প্রয়াত ড. আকবর আলি খান নির্দ্বিধায় সত্য কথা বলতে পারতেন মন্তব্য করে বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, তার গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে কোনো কিছু দেখার অসাধারণ ক্ষমতা ছিলো।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে তারা এসব কথা বলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের রসুল্লাবাদ উলফত আলী খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এর আয়োজন করেন।
বিশিষ্টজনেরা বলেন, ইতিহাস এবং অর্থনীতির ছাত্র বিধায় তিনি তার লেখায় এই দুই বিষয়ে সুন্দর সমন্বয় করেছেন। তিনি তার লেখায় সমাজ ও অর্থনীতি নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করেছেন। আমাদের দেশে সত্য বলার একটা সংকট রয়েছে। সবাই ভয়ে সত্য কথা বলতে চায় না। এক্ষেত্রে তিনি অনন্য। তিনি নির্দ্বিধায় সত্য কথা বলতে পারতেন।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম জসীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খান, ইউনাইটেড নেশন ইনফরমেশন সেন্টারের সাবেক প্রধান কাজী আলী রেজা, ড. আকবর আলী খানের মেজ ভাই জিয়া উদ্দিন খান, ডেমরা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইউনুস মোল্লা, অ্যাডভোকেট একেএম সালাউদ্দিন, সরকারি বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহীন, মহাখালী টিএন্ডটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. নূর-এ-আলম সিদ্দিকী প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি হাসান জাবেদ।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, অর্থনীতির ওপর এবং ইতিহাসের ওপর ড. আকবর আলি খানের লেখনিগুলো অকাট্য দলিল। তিনি একজন ইতিহাসের ছাত্র। কিন্তু একইসঙ্গে অর্থনীতিতেও ডিগ্রি নিয়েছেন। দুটো বিষয়েই সমানভাবে লিখেছেন। তিনি সরকারি আমলা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অধ্যাপনা করেছেন। তবে তার অধ্যাপনার জীবনের দিকটিও কিন্তু অনেকটা অনালোচিত। জীবনে তিনি একবারই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তবে সেটি জাতির বৃহত্তর স্বার্থে। তার এই কাজ একইসঙ্গে গৌরবের এবং সম্মানের। কেননা তিনি টাকা-পয়সা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সরবরাহ করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন অস্ত্র সরবরাহও করবেন। কিন্তু এ বিষয়ে তৎকালীন পুলিশের যারা দায়িত্বশীল ছিলেন, তারা একমত হননি।
তিনি বলেন, ড. আকবর আলি খান ছিলেন আপসহীন। এটি বোঝা যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। ইস্তফা দিয়ে যে নোট তিনি লিখেছিলেন তা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি লিখলেন, ‘যেখানে অবদান রাখার সুযোগ নেই, যেখানে কাজ করার সুযোগ নেই- সেখানে থাকার কোন অর্থ হয় না। ’ অনেক মানুষ আছেন, যাদের চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং নৈতিক মূল্যবোধ শক্তিশালী নয়। এক্ষেত্রে আকবর আলি খান অনন্য।
জাকির আহমেদ খান বলেন, তাকে আমি আমার শিক্ষক মনে করতাম। এখনও তাকে আমি আমার শিক্ষক মনে করি। চাকরি থাকাকালীন তিনি যেমন সক্রিয় ছিলেন, অবসরের পর অসুস্থ থাকার পর আরো সক্রিয় ছিলেন। তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ১৯৬৪ সালে। তিনি একজন গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ ছিলেন বলেই আমরা জানতাম। তখন আমি তাকে শ্রদ্ধা এবং সমীহ করতাম। কিন্তু যখন তাকে জানতে শুরু করলাম, তখন অন্য একজন আকবর আলি খানকে আবিষ্কার করি। তিনি গম্ভীর প্রকৃতির হলেও আন্তরিক ছিলেন। তিনি মানুষকে কাছে টেনে নিতে পারতেন।
কাজী আলী রেজা বলেন, ড. আকবর আলি খানের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ওনার লেখার সূত্রে। গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে কোনো কিছু দেখার ক্ষমতা ছিলো তার। তার আত্মজীবনী পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার। আত্মজীবনীতে তিনি তার সম্পর্কে সবকিছু তুলে ধরেছেন। এই বইয়ে তিনি কোনো ধরনের আত্মঅহমিকা তুলে ধরেননি। তার লেখা ও বক্তব্যের সারমর্ম তুলে ধরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
জিয়া উদ্দিন খান বলেন, তার অনেক বই লেখার পর এডিট করার আগে আমাকে দেখাতেন। তার আত্মজীবনী প্রকাশের আগে আমাকে পাঠিয়েছিলেন। আমি বিভিন্ন বিষয় দেখে দিয়েছিলাম। সে অনুযায়ী তিনি বই প্রকাশ করেছিলেন। আবেগতাড়িত হয়ে তিনি বলেন, তার স্মৃতিভারে আমরা পড়ে আছি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন শরীফ থেকে তেলাওয়াত করা হয়। আলোচনা শেষে আকবর আলি খানের রূহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া পরিচালনা করা হয়।