খেলাধুলা

বিশ্বকাপের ফুল ফুটল ক্রিকেট নন্দনকাননে

অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। খুলে যাচ্ছে বন্ধ দুয়ার। সুবাস ছড়ানো শুরু করেছে বিশ্বকাপের ফুল। ক্রিকেটের নন্দনকান ইডেন গার্ডেনসে ফিরছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে একটু ভাগ্যবান বলা যায়। বিশ্বকাপের দশ ভেন্যুর তিনটিতেই প্রথম ম্যাচ পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের ম্যাচ দিয়ে ধর্মশালার বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়শেন স্টেডিয়ামে ভারত ও বাংলাদেশের ম্যাচ দিয়ে স্টেডিয়ামের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এবার ক্রিকেটের ক্রিকেটের নন্দনকানন— ইডেন গার্ডেনস। 

দীর্ঘ ১২ বছর পর আবার বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজনের অপেক্ষায় সুদৃশ্য ইডেন গার্ডেনস। ভারতের মাটিতে এ পর্যন্ত আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট হয়েছে তিনবার। ১৯৮৭, ১৯৯৬ আর ২০১১। তিনটেই পঞ্চাশ ওভারের। যার মধ্যে ’৮৭ বিশ্বকাপ ফাইনাল বসেছিল ইডেনে। এরপর ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি ফাইনাল। এবার সেই ইডেন পেয়েছে সেমিফাইনালসহ পাঁচ ম্যাচ। ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের পর অনত্যম হাইভোল্টেজ ম্যাচ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এই মাঠেই খেলবে। এছাড়া ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচও আছে এখানে। সবশেষ গ্রুপপর্বে ইংল্যান্ড-পাকিস্তানও খেলবে। এরপর দুই সেমিফাইনালের একটি মিলবে ইডেন গার্ডেনসে।

২০১১ বিশ্বকাপে ইডেন তিন ম্যাচ আয়োজন করলেও ভারতের কোনো ম্যাচ পায়নি। এ নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। ভারতের সবচেয়ে পুরোনো স্টেডিয়ামে মাহেন্দ্র সিং ধোনিরা খেলবেন না তা কি করে হয়?

শেষবার এই মাঠে ভারত বিশ্বকাপ খেলেছিল ১৯৯৬ সালের ১৩ মার্চ। ভারতীয় ক্রিকেটের অভিশপ্ত সেই রাতের কথা ভুলতে পারে না কেউই। চোখের জলে ক্রিকেটের নন্দনকানন ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া বিনোদ কাম্বলিকে মনে রেখেছে সবাই। সেমিফাইনালের পরাজয় ভারতবাসীকে করে তুলেছিল শোকস্তব্ধ। দলের নিশ্চিত পরাজয় জেনে ক্রিকেট সমর্থকরা অশান্ত হয়ে উঠে শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়দের দিকে বোতল ছুঁড়ে মারেন। শুরু হয়েছিল আগুন ধরানো। অবস্থা বেগতিক দেখে মাঠ ছেড়ে খেলোয়াড়রা উঠে যান। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ম্যাচ রেফারি শ্রীলঙ্কাকে জয়ী ঘোষণা করে। বিশ্বকাপের ফাইনাল থেকে সেদিন মাত্র এক কদম দূরে ছিল ভারতীয়রা। কিন্তু সেই স্বপ্ন ক্রিকেট নন্দনকাননে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

২০১৬ সালে এ মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে এসে হৃদয় ভেঙেছিল বাংলাদেশরও। খেলা যখন বাড়ির পাশে কলকাতায়, আর প্রতিপক্ষ যখন পাকিস্তান-প্রত্যাশা ছিল ইডেন গর্জে উঠবে বাংলাদেশের জন্যই। কিন্তু ইডেন গার্ডেনসের গ্যালারি ছিল একেবারে ভিন্ন চেহারায়। বাংলাদেশের লাল-সবুজের চেয়ে বেশি উড়েছিল পাকিস্তানের চাঁদ-তারা। পাকিস্তানের জয়ধ্বনির স্লোগানে হারিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের সমর্থনের কণ্ঠ।

ভারতের অনান্য মাঠের মতো এখানেও বাংলাদেশের খেলার অভিজ্ঞতা একেবারে কম। ১৯৯০ সালে এশিয়া কাপের একটি ম্যাচ খেলেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ৭১ রানে হেরে যাওয়া সেই ম্যাচে ৭৮ রান করেছিলেন আতাহার আলী খান ও ৩৩ করেছিলেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু।

এবারের বিশ্বকাপে টানা চার ম্যাচ হারের পর বাংলাদেশ খুব ভালো অবস্থানে নেই। সেমিফাইনাল খেলার লক্ষ্য নিয়ে আসলেও যে পারফরম্যান্স হওয়ার কথা তেমন কিছুই হচ্ছে না। তাতে নিজেদের লক্ষ্য পূরণ থেকে ক্রমেই দূরে সরে আসছে। যদিও কাগজে কলমে এখনও টিকে আছে সম্ভবনা। শেষ চার ম্যাচে চার জয় এবং অন্যদের জয়-পরাজয়ে সেরা চারে যাওয়ার সুযোগও থাকবে। পথ হারিয়ে বাংলাদেশ এখন অতদূরের চিন্তা করছে না। সামনে যে চারটি ম্যাচ আছে সেগুলো নিয়েই ভাবনা। 

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি পাওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বিশ্বাস করেন একটি জয় পুরো দলের চেহারা বদলে দেবে, ‘আমরা যেটা চেষ্টা করতে পারি বাংলাদেশের জন্য ম্যাচ জিততে। আমরা চেষ্টা করছি। সামনেও কঠোর পরিশ্রম করবো। হয়তো হচ্ছে না। একটা ম্যাচ যদি জিতি আপনারা ভিন্ন বাংলাদেশকে দেখবেন।’

দুদিন পর ইডেন গার্ডেনসে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। বাছাইপর্ব পেরিয়ে বিশ্বকাপে এসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ডাচরা। এছাড়া বিচ্ছিন্ন কয়েকটি পারফরম্যান্সে তারা ভয় দেখিয়েছে অন্যান্য প্রতিপক্ষকেও। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১০ সালে একটি জয় পাওয়া নেদারল্যান্ডস এবারও অঘটন ঘটাতে চাইবে বলার অপেক্ষা রাখে না। হারের মিছিল থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকা ডাচদের হারিয়ে লড়াইয়ে ফিরতে পারে কিনা সেটাই দেখার। ক্রিকেটের নন্দনকানন দুই দলকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত। ব্যাট-বলের উত্তাপ ছড়িয়ে শেষ হাসিটা কে হাসে সেটাই দেখার।