জেমিনসনের বল অফস্টাম্পের কাছ ঘেঁষে গিয়ে নিজের কমফোর্ট জোনে বানিয়ে দারুণ ড্রাইভ তামিম ইকবালের। ফিল্ডারদের ফাঁকি দিয়ে বল চোখের পলকে সীমানায়। ধারাভাষ্যকার মাইক হেইসম্যান বলে উঠলেন, ‘দ্যাটস তামিম ফর ইউ।’
নানা নাটকীয়তার পর তামিম দীর্ঘ সময় পর ফিরেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এ সময়ে পাল্টে গেছে তার গোটা দুনিয়া। মাঠে ফিরে তামিম কেমন করেন সেদিকে নজর ছিল সবার। বাঁহাতি ওপেনার শুরুটা ভালো করে দারুণ ছন্দে এগিয়ে গেলেও বড় স্কোর করতে পারেননি। ৪৪ রানে থেমেছে তার ইনিংস। যেখানে ছিল ৭ দৃষ্টিনন্দন চারের শট।
মাঠে ফিরে তামিম আত্মবিশ্বাস পেলেও এখনো জড়তা কাজ করছে। পিঠের নিচের অংশের ব্যথা মুক্তির জন্য গত আগস্টে লন্ডনে দুটি ইনজেকশন নিয়েছিলেন তামিম। বিশ্বকাপে চোখ রেখে পুনর্বাসন কাটিয়ে এই সিরিজ দিয়ে মাঠে ফিরেছেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম ওয়ানডেতে শুধু ফিল্ডিং করেছিলেন। আজ পুরো ৫০ ওভার ফিল্ডিংয়ের পর ৯০ মিনিট ব্যাটিং করেন।
মাঠে তাকে ফুরফুরে দেখা গেলেও এখনও অস্বস্তি রয়েছে বলে জানালেন তামিম। দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষে তামিম বলেছেন, ‘মাঠে ফিরে ভালো লাগছে। প্রথম ম্যাচে ৩০ ওভারের মতো ফিল্ডিং করেছি। আজ ৫০ ওভার মাঠে ছিলাম। এছাড়া ব্যাটিং করেছি ২০ ওভারের মতো। ফিরে ভালো লাগছে। অস্বস্তি রয়েছে। এখনও আমার পেছনে বেশ ভালো অস্বস্তি রয়েছে। ফিজিও এবং আমি এটা ওভারকাম করার চেষ্টা করছি। এটা সত্য এখনও অস্বস্তি রয়েছে।’
মাঠে নামার আগে নার্ভাসও ছিলেন তামিম,‘সত্যি কথা বলতে, আমি নার্ভাস ছিলাম। যদি বলি যে এটা জাস্ট আরেকটা ম্যাচ তাহলে বলা যাবে না। শেষ কয়েক মাসে যেসব ঘটনা ঘটেছে, ব্যাটিংয়ে নামার সময় আমি নার্ভাস ছিলাম। তবে প্রথম ওভার শেষে সেটা কমে গিয়েছিল যা স্বস্তির ছিল। এছাড়া ব্যাটিং করে আনন্দ পাচ্ছিলাম।’
ব্যাটিংয়ে আরো সময় কাটাতে চেয়েছিলেন তামিম। কিন্তু লেগ স্পিনার সোধীর বল সুইপ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। তবে যতটুকু সময় মাঠে ছিলেন নিজের ছন্দে ছিলেন। অনসাইডে ফ্লিক করে রানের খাতা খোলা তামিম প্রথম বাউন্ডারি পেয়েছেন জেমিনসনের বলে আউটসাইড এজে। এরপর বোল্টকে স্কয়ার লেগ দিয়ে যে চারটি মেরেছেন তা ছিল ট্রেডমার্ক শট। জেমিনসনকে এরপর পুল ও শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে ফ্লিক করে আরো দুইটি চার পান তামিম। মনে হচ্ছিল তামিম নিজের ছন্দে পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সোধীকে দৃষ্টিনন্দন এক কাভার ড্রাইভ করার পর সব এলোমেলো।
ইনিংস বড় করতে না পারার আক্ষেপও আছে তার, ‘আপনারা জানেন আমি একটা ইনজুরি থেকে ফিরেছি। এজন্য আমার উইকেটে সময় কাটানো গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আপনি ফিল্ডিং করলেন কিন্তু ব্যাটিংয়ে সময় কাটালে বোঝা যায় কিভাবে আমার শরীর রিঅ্যাক্ট করছে। আগেও বলেছি, এখনও জড়তা আছে। জড়তা থাকবেও। কিন্তু এটা কিভাবে ওভারকাম করবো সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের মেলাতে হবে।’
‘আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল উইকেটে সময় কাটানো। সেটা ব্যাটিং হোক বা বোলিং। এটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ, তাই আমাকে আমার সেরা পারফর্মটাই করতে হবে। সেটাই আমি চেষ্টা করে গেছি। এটা এমন না যে আমি আসবো আর শুধু অংশগ্রহণ করবো। আন্তর্জাতিক ম্যাচ, আমাকে ভালোমানের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে পারফর্ম করতে হবে। যেটা আমি চেষ্টা করে গেছি।’
‘তবে ব্যাটিং করে আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। একটু তো ভালো অনুভব হচ্ছে। সামনের ম্যাচ যখনই আমি খেলি ওই নার্ভাসনেসটা একটু কম থাকবে। কিন্তু যেটা বললাম, আমার শরীর কিভাবে রিঅ্যাকট করবে না করবে সেটা নিয়ে আমরা মেডিকেল টিমের সঙ্গে আলোচনা করছি। এতোদিন পর আসলে যে কোনো ব্যাটসম্যানের নার্ভাসনেস থাকবে। আমি ভিন্ন কেউ নই।’ – যোগ করেন তামিম।