সংবাদ সম্মেলনের এই এক সমস্যা! আগে প্রশ্ন পরে উত্তর। রীতিটা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের জন্য পাল্টানো হলে ভালো হতো। নয় তো আর কী? গতকাল দিল্লিতে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে যেভাবে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন, চোখে মুখে তার অবয়ব, রাগে ক্ষোভে যেভাবে উগরে যাচ্ছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল তাকে বলা উচিত, আপনি কী কিছু বলতে চান? সেই সুযোগটি নেই। আইসিসির গাইডলাইন যে আছে!
দলের প্রতিনিধি হয়ে অধিনায়ক, কোচ কিংবা খেলোয়াড়রা সংবাদ সম্মেলনে হাজির হওয়ার রীতি। দিল্লিতে ম্যাথুজ এলেন। বোঝাই যাচ্ছিল, নিজের টাইমড আউট নিয়ে কথা বলতেই আগ্রহ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা।
প্রথম প্রশ্নটাই তার কোর্টে গেল, টাইমড আউট নিয়ে, ‘আপনাকে যখন আউট হতে হলো তখন কেমন অনুভব করছিলেন। আপনি যদি অপরপ্রান্তে থাকতেন ভিন্ন কিছু করতেন?’
দুই মিনিটের বক্তব্য-ই দিয়ে দিলেন ঝাঁঝালো কণ্ঠে, ‘আমি ভুল কিছু করিনি। নিজেকে তৈরি করে ক্রিজে যাওয়ার জন্য আমার হাতে ২ মিনিট সময় ছিল এবং সেটা আমি করেছি। আমার (হেলমেট) সরঞ্জামে সমস্যা হয়েছিল। আমি জানি না কাণ্ডজ্ঞান কোথায় হারাল। অবশ্যই সাকিব ও বাংলাদেশের জন্য এটা লজ্জাজনক। যদি ওরা এভাবেই খেলতে চায় এবং এত নিচে নামে, আমার মনে হয় ওদের কোথাও একটা বড়সড় ঝামেলা আছে।’
ম্যাথুজ যোগ করেন, ‘হেলমেটটা ভেঙে যাওয়ার পরও হাতে ৫ সেকেণ্ডের মতো সময় ছিল। আমি বোঝাতে চাইছি, আমি শুধু হেলমেটটা পাল্টাতে চাইছিলাম। তাই এটা একদমই কাণ্ডজ্ঞানের (কমন সেন্স) ব্যাপার। আমি মানকাডিং কিংবা অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড নিয়ে কথা বলছি না। এটা একদমই কাণ্ডজ্ঞানের ব্যাপার, যেটার অনুপস্থিতি খেলাটায় অসম্মান বয়ে এনেছে। এটা ভীষণ লজ্জার।’
বাংলাদেশের জন্য নূন্যতম কোনো সম্মান ম্যাথুজ দেখাচ্ছেন না। শুধু বাংলাদেশ নয়, ম্যাথুজ আম্পায়ারদের ওপর ক্ষোভ ঝারছেন, ‘আজকের (গতকাল) দিন পর্যন্ত তার (সাকিব) ও বাংলাদেশ দলের জন্য আমার সর্বোচ্চ সম্মানটাই ছিল। আমরা সবাই জেতার জন্যই খেলি এবং সেটা নিয়মের ভেতরে থেকেই জেতার চেষ্টা করি। কিন্তু আজ (গতকাল) আমার ঘটনায় নিয়মই বলছে, আমি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই (ক্রিজে) ছিলাম। আমাদের কাছে ভিডিও আছে। আমরা এ নিয়ে পরে বিবৃতি দেব। ভিডিও থেকে ফুটেজের প্রমাণও আছে। আমি এখানে শুধু কথার কথা বলছি না, প্রমাণ নিয়েই বলছি।’
খেলা শেষে সোজা ড্রেসিংরুমে ঢুকে যান শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়রা। ম্যাচ শেষে দুই দল হাত মেলান। বিজয়ী দলকে অভিনন্দন জানানো হয়। কিন্তু সেটা করেনি শ্রীলঙ্কা। দল নিয়ে কুশল মেন্ডিস সোজা মাঠ থেকে বেরিয়ে যান। এমন অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য ম্যাথুজের কোনো দুঃখপ্রকাশ নেই। বরং যা করেছেন ঠিক করেছেন বলে দাবি তার, ‘হ্যাঁ, যারা আমাদের সম্মান করবে, তাদেরকে সম্মান দিতে হবে। আম্পায়াররাসহ আমরা সবাই এই সুন্দর খেলাটির প্রতিনিধি। ফলে আপনি যদি সম্মান না করেন, কাণ্ডজ্ঞান না ব্যবহার করেন, তাহলে আর কী চাইছেন?’-বলতে থাকেন ম্যাথুজ।
১২ মিনিটের সংবাদ সম্মেলন, ৯টি প্রশ্ন। সবকটিই টাইমড আউট নিয়ে। শ্রীলঙ্কা যে ম্যাচটা হেরেছে, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির লড়াই থেকে আরেকটু পিছিয়ে গেছে সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই। এই বিশ্বকাপে তারা বাছাইপর্ব পেরিয়ে এসেছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেটিও নেই।
ম্যাথুজ কথা শেষ করেন। কিন্তু মনে হচ্ছিল টাইমড আউটের ‘যন্ত্রণা’ থেকে বের হতে পারছিলেন না। আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলেন। আরো ক্ষোভ ঝারতে চাচ্ছিলেন। দিল্লিতে রাত গভীর হতে থাকে। ম্যাথুজের যন্ত্রণাও বুঝি বাড়তে থাকে! বাংলাদেশ টাইমড আউট করে তাকে ইতিহাসের পাতায় যেভাবে জড়িয়ে দিলেন তা হয়তো তার ক্রিকেটীয় জীবনের বড় ‘ধাক্কা’ হয়ে থাকবে।
সাকিবের সঙ্গে ২০০৬ সাল থেকে খেলছেন ম্যাথুজ। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে একসঙ্গে পথচলা। দুজনই খেলছেন শেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এমন বিরাট মঞ্চে সাকিবের কোনো ছাড় না দেওয়া মানসিকতায় ম্যাথুজ যেভাবে আটকে গেলেন তা ক্রিকেট বিশ্বও চিরকাল মনে রাখবে। কেননা ক্রিকেট বিশ্ব প্রথম টাইমড আউট দেখল ৪৬৯৫তম ম্যাচে এসে।