‘আসি আসি বলে’ যে মহাযজ্ঞ দরজায় কড়া নেড়েছিল, আনন্দমাখা সময় উপহার দিয়ে সেই আয়োজন শেষ হবার পথে। আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ-২০২৩ পৌঁছে গেছে শেষ গন্তব্যে। যেখান থেকে শুরু হয়েছিল মহাআয়োজন, সেখানেই ভাঙছে মিলনমেলা।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে রোববার বসছে বিশ্বকাপের ফাইনাল। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। ২০০৩ বিশ্বকাপের পর আবার বিশ্বকাপ মঞ্চের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত।
গত ৫ অক্টোবর গত বিশ্বকাপের দুই সেমিফাইনালিস্ট নিউ জিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছিল ত্রয়োদশ আসর। ম্যাচটা হয়েছিল আহমেদাবাদে। ৪৬ দিনের ব্যাট-বলের যুদ্ধের পর বিশ্বকাপ ফিরে এসেছে ভারতের গুজরাট রাজ্যের বৃহত্তম শহর ও সাবেক রাজধানী আহমেদাবাদে।
ভারতে ক্রিকেট মানে ভিন্ন এক উৎসব। ভারত এই বিশ্ব আসরে দুই আসর বাদে ফাইনালে ওঠায় আহমেদাবাদও ভাসছে আনন্দে। সর্দার বল্লভভাই পাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। সকাল থেকে শুরু হয়ে রাত অব্দি দেশের নানান প্রান্ত থেকে বিমান এসে নামছে। লাগেজের বেল্টে যেখানে এক ফ্লাইটের শিডিউল থাকতো সেখানে এখন ঠাসাঠাসি করে দুই-তিন ফ্লাইট যুক্ত করা হয়েছে।
আর বিমানের টিকিটের ভাড়া না বললেই নয়, মুম্বাই থেকে আহমেদাবাদের ফ্লাইটের দূরত্ব ঘণ্টাখানেকের বেশি সময়। বিমান ভাড়া আগে যারা কাটেনি তাদের গুনতে হচ্ছে ৩০ হাজার রূপির মতো। আর হোটেল ভাড়া তো সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি! শনি ও রোববারে হোটেল ভাড়া কোনোটাই ১০ হাজার রূপির নিচে নেই। যে রুমের ভাড়া দুদিন আগে ২ হাজার রূপি, সেটাই হয়ে যাচ্ছে পাঁচ থেকে ছয় গুণ। ভারত ফাইনালে উঠায় বেশিরভাগ হোটেলই বুকিং ক্যান্সেল করে ভ্রমণকারীদের উটকো ঝামেলায় ফেলছে। এই শহরে এমনটা হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সময়ও। খবরে এসেছিল, তখন হাসপাতালের বেডও ভাড়া করেছিলেন সমর্থকরা। যদিও এই কথার সত্যতা মেলেনি কারো কাছেই।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শহর আহমেদাবাদ। বেশ উন্নত হয়েছে আগের চেয়ে। ছিমছাম নগরীর সুউচ্চ দালান, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট ও আলোর শহর মাথা উচুঁ করে জানান দেয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বেশ ভালো অবস্থানে আছে আহমেদাবাদ। দিওয়ালির উৎসব চলবে রোববার পর্যন্ত। তাই শহর কিছুটা ফাঁকা। সেদিনই বিশ্বকাপের ফাইনাল থাকায় আনন্দ তাই দ্বিগুণে পরিণত হচ্ছে।
ভারত প্রথম পর্বের নয় ম্যাচ খেলেছে নয়টি শহরে। আহমেদাবাদে তারা পাকিস্তানকে অতিথিয়তা দিয়েছিল। প্রবল উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচে পাকিস্তান ঠিকঠাক লড়াই করতে পারেনি। ম্যাচটা ভারত জিতে যায় ১১৭ বল আগে, ৭ উইকেটে। অস্ট্রেলিয়াও এই মাঠে খেলেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ৩৩ রানে জয় পাওয়া ম্যাচে দাপট দেখিয়েছিল তারাও।
এবার কী হবে?
দুই দলের বিশ্বকাপ সফর শুরু হয়েছিল নিজেদের বিপক্ষে লড়াইয়ে। চেন্নাইয়ে হওয়া সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে তেমন পাত্তা দেয়নি ভারত। অবশ্য ভারত বিশ্বকাপের ফাইনাল পর্যন্ত একচেটিয়ে দাপট দেখিয়েছে। অন্যদিকে প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর অস্ট্রেলিয়া ঘুরে দাঁড়িয়েছে দারুণভাবে। তাই তাদেরকেও কোনোভাবে আড়াল করা যাবে না।
২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে। রিকি মার্টিনের অতিমানবীয় সেই ১৪০ রানের ইনিংসে সেবার অস্ট্রেলিয়া শিরোপা জিতে নেয়। টেন্ডুলকার সেবার ৬৭৩ রান করেও শিরোপায় চুমু খেতে পারেনি। এর আট বছর পর অবশ্য তার অপেক্ষা ঘুচে যায়।
এবার টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে বিরাট কোহলি অতিমানবীয় কৃত্বি গড়েছেন। বিশ্বকাপের এক আসরে টেন্ডুলকারের রেকর্ড ছাপিয়ে ৭১১ রান ফাইনালের আগেই তুলে নিয়েছেন। ফাইনালে তার আরেকটি মাস্টারক্লাস ভারতকে দিতে পারে তৃতীয় শিরোপা। দেড়শ কোটির ভারত সেই অপেক্ষাতেই প্রহর গুনছে।
মিলনমেলা ভাঙার অপেক্ষা। শেষটায় হাসবে কে? ১২ বছরের অপেক্ষা ঘুচাবে ভারত নাকি ৮ বছর পর আবার শুরু হবে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ব শাসন। পাঁচবার ওই শিরোপায় চুমু খেয়ে এমনিতেও তো তারা সবার চেয়ে এগিয়ে। এবার কি ষষ্ঠ শিরোপা ঘরে তুলবেন কামিন্স-ওয়ার্নাররা? উত্তর জমে আছে ১৯ নভেম্বরের হাতে।