গ্রাম গঞ্জের হাটে-বাজারে দোতার বাজিয়ে ৭ প্রতিবন্ধীসহ ১০ সদস্যের পরিবারের খরচ বহন করছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নুরুন্নবী ইসলাম (২৬)। ভিক্ষার পথে না গিয়ে পথে পথে দোতারা বাজানো আর গান গেয়ে আয় করাই এখন তার পেশা। বাদ্যযন্ত্রে সুর তুলে বিভিন্ন হাট বাজারে প্রতিদিন গান করেন তিনি। এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই পরিবারের ভরণপোষণ করছেন এই যুবক।
নুরুন্নবীর বাড়ি উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের সাংকারচওড়া গ্রামে। তার বারার নাম এন্তাজুল হক। তিনি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তার মায়ের নাম নুরজাহান বেগম।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এন্তাজুল হক জন্মগতভাবেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম অবশ্য সুস্থ ছিলেন। নুরজাহানের সহায়তাতেই প্রথমে সংসার চলতো এন্তাজুলের। এরপর এই দম্পতির সংসারে জন্ম হয় নুরন্নবীর। কিন্তু নুরন্নবীও তার বাবার মতোই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছিলেন। এর দুই বছর পর জন্ম নেয় এন্তাজুল-নুরজাহানের দ্বিতীয় সন্তান নুর আলম (২৪)। কিন্তু তিনিও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেন। একইভাবে এই দম্পতির তৃতীয় সন্তান লিমন ইসলাম (২২) ও চতুর্থ সন্তান রেশমারও (১৩) জন্ম হয় দৃষ্টিশক্তি ছাড়া। বাবা-মাসহ পরিবারটির ছয়জন সদস্যের মধ্যে পাঁচজনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।
দোতারা বাজিয়ে গান শুনাচ্ছেন নুরুন্নবী
নুরজাহানই সংসারটির একমাত্র সুস্থ ও উপার্জনক্ষম ছিলেন। তবে বয়স আর অসুস্থতার কারণে এখন আর কাজ করতে পারেন না তিনি। সর্বশেষ গত ৯ বছর আগে নুরজাহান-এন্তাজুল দম্পতির সংসারে সুস্থ সবল শিশু সেমন ইসলামের জন্ম হয়। তখন সাতজনের পরিবারে পাঁচজনই ছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এরই মধ্যে বড় দুই ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন নুরজাহান-এন্তাজুল দম্পতি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দুই ছেলেকে বিয়ে করতে কোনো সুস্থ মেয়ে রাজি না হওয়ায় একজনকে মানসিক ও একজনকে শ্রবণ প্রতিবন্ধী মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন তারা। এনিয়ে এখন তাদের পরিবারে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাতজনে। বড় দুই ছেলের ঘরে নাতি-নাতনি পেয়েছেন নুরজাহান-এন্তাজুল দম্পতি। তবে নাতি-নাতনিরা সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিয়েছে।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নুরন্নবী বলেন, গান বাজনা করতে হাটে-বাজারে যেতে হয়। সেখানে একা যাওয়া এবং আসর জমানো কষ্টকর। প্রথমদিকে অন্যের সহায়তা নিতাম। কিন্তু যাকে সঙ্গে রাখি সে চুরি করে। তাই একাই চলি। গান গেয়ে ৩০০-৪০০ টাকা আয় হয়, তা দিয়েই চলছে এতোবড় সংসার। স্থায়ীভাবে স্বাবলম্বী করার পথ করে দিতে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের নিকট অনুরোধ জানান তিনি।
দুর্গাপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, একই পরিবারের ৭ প্রতিবন্ধীর মধ্যে ৫ জনের ভাতা করে দেওয়া হয়েছে। বাকি দুজনের ভাতা হবে সে কাজ চলমান রয়েছে। তবে ভাতা আর নুরুন্নবীর গানে সংসার চলে না তাদের। বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন এই জনপ্রতিনিধিও।
আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, ওই পরিবারের ৫ জন ভাতা পাচ্ছেন। বাকি প্রতিবন্ধীদেরকেও সমাজসেবা অধিদপ্তর ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। এছাড়াও তাদের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।