আজ ভয়াল ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এই দিনে সুপার সাইক্লোন সিডর লণ্ডভণ্ড করে দেয় বরগুনাসহ উপকূলের বেশ কয়েকটি জেলা।
ভয়াল দিনটির পরে কেটে গেছে ১৬টি বছর। এরপরও আইলা, মহাসেন, বুলবুল, আম্পানসহ বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে উপকূলে। এসব ঘূর্ণিঝড়ে প্রত্যেকবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরগুনার বেরিবাঁধ। কয়েকটি স্থানে সরকার স্থায়ীভাবে বেরিবাঁধ নির্মাণ করে দিলেও, এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে বরগুনা সদর, বেতাগী, আমতলী, তালতলীর বেশকিছু এলাকা।
পড়ুন: ১৬ বছর পরও আতঙ্ক কাটেনি উপকূলে
নদী ও সাগর পাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের বাসিন্দারা বলছেন, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করায় বিভিন্ন সময়ে ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে যায় বেরিবাঁধ। বিলীন হয়ে যায় বসতঘর। নষ্ট হয় ফসলি জমি। ভেসে যায় মাছের ঘের।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাসের সাথে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস নিয়ে উপকূলে আঘাত হানের সুপার সাইক্লোন সিডর।
সরকারি হিসেবে প্রাণ হারায় ১ হাজার ৪৩৫ জন মানুষ। জলোচ্ছ্বাসে পায়রা বিষখালী ও বলেশ্বর নদী পাড়ের ৩০০ কিলোমিটার বেরিবাঁধ ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ৬৮ হাজার ৩৭৯ টি ঘরবাড়ি। পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয় ৩৭ হাজার ৬৪ একর জমির ফসল। যদিও বেসরকারি হিসেবে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
ভয়াল এই দিনটির কথা স্মরণ করে বরগুনা সদরের প্রবীণ বাসিন্দা হোমায়রা বানু (৭৮) রাইজিংবিডিকে বলেন, শত বছর আগে তার বাবা-মা এখানে এসে বসবাস শুরু করে। তারপরে এখানেই জন্ম হয় তার। জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০টি ঘূর্ণিঝড় দেখেছেন তিনি। প্রত্যেকবার বন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্থায়ী বেরিবাঁধ না থাকায়।
তিনি বলেন, নিজের বসতঘরসহ অন্তত দেড় শতাধিক বসতঘর সেদিন সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছিল। শুধু এই এলাকায় প্রাণহানি হয়েছিল ২ শতাধিক মানুষের। এখনো ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে দিন কাটে এই বন্দরের বাসিন্দাদের।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সিডরের সময় বেরিবাঁধ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। এরপর থেকে আর কখনো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করেনি সরকার। বিষখালী নদী পাড়ের এই বাঁধ নির্মাণ না করলে মাঝারি ধরনের কোন ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলেও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটবে এখানে।
নলটোনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সফিকুজ্জামান মাহফুজ রাইজিংবিডিকে বলেন, স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড, সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ঘুরেছেন তিনি। প্রত্যেকেই শুধু আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবায়ন করেননি। এই এলাকার মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে।
আমতলীর আরপাঙ্গাসিয়া এলাকায় একই অবস্থা। এই এলাকার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় সিডরে। এরপর জরুরি মেরামত করে দিলেও আইলা মহাসেন বুলবুলসহ প্রত্যেকটি ঘূর্ণিঝড়ে এই বেরিবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় আরপাঙ্গাসিয়া এলাকা।
এই এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন জানান, পায়রা নদী পাড়ের এই আরপাঙ্গাসিয়া ইউনিয়ন। সিডরের সময় এখানকার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় পুরো ইউনিয়ন। প্রাণ হারায় শতাধিক মানুষ। বেড়িবাঁধ না থাকায় পায়রার তীব্র ভাঙনে ১৬ বছর ধরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের।
আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, আরপাঙ্গাসিয়া ইউনিয়ন রক্ষায় বেড়িবাঁধ জরুরি। সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছেন। আমাদের সরকার উদ্যোগ নিয়েছে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে আরপাঙ্গাসিয়া বেরিবাঁধ নির্মাণ করা হবে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব রাইজিংবিডিকে বলেন, বরগুনায় স্থায়ী বেড়িবাঁধের বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এখনো চারটি প্রকল্পের কাজ চলমান। নলী, আমতলী, তালতলী, বেতাগীসহ গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণ করা হবে।