ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর প্রভাবে সমুদ্র ছিল উত্তাল। সন্ধ্যায় শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। এরই মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন হলো পর্যটন শহর কক্সবাজারে। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্টে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পাঁচ দিনব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা। আয়োজকেরা জানান, কক্সবাজারে দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন করা হয়। এবার ১৫১টি মণ্ডপের দুই শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
একই সময়ে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখাল নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের সাগর, নাফনদী, উখিয়ার ইনানী সৈকত ও রেজুনদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে আজ বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্টে উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, চৌফলদণ্ডী ছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে সনাতম ধর্মের বিশ্বাসীরা প্রতিমা বিসর্জন দিতে আসেন। এসময় বালুচরে রাখা দুর্গা প্রতিমা ঘিরে চলে ভক্তদের শেষ আরাধনা। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতেও নাচে-গানে আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতে। বিসর্জন ঘিরে পর্যটকসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন লাখো মানুষ। সব ধর্মের মানুষের পদচারণায় বালিয়াড়িতে বসে সম্প্রীতির মিলনমেলা।
দুপুর থেকে বিজয়া মঞ্চে চলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিকেল ৪টায় বিজয়া দশমীর কথামালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন কক্সবাজারের পর্যটনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব ধর্মের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় একিভূত হয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে জড়ো হয়েছেন। দেখে মনে হচ্ছে, এই কক্সবাজার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।’
কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল করের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সাংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমেদ মোস্তাক, জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম, ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিললুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রনজিত দাশ, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
বক্তব্য শেষে পড়া হয় বিসর্জন মন্ত্র। এরপর একে একে সাগরে বিসর্জন দেওয়া হয় ২০০ প্রতিমা। বিসর্জন ঘিরে পুরো সৈকত ছিল নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা।