খেলাধুলা

বড় দল হিসেবে বাংলাদেশ এখনো দাঁড়াতে পারেনি: ম্যাকেঞ্জি

লম্বা সময় পর বাংলাদেশি কারও ফোন পেয়ে নিল ম্যাকেঞ্জি চমকে উঠলেন, ‘আমাকে হঠাৎ মনে পড়লো?’ এপাশ থেকে উত্তর গেল, ‘আপনার প্রাক্তন শিষ্যরা বিশ্বকাপে যা খেলছে…তাতে মনে হলো একটু কথা বলি। যেহেতু কাজ করেছেন, নিশ্চয়ই ওদের কোথায় সমস্যা হলো বলতে পারবেন।’

ম্যাকেঞ্জি কথা বলে যান, ‘সত্যি বলতে আমি বাংলাদেশের খেলা খুব একটা দেখিনি। তাই খুব বেশি অ্যানালাইসিস করার সুযোগ দেখি না।’ খুব আগ্রহ না থাকলেও কথা চালিয়ে গেলেন দুই বছর বাংলাদেশে কাজ করে যাওয়া এই প্রোটিয়া কোচ। 

চার বছর আগে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে দলের সঙ্গে খুব ভালোভাবে যুক্ত ছিলেন ম্যাকেঞ্জি। বর্তমানে যারা খেলছেন তাদের সঙ্গেও লম্বা সময় কাজ করেছেন। চার বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাওয়ার কথা অনেকটা পথ। অথচ এবারের বিশ্বকাপে আট ম্যাচে বাংলাদেশের জয় কেবল দুইটি। দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্স নিয়ে ম্যাকেঞ্জির হতাশা ফুটে উঠল, ‘বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে একই অবস্থানে। যা মোটেও কাম্য নয়। বিশ্বকাপের সামগ্রিক পারফরম্যান্স স্পষ্ট বলে দিচ্ছে বড় দল হিসেবে এখনও দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ।’

সঙ্গে যোগ করেন, ‘বাংলাদেশ তাদের নিজস্ব কন্ডিশনে অনেক ভালো। বিদেশি কন্ডিশনেও গত কয়েক বছরে এগিয়ে গেছে। কিন্তু এই ধরণের টুর্নামেন্টে আপনার খানিকটা ভাগ্যের দরকার। কিন্তু তারা নিশ্চিতভাবে খেলোয়াড় এবং লোকদের জন্য যা করা উচিত ছিল তা করেনি।’

পারিবারিক কারণে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব ছাড়ার কিছুদিন পরই ম্যাকেঞ্জিকে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট কাজে লাগায়। নিয়োগ দেওয়া হয় হাই পারফরম্যান্স ব্যাটিং কোচ হিসেবে। এরপর জাতীয় দলে কাজ করার সুযোগও মিলেছিল। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে তাকে ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়। এখন নিজ দেশে থেকে তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশে থাকাকালীন লিটন, শান্তদের মতো তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে বেশি কাজ করেছিলেন ম্যাকেঞ্জি। যারা এখন জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটার। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবির বড় কারণ ব্যাটিং। টপ অর্ডারে লিটন ও শান্ত আড়ালে থাকায় ব্যাটিং ঠিকঠাক হয়নি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেও তাদের অবস্থা এমনই ছিল। পারফরম্যান্সে অধারাবাহিক। হাতের মুঠোয় পাওয়া সুযোগ নষ্ট করলেও তাদের সামর্থ্য নিয়ে পুরো বিশ্বাস ছিল ম্যাকেঞ্জির। এজন্য লাগাতার সুযোগ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আস্থা রাখছিলেন।

‘আমি মনে করি, বাংলাদেশ দলে অনেক দক্ষতাসম্পন্ন এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। এই যেমন লিটন দাস। ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশিদের অনেক আবেগ রয়েছে। যে কারণে খেলোয়াড়দের উপর চাপ পড়ে যায়। সভাপতি বলতেন, তিনি সাফল্য চান এবং তিনি অবশ্যই একজন ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে চাচ্ছেন দল ভালো করুক।’

‘কিন্তু আপনাকে বুঝার মতো মাথা থাকতে হবে। আপনার বুঝতে হবে যে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট একটি কঠিন জায়গা। আপনার লোকদের ভালো সুযোগ দিতে হবে এবং ভালো দেখে নির্বাচন করতে হবে। তাদেরকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। লিটন বাংলাদেশের জন্য দারুণ কিছু অবদান রেখেছে। সে ভবিষ্যত। শান্তর বেলায়ও একই কথা। যখন আমি ওখানে ছিলাম, আমরা শান্তকে দলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলাম। আমরা তার প্রতিভা ও সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলাম।’ – বলেছেন ম্যাকেঞ্জি।

খেলোয়াড়দের ওপর আস্থার পাশাপাশি ম্যাকেঞ্জি জাতীয় দলের সংশ্লিষ্টদের কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার এবং বাইরের প্রভাবমুক্ত রাখার কথা বললেন।  

‘ওখানে সবসময় বাইরের লোকদের একটা চাপ ছিল। আপনি জানেন, কোচদের একটা কাজ করার জন্য বেছে নেওয়া হয় এবং তাদেরকে তাদের মতো কাজ করতে দেওয়া প্রয়োজন। আমরা অনেকেই বলেছিলাম যে শান্তর একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আসা উচিত। সে এই ধরণের কঠিন পরিশ্রমী ক্রিকেটার। এটা বুঝতে হবে এবং পরিধি বাড়াতে হবে।’

‘আপনি ক্রিকেট কোচদের দক্ষতার জন্যই তাদের নিয়োগ করেন। তাই আমি মনে করি এটা একদিকে, বাকিগুলো অন্যদিকে। বাংলাদেশে কাজ করা সবসময়ই চমৎকার। আপনার কাছে অনেক প্রতিভা আছে। কিন্তু তাদেরকে আপনার দেখতে হবে এবং বাস্তববাদী হতে হবে।’

বিশ্বকাপে এবার বড় স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল বাংলাদেশ। আইসিসি সুপার লিগে পয়েন্ট তালিকার তিনে থাকায় সবারই বিশ্বাস ছিল বিশ্বকাপে আগের সব বারের চেয়ে পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। কিন্তু মাঠে নামার আগেই সব ওলটপালট। তামিমের হঠাৎ অবসর কাণ্ড। এরপর অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো। সাকিবের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ এবং সবশেষে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে তামিমের না থাকা পুরো দলকেই অগোছালো করে দেয়।

অসুখী সংসারে সাকিব আরও আগুন ধরিয়ে দেন এক সাক্ষাৎকারে। যেখানে এক সময়ের প্রিয়তম বন্ধুকে বানিয়েছেন খলনায়ক। স্বার্থপর, টিমম্যান নন বলতেও দ্বিধা করেননি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের দুই সুপারস্টারের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নেই লম্বা সময় ধরে। বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে থাকাকালীন এমন কিছু অবশ্য টের পাননি বলে দাবি করলেন ম্যাকেঞ্জি।

‘আমি তাই বলছি যা বলতে পারবো। আমি যখন বাংলাদেশে ছিলাম তখন সাকিব-তামিমের সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল। আসলেই ভালো ছিল। তাদের মাঝে বন্ধুত্বের শক্ত একটা বন্ধন ছিল। তাই স্পষ্টতই এই মুহূর্তে এটা (দূরত্ব) বাংলাদেশ ক্রিকেটে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু আমি আসলেই এ ব্যাপারে যথেষ্ট অবগত নই।’