষার ভাষিক রিসোর্স তৈরির কাজ করছে।