সারা বাংলা

বিশ্ব নদী দিবস পালন: ‘ছবি দেখি, নদী চিনি’ 

বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে হবিগঞ্জে ‘ছবি দেখি, নদী চিনি’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখা, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও হবিগঞ্জ চারুকলা একাডেমি যৌথ আয়োজনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

হবিগঞ্জের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাডস কেজি এন্ড হাইস্কুলে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ২২ জন চিত্রশিল্পী বড় ক্যানভাসে জেলার বিভিন্ন নদীর ছবি অঙ্কন করেন। এ সময় স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঘুরে ঘুরে অঙ্কিত ছবি দেখেন।

এ সময় খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেলের সভাপতিত্বে আলোচনাসভা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও বাপা হবিগঞ্জের সহ-সভাপতি তাহমিনা বেগম গিনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাডস কেজি এন্ড হাই স্কুলের অধ্যক্ষ নুর উদ্দিন জাহাঙ্গীর। বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ চারুকলা একাডেমির অধ্যক্ষ আশিস আচার্য, পরিবেশকর্মী সাইফুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, চিত্রশিল্পী লোকমান মিয়া, নার্গিস আক্তার মিশপা, তন্বী দাস, পুষ্পিতা দাস, সৃজন বৈদ্য, অলক গোপ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, এক সময় হবিগঞ্জে জালের মতো ছড়িয়ে ছিল নদী। জেলা শহর থেকে বিভিন্ন স্থানে ও পাশের জেলায় অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম ছিল নদী। নদীই ছিল যাত্রী, পণ্য পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম। অথচ গত ৫০ বছরে বেশিরভাগ নদী হারিয়ে গেছে। যেগুলো টিকে আছে, সেগুলোও দখলে, দূষণে সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে। দখল-দূষণ ও নানাবিধ অত্যাচারে বর্তমানে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে হবিগঞ্জের বেশিরভাগ নদী। অথচ ৫০ বছর আগে এই অঞ্চলে ৬৯টি নদী সচল ছিল।

বাপা কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, খোয়াই নদীর তলদেশ উঁচু। যন্ত্র দ্বারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাটি ও বালু উত্তোলনের কারণে নদীটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। বর্ষা মৌসুমে মানুষকে থাকতে হয় বন্যা আতঙ্কে।

পুরাতন খোয়াই নদী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিবেশবাদী সংগঠনের দীর্ঘ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পুরাতন খোয়াই নদী দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। সে সময় প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকা থেকে কয়েকশত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয। কিন্তু এক সময় উচ্ছেদ কার্যক্রম থেমে যায়।

তোফাজ্জল সোহেল আরও বলেন, হবিগঞ্জে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা কলকারখানা বেপরোয়াভাবে দূষণ চালিয়ে আসছে গত এক দশক ধরে। যা মানুষের সাংবিধানিক অধিকারের উপর প্রত্যক্ষ আঘাত। অথচ দূষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না, বরং দিনের-পর-দিন দূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে। কৃষিজমি খাল, ছড়া এবং নদীসহ সকল প্রকার জীবন ও জীবিকা মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে। সুতরাং নদী সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। দূষণের কারণে নদী ও হাওর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছসহ জলজ প্রাণি। এই দূষণ মেঘনা হয়ে সারা দেশব্যাপী বিস্তৃত হচ্ছে। শিল্পবর্জ্য দূষণ রোধসহ হবিগঞ্জের নদনদী রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।