গোপালগঞ্জে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ, ও নার্সিং কলেজসহ ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১১ বছর পর বহুল কাঙ্খিত এ মেডিক্যাল কলেজের উদ্বোধন করা হলো। উদ্বোধনের ফলে জেলার স্বাস্থ্য সেবায় আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন গোপালগঞ্জবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালে গোপালগঞ্জ শহরের নবীনবাগ এলাকায় ৩৬ একর জমির উপর ৬৬৮ কোটি ৮২ লাখ ৭৯ হাজার টাকায় স্থাপত্যশৈলী দিয়ে নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন ৫০০-শয্যাবিশিষ্ট শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, ও নার্সিং কলেজ। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১১ বছর পর আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় গণবভন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গোপালগঞ্জে ২৫০-শয্যাবিশিস্ট জেনারেল হাসপাতাল থাকলেও কাঙ্খিত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হতেন জেলাবাসী। সেই সঙ্গে রয়েছে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও চিকিৎসক সংকট। সঠিক চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মুমূর্ষ রোগীদের ঢাকা-খুলনা-ফরিদপুর-রবিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে শেখ সারেয়া খাতুন মেডিক্যাল কলেজের উদ্বোধন হওয়ায় সহজেই এ হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য সেবা নিতে পারেন রোগীরা। এ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্য সেবা নেওয়ার পাশাপশি কমে আসবে রোগী মত্যুর হার। এমনিক মেডিক্যাল কলেজ ও নার্সিং কলেজ থেকে বের হয়ে আসবে মেধাবী চিকিৎসক ও নার্স। এতে জেলার স্বাস্থ্য সেবায় আমূল পরিবর্তন আসবে।
সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে মেডিসিন, পিড্রিয়াটিক, দন্ত, ইএনটি, শিশুসহ বিভিন্ন বিভাগ। রয়েছে ১০ তলা হাসপাতাল ভবন, ৬ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, দুটি হোস্টেল ভবনসহ ৫২টি ভবন। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এ মেডিক্যাল কলেজে স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক মানের ১৬টি অপারেশন থিয়েটার, ১৪টি আইসিউ, ৭২টি কেবিনসহ উন্নমানের স্বাস্থ্য সেবার সব যন্ত্রপাতি।
এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা প্রকল্পের মধ্যে আরও রয়েছে, জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়, কোটালীপাড়ার চৈতারবাড়ী কমিউনিটি ক্লিনিক, জেলা সমাজসেবা কমপ্লেক্স, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্স, গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ, কোটালীপাড়ার রামশীল কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন, কাজী মন্টু কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন, নেছারউদ্দিন তালুকদার স্কুল অ্যান্ড কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন, রামশীল কলেজের পাঁচ তলা ছাত্র হোস্টেল, রাধাগঞ্জ দাখিল মাদরাসার চার তলা একাডেমিক ভবন, কুশলা নেছারিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার চার তলা একাডেমিক ভবন, টুঙ্গিপাড়া সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন, খান সাহেব শেখ মোশাররফ হোসেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন, বালাডাঙ্গা এস এম মুসা উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলা একাডেমিক ভবন, গিমাডাঙ্গা নেছারিয়া ফাজিল মাদরাসার চার তলা একাডেমিক ভবন, মুকসুদপুরে ফারুক খান উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলা একাডেমিক ভবন, সূর্যকান্ত জানকী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলা একাডেমিক ভবন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পল্লীমঙ্গল ইউনাইটেড একাডেমির চার তলা একাডেমিক ভবন, হাজি খোরশেদ সপ্তপল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলা একাডেমিক ভবন, শহিদ গোলদার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের চার তলা একাডেমিক ভবন, সালেহা কামিল মাদরাসার চার তলা একাডেমিক ভবন, টুঙ্গিপাড়া বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি শিশু পরিবারে ২৫ শয্যা বিশিষ্ট শান্তি নিবাস ও শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র।
গোপালগঞ্জ শহরতলী নবীববাগ এলাকা রবিন শেখ বলেন, এ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উদ্বোধন করায় আমরা এখন উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাবো। রোগীদের নিয়ে ঢাকা-খুলনা ছুটতে হবে না। অনেক মুমূর্ষ রোগীদের ঢাকা নিয়ে যাবার পথেই মারা যেতেন। ফলে এখন আর কোনো রোগী মারা যাবেন না।
একই এলাকার সোহেল সিকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। এখান থেকে রোগীরা স্বাস্থ্য সেবা পাবেন। এছাড়া আরো ২৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। ফলে এ জেলার মানুষেরা উন্নতসেবা পাবে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান তাজিম বলেন, আমাদের অনেক ইচ্ছা ছিল দ্রুত এ মেডিক্যাল কলেজটি উদ্বোধন হবে। সেই ইচ্ছা পূরণ হলো। এতে আমরা শিক্ষার্থীরা খু্বই আনন্দিত। আমরা গর্বিত এমন একটি সুন্দর কলেজে পড়তে পারছি।
গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের প্রকল্প পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক বলেন, বর্হিবিশ্বে যে ধরনের হাসপাতাল তৈরী হয় সেই ধরনের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে এই হাসপাতালটি তৈরি করা হয়েছে। এই হাসপাতাল থেকে গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলার রোগীরা উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবেন। তবে, এখানে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। আশা করবো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ দেবেন।
গোপালগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম হাসানুজ্জামান বলেন, গোপালগঞ্জ শহরের নবীনবাগ এলাকায় ৩৬ একর জমির উপর ৬৬৮ কোটি ৮২ লাখ ৭৯ হাজার টাকায় স্থাপত্যশৈলী দিয়ে নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন ৫০০-শয্যাবিশিষ্ট শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ ও নার্সিং কলেজ। এই হাসপাতালে রয়েছে মেডিসিন, পিড্রিয়াটিক, দন্ত, ইএনটি, শিশুসজ বিভিন্ন বিভাগ। রয়েছে ১০ তলা হাসপাতাল ভবন, ৬ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, দুটি হোস্টেল ভবনসহ ৫২টি ভবন। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এ মেডিক্যাল কলেজে স্থাপন করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যার কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ২০১২ সালে থেকে এই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ইতোমধ্যে ৬৫জন করে ৭টি ব্যাজের মাধ্যমে ৫ শতাধিক ডাক্তার বের হয়েছেন। আগামী বছর থেকে প্রতি ব্যাচে আরো ৬৫ জন করে মোট ১২৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন। এছাড়া, নার্সিং কলেজে থেকে মেধাবী নার্স বের হয়ে আসবেন। গোপালগঞ্জ নয় সারা বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হবে এখান থেকে।
গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন বলেন, এ হাসপাতালে রয়েছে ৫০০ শয্যা। গোপালগঞ্জের ৯ লাখ মানুষসহ আশপাশের ৮টি জেলাসহ মোট ৩৯ লাখ মানুষ এখান থেকে স্বাস্থ্য সেবা পাবেন।