খেলাধুলা

দিল্লির বায়ুদূষণে আতঙ্কিত বাংলাদেশ

দিল্লির বায়ুদূষণ নিয়ে নতুন করে বলার কী আছে। ভারতের রাজধানী দিল্লির বায়ুদূষণের বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’। বছরের শেষ দিকে দিল্লিতে বায়ুদূষণ নিয়ে শুরু হয়ে যায় ‘হাঙ্গামা।’ এবারও তা-ই হচ্ছে। আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঢাকা। রীতিমতো গ্যাস চেম্বার। সময় যত গড়ায় ধোঁয়ার উৎপাত ততো বাড়ে।

দূষিত বায়ুতে স্বাভাবিক জীবন এখানে বিপন্ন। প্রায়ই এই শহরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। দু’দিন হলো এখানকার প্রাইমারি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয়রা ধারণা করছেন স্কুল-কলেজও বন্ধ হয়ে যাবে কিছুদিনের ভেতরে।

গত সপ্তাহে দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ছিল পাঁচ’শ-এর কাছাকাছি। গতকাল একিউআই ছিল ৬১১। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি একিউআই ৪০০-৫০০ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে মারত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। সেখানে দিল্লির বেশ কিছু জায়গায় গতকাল ও আজ একিউআই ছয়’শ ধরা পড়ে।

বায়ু দূষণের দিক থেকে দিল্লি বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি শহরের একটি। বছরের এই সময়টিতে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বিশেষ করে দিল্লির আশেপাশে পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও আরও কয়েকটি শহরে হাজার হাজার একর জমিতে নতুন বীজ বোনার আগে পুরোনো ফসলের গোড়া পোড়ানো হয়। সেই ধোঁয়ার কুণ্ডলি ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের সব শহরে। যা জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বকাপে নিজেদের পরবর্তী ম্যাচ খেলতে এসে রীতিমত উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ৬ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলবেন সাকিবরা। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পাওয়ার কিছু আর নেই। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে হলে শেষ দুই ম্যাচে জিততে হবে। নয়তো শূন্যহাতে বিদায়।

তবে সেই লড়াইয়ের আগে প্রস্তুতি নিতে ক্রিকেটারদের দিল্লির দূষিত পরিবেশে মাঠে নামিয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না টিম ম্যানেজমেন্ট। এজন্য আজ সন্ধ্যা ৬টায় যে অনুশীলন হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল করেছে বাংলাদেশ। বাড়তি একদিন বিশ্রামে পাঠিয়ে তাদের সতেজ, সুস্থ রাখতে চাইছে।

গতকাল ক্রিকেটাররা দিল্লির লা মেরিডিয়ান হোটেল থেকে বেরিয়ে এদিক-সেদিক গিয়েছিলেন। যারা হোটেল থেকে বেরিয়েছেন প্রায় প্রত্যেকেই কাঁশির সমস্যা অনুভব করছেন। আজ জুমা’র নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় দলের প্রায় প্রত্যেকেই মুখে মাস্ক পড়েছিলেন। হোটেলের পাশেই হাঁটা দূরত্বে তারা নামাজে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে হোটেলেই অবস্থান করেছেন।

দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে বলেছেন, ‘দিল্লির বায়ুদূষণ নিশ্চিতভাবেই উদ্বেগজনক। কন্ডিশন কালকের থেকে আজকে বেশি খারাপ হওয়াতে আমরা সুযোগটি (অনুশীলন) নিইনি আসলে। যেহেতু আরও দুটি দিন আছে ট্রেনিংয়ের। অনেকেরই কালকের ওয়েদারে বের হয়ে একটু কাঁশির সমস্যা হচ্ছে। এজন্য রিক্স ফ্যাক্টর তো থাকছেই। শরীর যেন আবার খারাপ না হয়ে যায়। জানি না এটা (আবহাওয়া) আসলে বেটার হবে কিনা। যদি হয় তো খুব ভালো। না হলে মানিয়ে নিতে হবে।’

দিল্লির এমন বাযুদূষণ ২০১৯ সালে খেলতে এসেও টের পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ভারতের বিপক্ষে একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। জয় পাওয়া সেই ম্যাচটিতে দুই দলই খেলেছিল প্রবল ঝুঁকি নিয়ে। ম্যাচের আগে ও অনুশীলনের দিন বাংলাদেশের ক্রিকেটার লিটন দাস সর্বক্ষণিক মাস্ক পড়েছিলেন। সেই ম্যাচটি দিল্লি থেকে না সরানোয় হতাশা প্রকাশ করেছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

তবে ম্যাচ সফলভাবে আয়োজনে স্টেডিয়ামের আশপাশে কর্মযজ্ঞ চালিয়েছিল আয়োজকরা। স্টেডিয়ামের বাইরে শ’য়ে শ’য়ে ওয়াটার ক্যানন রাখা হয়েছিল। একটু পর পানি ছিঁটাচ্ছিল পুরো স্টেডিয়াম এলাকায়। এছাড়া যান চলাচলও নিয়ন্ত্রিত রেখেছিল দিল্লি পুলিশ। এবার কি করে সেটাই দেখার। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার এই ম্যাচ দিয়েই দিল্লির বিশ্বকাপের ম্যাচ শেষ হতে যাচ্ছে। এই মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ খেলেছে। ওই সময়ে পরিস্থিতি এমন বিরুদ্ধ ছিল না।

আজ বাতিল করলেও নিজেদের পরবর্তী ম্যাচের জন্য পুরোদমে একদিন ট্রেনিং করবে বাংলাদেশ। শনিবার পুরো দল নিয়ে অনুশীলনের পর রোববার ঐচ্ছিক অনুশীলন দেবে বাংলাদেশ। সোমবার মাঠে নামবে খেলতে।

খালেদ মাহমুদ যোগ করেছেন, ‘কাল ট্রেনিং করতেই হবে আমাদের। যেহেতু ৬ তারিখ খেলা আমাদের। দুইটা দিন আমাদের হাতে থাকবে । চাই যে ছেলেরা পুরোপুরি ফিট থাকুক। পরের ম্যাচটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।’