কয়েকশত বছর আগের কথা। পাশাপাশি রোপণ করা হয়েছিল অথবা জন্মেছিল বট-পাকুড় গাছ। ধীরে ধীরে বড় হয় গাছ দুটি। পরস্পরের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যায়। গাছ দুটিকে ঘটা করে বিয়েও দেওয়া হয়। এখন পুরো পাঁচ বিঘা জমিতে ছড়িয়েছে গাছ দুটির সংসার। ঢাকার ধামরাইয়ের বাইশাকান্দা ইউনিয়নের ষাইট্টা গ্রামের এ গাছ দুটির নাম ছড়িয়েছে আশপাশের এলাকায়। বহু দর্শনার্থী নিয়মিত ভিড় জমান সেখানে।
স্থানীয়রা জানান, বংশ পরম্পরা তারা শুনেছেন, কয়েকশত বছর আগে ওই গ্রামের দেবীদাস পরিবারের সদস্যরা গাছ দুটি রোপণ করেন। একে অপরকে জড়িয়ে তারা বেড়ে উঠতে থাকে। ওই সময় বটগাছকে নারীর রুপে আর পাকুড় গাছকে মনে করা হতো পুরুষের রুপ হিসেবে। সেই সময় সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে, দাস বংশের পূর্বসুরিরা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ দিয়ে ব্রাহ্মণের মাধ্যমে বৈদিক মন্ত্র পাঠ করিয়ে গাছ দুটির বিয়ে দেন। সেই বিয়েতে যোগ দেন বহু মানুষ। সেখান থেকে গাছ দুটি স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরিচিত।
বর্তমানে গাছ দুটির অবস্থান পাঁচ বিঘারও বেশি জমিজুড়ে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন এ যুগল গাছ দেখতে।
এখানে লোকমুখে প্রচলিত আছে, বহু বছর আগে একবার এই বট-পাকুড় গাছের নিচ দিয়ে ইটভর্তি ট্রাক যাওয়ার সময় গাছের ডালের সঙ্গে আটকে যায়। পরে ওই ট্রাক-চালক বটগাছের ডাল কেটে ট্রাক নিয়ে যায়। এতে তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের পরামর্শে বটগাছের নিচে কয়েক কেজি বাতাসা আর মোমবাতি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করার পর ওই ট্রাক-চালক সুস্থ হন।
এছাড়াও কার্তিক সরকার নামে এক কৃষকের জমিতে বটগাছের ডাল ছড়িয়ে পড়লে চাষ করা সমস্যা হয়ে যায়। পর তিনিও তার জমিতে যাওয়া বট গাছের ওই ডাল কেটে ফেলেন। এরপর কার্তিক সরকারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকার পর অনেকের পরামর্শে ওই বটগাছের নিচে মন্দির নির্মাণ করে সেখানে পূজা-অর্চনা করতে থাকেন।
এমন অনেক ঘটনা প্রচলিত রয়েছে এই বট-পাকুড় গাছ ঘিরে। এরপর থেকে ভয়ে এলাকার আর কেউ ওই গাছের ডালপালা কাটেনি। ফলে গাছ দুটি বর্তমানে অসংখ্য ডাল, শিকড় ছেড়ে ৫-৬ বিঘা জমি দখল করে করেছে। বট ও পাকুড় গাছের নিচে থাকা মন্দিরে পূজা করেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।
৬০ বছর বয়সী নীল কমল জানান, মুরুব্বিদের কাছ থেকে শুনে আসছেন, এই গাছ দুটি স্বামী-স্ত্রী এবং ৬০০ বছরের পুরনো। এক-একটি শেকড় এখন একটি গাছের থেকেও মোটা হয়ে গেছে। এই গাছের ডালপালা কেউ কাটে না। প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে এই গাছ দেখতে। প্রতি বৈশাখ মাসে এখানে মেলা হয়। বিভিন্ন উৎসবে এখানে মানুষের সমাগম বেশি হয় এবং বিভিন্ন দোকানপাট বসে।
সরেজমিন দেখা যায়, বিশাল এলাকা জুড়ে গাছটির অবস্থান। গাছ দেখতে অনেকে ভিড় জমিয়েছেন। দর্শনার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক শুনেছি গাছ দুটির কথা। ফেসবুকে কয়েকবার চোখে পড়েছে। তখন থেকে গাছ দুটি দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। তাই পরিবারসহ দেখতে এসেছি।’
উপজেলার আমড়াইল গ্রামের ওয়াহিদ ইসলাম বলেন, ‘মুরব্বিদের কাছ থেকে শুনেছি বট-পাকুড় গাছ দুটি অনেক পুরনো। পাশে মন্দিরটিও পুরনো। আর এখানে আসলে মন ভালো হয়ে যায়।’
ধামরাই উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. মোতালেব হোসেন বলেন, ওইখানে প্রায় দুই একর জায়গা আছে। পাশে হিন্দুদের মন্দির আছে। বট-পাকুড় গাছ দেখতে অনেকে আসে। তবে রাস্তার অভাবে যেতে কষ্ট হয়। তাছাড়া পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই। যদি রাস্তাঘাট করা হয় ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়, আর চারিদিকে সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করা হয়; তাহলে ধামরাই উপজেলার মধ্যে একটা পর্যটক কেন্দ্র হতে পারে।
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, গাছ দুটি ধামরাইয়ের ঐতিহ্য। এই গাছ ঘিরে এখানে ছোট পর্যটন তৈরি হয়েছে। আগে এখানে যাওয়ার রাস্তা কাঁচা ছিল। বৃষ্টির দিনে দর্শনার্থীদের কষ্ট হতো। এখন ইট দিয়ে রাস্তা উন্নত করা হয়েছে।