অর্থনীতি

গত অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৮৬ শতাংশ

অতীতের ধারাবাহিকতায় গত অর্থবছরেও সংশোধিত বাজেট পুরোটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ৮৬.৪৫ শতাংশ। মূল্য বাজেটের সাথে তুলনা করলে এই হার ৮৪ শতাংশ। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বাজেট বাস্তবায়নের এ হিসাব চূড়ান্ত করেছে।

দেখা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে বাজেট বাস্তবায়ন হার প্রায় একই মাত্রায় অবস্থান করছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল ২০২০-২০২১ অর্থবছরে, সে সময় বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ৭৬ শতাংশ। মূলত কোভিডের কারণে সেই বছর বাজেট বাস্তবায়নের এ অবস্থা ছিল বলে অর্থ বিভাগের এক সূত্র জানিয়েছে। তবে এরপরের অর্থবছর ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছিল ৮৭ শতাংশ।

সূত্র জানায়, গত জুনে শেষ হয়ে যাওয়া ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার নির্ধারিত ছিল ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। পরবর্তীতে তা কমিয়ে সংশোধিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছিল ছয় লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে অর্থবছর শেষে মোট ব্যয় হয়েছে পাঁচ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে গত অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মূল বাজেটের ৮৪ দশমিক ২১ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের ৮৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের মূল ও সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল একই অর্থাৎ, তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে তিন লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অন্য দিকে এনবিআর-বহির্ভূত কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ছাড়া প্রাপ্তির পরিমাণ ধরা হয়েছিল ৪৫ হাজার কোটি টাকা এবং এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্র অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

অর্থ বিভাগের সূত্র মতে, সমাপ্ত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে নিট ৭৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র খাতে সার্বিকভাবে তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করা হয়েছে।

বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাধারণভাবে কোনো অর্থবছরেই পুরো বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। এমনকি সংশোধিত বাজেটও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। গত পাঁচ বছরে মূল বাজেটের গড়ে ৮১ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের গড়ে প্রায় ৮৭ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।

২০২১-২০২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে পাঁচ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে মোট ব্যয় হয়েছে পাঁচ লাখ ২১ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। এর আগের ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল মূল বাজেটের ৮১ শতাংশ। তবে সংশোধিত বাজেটে যা হয়েছিল ৭৬ শতাংশ। আলোচ্য অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে মোট ব্যয় হয়েছে চার লাখ ৬০ হাজার ১৬০ কোটি টাকা।

এদিকে, গত জুনে চলতি অর্থবছরের বাজেট পেশকালীন যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়, এতে দেখা যায়, সমাপ্ত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই ২০২২-মার্চ ২০২৩) মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল মোট তিন লাখ দুই হাজার ৮৯২ কোটি টাকা এবং বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল মূল বাজেটের ৪৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ ও সংশোধিত বাজেটের ৪৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সে হিসাবে অর্থবছরের শেষ তিন মাসে (এপ্রিল-জুন ২০২৩) বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে ৪১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বলা যেতে পারে, অর্থবছরের শেষ তিন মাসে পূর্ববর্তী ৯ মাসের প্রায় সমান বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজেট বাস্তবায়ন সাধারণত অর্থবছরের প্রথম দিকে ধীর গতিতে চলে। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা ছাড়া অন্যান্য সব আইটেমের বিপরীতে ব্যয়ের পরিমাণও কম থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মেরামত সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পূর্ত কাজ এবং মালামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষদিকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এসব কারণে অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে ব্যয় বেড়ে যায়।

অর্থ বিভাগের মতে, সময় মতো ও সুষ্ঠু বাজেট বাস্তবায়ন এখনো একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ। বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। উপরন্তু বছরের শেষে এসে সরকারকে অপরিকল্পিত ঋণের দায়ভার গ্রহণ করতে হয়। ফলে আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না। এ অবস্থায় বাজেট সুষ্ঠুভাবে ও সময়মতো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে অপরিকল্পিত সরকারি ঋণ এড়ানো এবং সরকারের ঋণজনিত ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসবে।