বাউন্সার কিংবা ফুলটস যা-ই পাচ্ছেন একের পর এক ছক্কা হাঁকাচ্ছেন! প্রাণবন্ত, চনমনে সাকিব আল হাসানকে অনেক দিন পর দেখা গেল এমন চেহারায়। কোনো জড়তা নেই, কোনো রাগডাক নেই। নেই সেন্সর! মন যা বলছে তাই করছেন। ক্রিকেট মাঠের ২২ গজে নয়, সাকিব খেললেন টি স্পোর্টসের পর্দায়!
দেশের ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনায় ওতপ্রোতভাবে সাকিবের নাম চলে আসছিল। ওয়ানডে ক্রিকেটের অধিনায়ক বলেই তার দিকে আঙুল তোলা হচ্ছিল। তার অবস্থান কী? তামিম ইকবালের বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার ভূমিকায় কতটা সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি! জানতে চেয়েছিল টি স্পোর্টস। উত্তরে একের পর এক ছক্কা হাঁকিয়ে গোটা পরিবেশকেই যেন আরো অস্থির করে দিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার।
মঙ্গলবার বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ। যেখানে তামিমকে রাখা হয়নি ফিটনেসের ঝুঁকির কারণে। বুধবার এক ভিডিওতে তামিম দাবি করেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে না খেলার প্রস্তাব দেওয়া হয় বিসিবি থেকে। কিংবা খেললেও নিচের দিকে। তা মেনে নিতে পারেননি তামিম। সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেন,‘আমি শক্তভাবে বলেছি যে এরকম যদি হয়, আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। আপনারা দরকার হলে আমাকে (দলের জন্য) বাছাই না করেন।’
তামিমকে এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কিনা তা অবগত নন অধিনায়ক সাকিব। তবে দলের প্রয়োজনে তামিমকে এমন কোনো প্রস্তাব দিলে তা দোষের কিছু নয় বলে মনে করেন না সাকিব। দলের কথা চিন্তা করে নিজের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা দেওয়ার কথাও বলেছেন অধিনায়ক। ‘আমি যেটা বললাম এটা আমার সঙ্গে কোনো আলোচনাই হয় নাই। তো এই প্রশ্ন কোথা থেকে আসছে আমি জানি না। আর যদি কেউ এমন কিছু বলে থাকে, আমি নিশ্চিত যেই বলেছে সে অথরাইজ মানুষ, এটা আগে থেকেই আলাপ করে রাখছিল যাতে করে সেটা জানা থাকলে দুই পক্ষের জন্যই ভালো হয়। এই রকম বলাতে খারাপ কিছু আছে আমি তো মনে করি না। এটা কেউ তো খারাপের জন্য বলবে না আমি নিশ্চিত।' দলের কথা চিন্তা করেই এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে মনে করেন সাকিব।
'আমি নিশ্চিত এই কথাটা কেউ বলে থাকে সে টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে যে ওকে এরকম যদি আমরা কম্বিনেশন করি, এই রকম যদি আমরা চিন্তা করি এমন অনেক কিছুই আসে একটা ম্যাচকে কেন্দ্র করে। এ রকম কম্বিনেশন বানালে কি হতো, এ রকম কম্বিনেশন বানালে কি হতো। ওই হিসেবে কেউ যদি চিন্তা করে আগের থেকেই ক্লারিফিকেশন করে রাখতে চায় আমার তো মনে হয় যে আলোচনার কোনো দোষের আছে। এমন প্রস্তাব যদি কেউ দিয়ে থাকে এটাতে কি কোনো দোষের আছে? নাকি এমন কোনো প্রস্তাবই দেওয়া যাবে না যে একজনকে আমি বলব তুমি তোমার যা ইচ্ছা কর।'
ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মার উদাহরণ টেনে বলেন, 'টিম আগে না, ব্যক্তি আগে। রোহিত শর্মার মতো খেলোয়াড় নম্বর সাত থেকে ওপেনার হিসেবে ১০ হাজার রান করে ফেলছে। ও যদি মাঝে মাঝে তিন চারে নামে বা ব্যাটিংয়ে না নামে এটা কি খুব একটা প্রবলেম হয়। এটা আমার কাছে মনে হয় একদম বাচ্চা মানুষের মতো যে আমার ব্যাট আমিই খেলব আর কেউ খেলতে পারবে না। জিনিসটা হচ্ছে এমন। টিমের প্রয়োজনে যে কেউ যে কোনো জায়গায় খেলতে রাজী থাকা উচিত। এটা টিম প্রথমে, আপনি ব্যক্তিগতভাবে ১০০ করলেন ২০০ করলেন টিম হারল তাতে কিছুই আসে যায় না।'
সাকিব ও তামিমের দূরত্বের কথা এখন অজানা নয় কারোই। মাঠের বাইরে ব্যক্তিগত সম্পর্ক না থাকায় ওই পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধও দেখান না খুব একটা। সাকিব এবার গণমাধ্যমেই তামিমের দিকে আঙুল তুলে বললেন, ‘পারসোনাল এচিভমেন্ট দিয়ে আপনি কি করবেন আসলে। আপনার নিজের নাম কামাবেন, তার মানে আপনি নিজের কথা চিন্তা করতেছেন। আপনি দলের কথা চিন্তা করছেন না। আপনি দলের কথা চিন্তা করছেন না মোটেও। মানুষ এই পয়েন্টগুলোই বোঝে না। আপনাকে যখন প্রস্তাবটা দেওয়া হয়েছে, কেন প্রস্তাবটা দেওয়া হয়েছে আপনার টিমের কোথা চিন্তা করেই দেওয়া হয়েছে। টিমের এভাবে হলে হয়তো টিমের জন্য ভালো হবে। সে কারণেই প্রস্তাবটা দেওয়া হয়েছে, যদি দেওয়াও হয়ে থাকে। এটাতে খারাপের কি আছে?
‘বিষয়টি মেনে অবশ্যই আলোচনার রয়েছে, না আমি পারব, আমি এটা পারব, তোমার কি লাগবে। তুমি বল আমাকে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব দলের জন্য। তাহলেই আপনি টিমম্যান। অন্যথায় ওইভাবে চিন্তা করলে আপনি টিমম্যানই না। আপনি খেলছেন ব্যক্তিগত রেকর্ড এবং সাফল্যের জন্য। নিজের ফেম এবং নেমের জন্য। টিমের জন্য না।' – যোগ করেন সাকিব।
দল নির্বাচন নিয়েও সাকিব খোলাখুলি কথা বলেছেন। যা অধিনায়কের চিন্তারই বহিঃপ্রকাশ, ‘সব কিছু সবাই দেখতে পেয়েছে। ভিন্নতা আছে। আর আমার তো দায়িত্ব না পুরো দলটা সিলেক্ট করার। তাই যদি হতো এশিয়া কাপের একদিন আগেই ক্যাপ্টেন আনাউন্স করার পরই টিম দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অনেক জিনিস অনেক ফ্যাক্ট চিন্তা করতে হয়। শুধু মাঠের পারফরম্যান্স না, মাঠ মাঠের বাইরে, ড্রেসিং রুম, টিম মিটিং, এটমসফেয়ার, অনেক কিছু চিন্তা করে আপনার টিমটা করতে হয়। আমিও আমি বলছি না এই সব কিছুতে আমি ইনভল্ভ। আমার কাছে মনে হয় আমি খুবই কম ইনভল্ভ এইগুলোতে।’