বিনোদন

সাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব : সমানভাবে দুজনেই দায়ী

ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের রহস্যময় বাক্সের ঢাকনা আগেই খোলা হয়েছে। কিন্তু তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের দ্বন্দ্বের বিষয়টি এভাবে প্রকাশ্যে আনা উচিত হয়নি। পুরো বিষয়টিকে অপরিপক্ব মনে হয়েছে। এ আচরণ দুজনের পক্ষ থেকেই হয়েছে বলে আমি মনে করি। 

আমরা যদি এই দুই তারকা ক্রিকেটারকে অনুভব করি, তবে তামিম ইকবালের জায়গা থেকে ভাবলে খারাপ লাগার একটি ব্যাপার রয়েছে। কিন্তু পুরো বিষয়টি এভাবে পাবলিকলি না জানিয়ে, নিজেরা মিমাংসা করে ফেলা উচিত ছিল। তা তো হয়নি বরং দুজনেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। এটা আমার ব্যক্তিগতভাবে ভালো লাগেনি। এ ঘটনা বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বিশ্বকাপে এবং দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে। এনার্জি বড় একটি ব্যাপার। এ ঘটনার পর টিমের মধ্যে নেগেটিভ এনার্জি কাজ করেছে; ফলে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে যতটুকু ভালো করতে পারতো সেটাও পারেনি। কারণ এটাই বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় সেরা টিম।

সাকিব-তামিমের দ্বন্দ্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কার দোষ বেশি কার কম- সে প্রশ্নও রয়েছে। কিন্তু আমরা বাইরে থেকে সে বিষয়ে পরিষ্কার জানি না। তবে আমি বলব, এর জন্য সমানভাবে তারা দুজনেই দায়ী। কারণ সাকিব-তামিমের দ্বন্দ্বের বিষয় নিয়ে আজকে যে কথা বলছি, এই আলোচনা করাটাই উচিত না। কিন্তু কেন করছি? তার কারণ তারা নিজেরাই। আজকে তাদের নিয়ে আমাদের কথা বলার কথা না, আমাদের অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলার কথা ছিল; তাদের ভালো কিছু নিয়ে আমাদের কথা বলার কথা ছিল, তাদের কিসে আরো ভালো হয় তা নিয়ে আলোচনা করার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কতটা মুখ থুবড়ে পড়েছে, তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। বিশ্বকাপের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে এ রকম একটি ঘটনা দলের মধ্যে অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আর এমন নেগেটিভ এনার্জি নিয়ে বিশ্বকাপের ময়দানে নেমে ভালো করা যায় না।

এবারের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, নেদারল্যান্ডসকে হারানোর পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশ দলের। কারণ এরাই ছিল আমাদের সহজ প্রতিপক্ষ। আফগানিস্তানকে হারাতে পারলেও নেদারল্যান্ডসকে আমরা হারাতে পারিনি। বাকি বড় দলগুলোর মধ্যে হয়তো আরো দুয়েকটাকে হারানোর সম্ভাবনা ছিল। যেমন পাকিস্তানকে হারানোর সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। কিন্তু হয়নি। এসব লক্ষ্যে বাংলাদেশ পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। যেমন নেগেটিভ এনার্জির কথা আগেই বলেছি। ব্যক্তিগত জায়গা থেকে সবাই তার সেরাটা দিতে পারেনি। বিশ্বকাপের প্রস্তুতিও আমাদের ভালো ছিল না। 

প্রস্তুতির সঙ্গে বেশ কিছু বিষয় জড়িত। অনেক দিন ধরেই আমরা ঘরোয়া লিগের কথা বলে আসছি। ঘরোয়া লিগগুলো আরো সৎভাবে পরিচালনা করানো উচিত। এটা হলে একজন খেলোয়াড় পরিপূর্ণভাবে শিখে জাতীয় দলে খেলবে। কিন্তু আমাদের এখানে জাতীয় দলে এসে কয়েক বছর অনেক কিছু শিখছে। এই শেখাটা যদি ঘরোয়া লিগ থেকেই শিখে আসতে পারে সেটা আমার কাছে ইতিবাচক দিক মনে হয়। 

মোদ্দাকথা বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবকাঠামোগত দিকের উন্নয়ন করা উচিত। শুধু যে ১১ জন খেলোয়াড়কে নিয়ে কাটাছেঁড়া করা হচ্ছে, তার বাইরে গিয়ে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। ঘরোয়া ক্রিকেটটাকে আরো ঢেলে সাজানো উচিত। ভারতের দিকে যদি তাকান দেখবেন, সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ— ওরা টানা খেলার ‍ওপরে থাকে। ওদের অনেক লিগ বা আরো অনেক খেলা থাকে; এসব কিন্তু আমাদের নেই। জেলা বা বিভাগীয়ভাবে আমাদের ক্রিকেটের আরো উন্নয়ন করা প্রয়োজন। 

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এমন ভঙ্গুর অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব কম নয়। এ ক্ষেত্রে বোর্ডকে কিছু জায়গায় আরো কঠোর হতে হবে। কিছু জায়গায় আরো পেশাদার হতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন তাদের করতেই হবে। এই যে নারী ক্রিকেটাররা সফল হচ্ছে, আমরা তাদের সফলতার নিউজ করছি অথচ মেয়েরা বেতনই পায়নি। এগুলো কিন্তু এক প্রকার নেগেটিভিটি। এনার্জি একটা বড় ব্যাপার। নেগেটিভ এনার্জি বাতাসে বিরাজ করলে তা মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলবে। যে ১১ জন বিজনেস এনে দিচ্ছে, শুধু তাদের প্রতি ফোকাস না দিয়ে ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করা উচিত।

বিশ্বকাপ আসরে যা হয়েছে, তা তো হয়েছেই। অতীতের দিকে তাকিয়ে না থেকে বর্তমানে নজর দেওয়া জরুরি। নেতিবাচকতা এক পাশে সরিয়ে দিয়ে, যেসব ইতিবাচক বিষয় আছে তা নিয়ে আরো বেশি চেষ্টা করা প্রয়োজন; চেষ্টার কোনো বিকল্প নেই। কোথায় ভুল আছে, সেসব খুঁজে বের করে ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার জন্য চূড়ান্ত মনোযোগের মাধ্যমে অনুশীলন করা জরুরি। এটা বোর্ড থেকে শুরু করে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে করতে হবে। 

আগে আমরা বলতাম, যারা টেস্ট ম্যাচ ভালো খেলে তারা ওয়ানডে ভালো খেলে। কিন্তু এখন এই চিত্র নেই। বরং যারা টি টুয়েন্টি ভালো খেলে তারাই ওয়ানডে ভালো খেলে। কারণ এখন ওয়ানডে ম্যাচ টি টুয়েন্টির মতো করেই খেলছে। বিশ্ব ক্রিকেট যেখানে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমরা পিছিয়ে আছি। আমাদের এই শূন্যস্থানটা একটু বড় হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং ব্যক্তিগতভাবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেডিকেশন দিতে হবে। আর এই কাজটি এখনই শুরু করতে হবে। ক্রিকেট আমাদের অনেক বড় একটি জায়গা, আমাদের ভালোবাসার জায়গা, এটি আমাদের অনেক কিছু বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করে। আমরা অবশ্যই চাই না, সেই জায়গাটা নষ্ট হোক। গৌরবের মাধ্যমে ক্রিকেট যে জায়গা গড়েছে, সেই জায়গাটা যেন অক্ষুণ্ন থাকে এবং আরো ভালো কিছু করে এটাই আমার প্রত্যাশা।

অনুলিখন : আমিনুল ইসলাম শান্ত